পদ্মা সেতু অংশের প্রতি কিলোমিটারকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব ধরা হয়েছে। পন্টেজ চার্জসহ ভাড়া নির্ধারণে এর আগে চালু হওয়া দেশের চারটি রেলসেতুতে বর্তমান ভাড়া বিবেচনায় নিয়েছে রেলওয়ের কমিটি।
Published : 10 Oct 2023, 09:51 AM
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত রেলপথে দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার। তবে এ পথ যেতে ৩৫৩ কিলোমিটারের ভাড়া গুণতে হবে যাত্রীদের; শোভন চেয়ারেই দিতে হবে ৩৫০ টাকা।
রেলের ভাড়া নির্ধারণের ‘স্ট্যান্ডার্ড রীতি’ মেনে এমন প্রস্তাব করেছে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে চলাচলকারী ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণে গঠিত রেলওয়ের কমিটি। তাদের প্রস্তাবে আন্তঃনগর ট্রেনের শোভন চেয়ারের ভাড়া ধরা হয়েছে ৩৫০ টাকা।
এ ভাড়া ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচলকারী বাসের চেয়ে বেশি।
মঙ্গলবার ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ পথে পুরোদমে ট্রেন চলাচল শুরু হবে আগামী ১ নভেম্বর।
প্রস্তাবিত ভাড়া বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে চলাচলকারী যেসব ট্রেন পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা পর্যন্ত যাবে, সেগুলোর দুটি রুটের একটিতে ভাড়া বাড়বে। আরেকটি রুট ধরে গেলে কিছুটা কমবে রেলের ভাড়া।
কমিটি মালামাল পরিবহনের ভাড়াও নির্ধারণ করেছে।
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনের যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে ভাড়া নির্ধারণে গত ২৪ সেপ্টেম্বর একটি কমিটি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
ভাড়া নির্ধারণ কমিটির প্রধান রেলওয়ের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (পূর্ব)। সাত সদস্যের এ কমিটির বাকিরাও রেলওয়ের কর্মকর্তা। গত ২ অক্টোবর কমিটির সদস্যরা রেলভবনে সভা করেন। সেখানে ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণের এ সুপারিশ আসে। ৪ অক্টোবর রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে কমিটি।
কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে বিভিন্ন দূরত্বের সঙ্গে পদ্মা সেতু এবং গেন্ডারিয়া থেকে নিমতলী পর্যন্ত উড়ালপথের জন্য বাড়তি দূরত্ব যোগ করেছে রেলওয়ের কমিটি।
পদ্মা সেতু অংশের প্রতি কিলোমিটারকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব ধরা হয়েছে। গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালপথের প্রতি কিলোমিটারকে ধরা হয়েছে ৫ কিলোমিটার।
রেলওয়ে একে ‘পন্টেজ চার্জের’ জন্য বাড়তি দূরত্ব বলছে। পন্টেজ চার্জ হচ্ছে সেতুর ব্যবহারজনিত ক্ষতি এবং মেরামতের জন্য আদায় করা অর্থ।
পন্টেজ চার্জসহ ভাড়া নির্ধারণে এর আগে চালু হওয়া দেশের চারটি রেলসেতুতে বর্তমান ভাড়া বিবেচনায় নিয়েছে রেলওয়ের কমিটি।
৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু সেতু ৬১ কিলোমিটার, ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার হার্ডিঞ্জ ৪১ কিলোমিটার এবং ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ভৈরব সেতু ২৩ কিলোমিটার এবং ০.৪ কিলোমিটার দূরত্বের ব্রহ্মপুত্র সেতুর দৈর্ঘ্য ১৬ কিলোমিটার।
চারটি সেতুর দৈর্ঘ্যের গড় করে পন্টেজ চার্জসহ পদ্মা সেতুর প্রতি কিলোমিটার অংশকে ২৫ কিলোমিটার ধরা হয়েছে। সে হিসাবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতুর দূরত্ব আসে ১৫৪ কিলোমিটার। এ জন্যই ঢাকা থেকে ভাঙ্গার প্রকৃত দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার হলেও রেলওয়ে ৩৫৩ কিলোমিটার দূরত্বের ভাড়া আদায়ের প্রস্তাব করেছে।
এ হিসাবে কমিটি প্রস্তাবে এ অংশে আন্তঃনগর ট্রেনের শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৫০ টাকা। এসি চেয়ার সিটের ভাড়া ৬৬৭ টাকা, এসি সিট ৮০৫ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া আসবে ১২০১ টাকা।
ট্রেনের প্রস্তাবিত এ ভাড়া ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচলকারী বাসের চেয়ে বেশি। রেলওয়ে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত নন-এসি বাসের ভাড়া ২৫০ টাকা এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের ভাড়া ৫০০ টাকা দেখিয়েছে।
তবে এই দূরত্বে মেইল ট্রেনে ভ্রমণ করলে একজন যাত্রীর ভাড়া দিতে হবে ১২০ টাকা এবং কমিউটার ট্রেনে ১৪৫ টাকা।
রেলওয়ের প্রস্তাবিত ভাড়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, খুলনা রুটের ট্রেনের ভাড়া বর্তমানের চেয়ে কিছুটা কমবে।
ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে খুলনার দূরত্ব ৪৪৯ কিলোমিটার। রেলওয়ের আদায়যোগ্য ভাড়ার দূরত্ব ৫৩৭ কিলোমিটারের। ঢাকা থেকে খুলনা রুটে শোভন চেয়ারের বর্তমান ভাড়া ৫০৫ টাকা। এসি চেয়ারের ৯৬৬ টাকা, এসি সিট ১১৫৬ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া ১৭৩১ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে নড়াইল-পদ্মবিলা-সিঙ্গিয়া হয়ে খুলনা গেলে প্রকৃত দূরত্ব কমে ২০০ দশমিক ২৪ কিলোমিটার হয়েছে। তবে সে হিসাবে রেলওয়ে আদায়যোগ্য ভাড়ার দূরত্ব খুব একটা কমেনি; আদায়যোগ্য ভাড়ার দূরত্ব ৫১০ কিলোমিটার।
এ অংশে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৪৮০ টাকা, এসি চেয়ার ৯২০ টাকা, এসি সিট ১১০৪ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া ১৬৫৭ টাকা।
আর পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা-পাচুরিয়া-পোড়াদহ-যশোর হয়ে যদি ট্রেন খুলনা যায় সেক্ষেত্রে বর্তমান ভাড়ার চেয়ে বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে যাত্রীদের। এ রুটে প্রকৃত দূরত্ব ৩৯৩ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার। আদায়যোগ্য ভাড়ার দূরত্ব বেড়ে হয়ে যাবে ৬৭০ কিলোমিটার।
সেক্ষেত্রে এই রুটে শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ৬১৫ টাকা, এসি চেয়ার ১১৭৩ টাকা, এসি সিট ১৪০৯ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ২১১১ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।
২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল।
ওই বছরের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেললাইন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৪ সালের ৩০ জুন।