‘নিরপেক্ষতা’ দেখে সব দলই নির্বাচনে আসবে, আশা ইসি আলমগীরের

আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে বলেও মনে করছেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2023, 04:19 PM
Updated : 1 March 2023, 04:19 PM

দায়িত্ব গ্রহণের পর এক বছরে কোনো নির্বাচনে কারও প্রতি পক্ষপাত না দেখানোর দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

‘নিরপেক্ষভাবে’ তাদের নির্বাচন পরিচালনা দেখে সব দলই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে বলে মনে করছেন তিনি।

এই এক বছরে বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) রাজনৈতিক দলগুলোর অনাস্থার মুখোমুখি হয়নি বলেও দাবি করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন কমিশনার আলমগীর।

২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শপথ নেয় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন ইসি। পরদিন দায়িত্ব নেন তারা। এরপর এক বছরে বেশ কিছু সংসদীয় আসনে উপ নির্বাচন, কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের কয়েকশ এলাকায় ভোটের আয়োজন করে।

সরকারদলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা, ভোট স্থগিত এমনকি ভোট চলাকালে গাইবান্ধা উপ নির্বাচন বন্ধ করে দিয়ে আলোচনাতেও আসে এ কমিশন।

আলমগীর বলেন, “আমরা আশা করব, সব রাজনৈতিক দলের আমাদেরকে আস্থায় নেওয়া উচিত। কারণ, দায়িত্ব নেওয়ার পর যতগুলো নির্বাচন করেছি কেউ বলতে পারবে না, আমরা কোনো পক্ষপাতিত্ব করেছি।

“আশা করি, সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। আমাদের পক্ষ থেকে যত রকম ব্যবস্থা নেওয়া দরকার নির্বাচন কমিশন থেকে আমরা নেব। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে বলে আমরা মনে করি।”

যারা ভোটে না আসার ঘোষণা দিয়েছে, তাদের অবস্থান পাল্টাতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা থাকবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখনও আছে, শেষ পর্যন্ত থাকবে। বুঝতে হবে আমাদের ভূমিকা কী। আমরা আশাও করি, সব দল নির্বাচনে আসবে। আমাদের কাজ হল নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করা। আমরা যদি নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করি, তাহলে সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসবে।

“যারা আসছে না, তারা বলছে, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এটা তারা মনে করেন না। এই মনে করার পেছনে অন্তত আমাদের কোনো ভূমিকা নেই।

“স্বাধীন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে, আমাদের সংবিধান দায়িত্ব ও ক্ষমতা দিয়েছে তার পুরোটা প্রয়োগ করে, সুষ্ঠু নির্বাচন করব। সেই প্রতিশ্রুতি আমরা ভোটার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে দিতে চাই।”

সহিংসতা ছিল না, ভোটের হারও বাড়ছে

বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ছয়টি সংসদীয় আসনে উপ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও সামনে তা বাড়বে বলেও আশা করেন এই নির্বাচন কমিশনার। সেই সঙ্গে নিজেদের মেয়াদের নির্বাচনগুলোয় সহিংসতা না থাকায় স্বস্তির কথাও জানান তিনি।

কমিশনার আলমগীর বলেন, “যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, সেগুলোর নানা রকম পরিস্থিতি ছিল। একটি বড় রাজনৈতিক দল কোনো নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করছে না। স্বাভাবিকভাবেই তাদের যারা সাপোর্টার তারা তো ভোট দিতে আসেন না। এজন্য ভোটের কাস্টিং কমে যাচ্ছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে মহামারীর মধ্যে কিছু নির্বাচন করতে হয়েছে। স্বাভাবিক কারণে তখন অনেকে ভয়ে ভোট দিতে আসেননি।”

উপ নির্বাচনে সরকারের পরিবর্তনের বিষয় না থাকলে ভোটদানে আগ্রহ কম থাকে বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, “সামনের যে জাতীয় নির্বাচন হবে সে নির্বাচনে কিন্তু সরকার পরিবর্তন হতে পারে। সেই সুযোগ যেহেতু এখানে রয়েছে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যে দলকে ভোট দেবে, সেই দল সরকার গঠন করবে। সে ক্ষেত্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে।”

সব দলের আস্থা থাকার দাবি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি বর্তমান কমিশনের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে আন্দোলনে আছে, তারপরও কমিশনার আলমগীর মনে করেন, সব দলই তাদের আস্থায় রেখেছে।

তিনি বলেন, “আমরা মনে করি যে, আমরা কারও অনাস্থার মুখোমুখি হইনি। রাজনৈতিক কারণে কোনো রাজনৈতিক দল হয়ত অনাস্থার কথা বলতে পারে। কিন্তু সার্বিক দিক থেকে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে আমরা অনাস্থার মুখোমুখি হইনি, ভোটারদের পক্ষ থেকেও হইনি এবং আমরা দেশবাসীর আস্থায় আছি।”

এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ থেকে আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা রয়েছে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। দাবি পূরণ না হলে নির্বাচন হতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিচ্ছে দলটি। নির্বাচন কমিশনের সংলাপেও আসেনি তারা।