২৯ হাজার ফ্রিল্যান্সার বানাতে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প

উচ্চ মাধ্যমিক পাস ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী কর্ম প্রত্যাশী নারী ও পুরুষ এই প্রকল্পের প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2024, 03:29 PM
Updated : 12 Feb 2024, 03:29 PM

বেকার যুব সমাজকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্যে ৩ বছরে ২৮ হাজার ৮০০ যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এজন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সরকার।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে এটি শেষ করতে চায়। এর নাম রাখা হয়েছে ‘দেশের ৪৮ জেলায় শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবকদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্প’।

মঙ্গলবার নতুন সরকারের প্রথম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রস্তাব অনুযায়ী ব্যয়ের শতভাগ অর্থই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে।

রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকটি হতে পারে।

একজন কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের আওতায় ৪৮ জেলায় ৩ মাস মেয়াদি বা ৬০০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করা হবে।

প্রত্যেকটি জেলায় ৬০০ জন করে শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এক বছরে ৫০ জনের চারটি ব্যাচ পাবে এই প্রশিক্ষণ। তাদেরকে দিনে ২০০ টাকা নগদ ভাতা এবং ৩০০ টাকার খাবার দেওয়া হবে।

প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহীদের কম্পিউটার সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান থাকতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পাস ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী কর্ম প্রত্যাশী নারী ও পুরুষ এই প্রকল্পের প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবে।

তিনি বলেন, “দেশে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা আয়কে লক্ষ্য রেখে আউটসোর্সিং শেখানো হবে।”

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান মো. আব্দুর রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একই রকম প্রকল্পে মাধ্যমে ১৬ জেলায় ৬ হাজার ৪০০ জন জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২২ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি এবছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। এখন বাকি ৪৮টি জেলাকে যুক্ত করা হয়েছে।”

ভর্তি কীভাবে

প্রতি ব্যাচে ভর্তির জন্য অনলাইনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। আগ্রহী প্রশিক্ষণার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। বাছাই পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে নির্বাচন করা হবে।

প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণার্থী বাছাইয়ের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি প্রশ্ন ব্যাংক থাকবে। প্রতিটি ব্যাচের জন্য প্রশ্ন নবায়ন করা হবে। এই নবায়নের জন্য যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালককে সভাপতি ও প্রকল্প পরিচালককে সদস্যসচিব করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে।

জেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালককে সভাপতি এবং সহকারী পরিচালককে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের কমিটি প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। 

প্রশিক্ষণে কী কী থাকবে

পরিকল্পনা কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রশিক্ষণার্থীদের দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে তুলতে হাতে কলমে ৮টি বিষয় শেখানো হবে।

তিনি বলেন, “ফ্রিল্যান্সিং সৃষ্টির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অনলাইনে তাদের কাজ করতে করা। এজন্য প্রথমেই ইংরেজিতে যোগাযোগ করার মতো দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাই এই প্রশিক্ষণে ফ্রিল্যান্সিংয়ের উপযুক্ত একটি বেসিক ইংরেজি শেখানোর কোর্স থাকবে।

“এছাড়াও কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন, কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং করতে হয়, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, স্মার্টফোনের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণার্থীদের সফট স্কিল ট্রেইনিং দেওয়া হবে।”

এ জন্য প্রতি জেলায় ২৫ টি কম্পিউটার এবং হাইস্পিড ইন্টারনেট সম্বলিত সুসজ্জিত ২ টি ল্যাব থাকবে। প্রতি ল্যাবে ২৫ জন করে প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পাবে।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অধীনে ২০২২ সালের জুন থেকে ফ্রিল্যান্সার তৈরির জন্য দেশের ১৬ জেলায় একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। ৪৭ কোটি ৫০ রাখ টাকায় এসব প্রকল্পে মোট ৬ হাজার ৪০০ জনকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আগামী জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রশিক্ষণ নেওয়া ৮১৩ জন বা ৬৪ শতাংশ ইতোমধ্যেই উপার্জনে যুক্ত হয়েছেন। ২১ শতাংশ বিভিন্ন চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। 

২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্তরা ৪ লাখ ৭ হাজার ডলার আয় করেছেন।