সুলতান বলকিয়াহর পছন্দ ‘ব্ল্যাক বেঙ্গলের মাংস’

ব্রুনেই সুলতানের সফরে দুদেশের মধ্যে তিনটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2022, 04:53 PM
Updated : 11 Oct 2022, 04:53 PM

বাংলাদেশ থেকে ব্রুনেই দারুসসালামে হালাল মাংস রপ্তানির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস পছন্দ করেন দেশটির সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ।

আগামী সপ্তাহে সুলতানের বাংলাদেশ সফর নিয়ে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন মন্ত্রী।

জুনে রুয়ান্ডার কিগালিতে কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের সম্মেলনের ফাঁকে সুলতানের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে মোমেন বলেন, “ব্রুনাইয়ের কিছু আগ্রহ আছে কমপিটেন্ট হালাল গোশতের ব্যাপারে। হালাল গোশতের ব্যাপারে কারেক্ট সার্টিফিকেশন প্রসিজিউরস আছে, তারা আগ্রহী। যেহেতু আমাদের দেশে যথেষ্ট মহিষ রয়েছে, খাসি, গরু… বিশেষ করে ব্রুনেইয়ের সুলতান আমাদের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল খুব পছন্দ করেন।

“উনারা বলেছিলেন যে, বাংলাদেশে হালাল গোশতের কোনো একটা ব্যবস্থা করতে পারেন কি-না। এটাতেও আমরা আলোচনা করেছি। এটা আমাদের প্রাইভেট সেক্টরে বেশ আলোচনা চলছে।”

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে শনিবার ঢাকায় আসছেন ব্রুনেইয়ের সুলতান বলকিয়াহ। তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ব্রুনেইয়ের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বেও রয়েছেন।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাসাদের বাসিন্দা, ৭ হাজার বিলাসবহুল গাড়ি ও স্বর্ণখচিত উড়োজাহাজের মালিক বলকিয়াহ বিশ্বজুড়ে আলোচিত তার বিলাসী জীবনের জন্য।

বাবা ওমর আলী সাইফুদ্দিন সাদুল খাইরি ওয়াদ্দিন স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পর বলকিয়াকে সুলতান ঘোষণা করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১ অগাস্ট তিনি দেশটির ২৯তম সুলতান হিসাবে দায়িত্ব নেন।

ক্ষমতা গ্রহণের এক দশক পর ১৯৭৮ সালে উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হতে ব্রিটেনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন সুলতান বলকিয়াহ। তার ধারাবাহিকতায় ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি স্বাধীনতা পায় ব্রুনেই। 

তেল সমৃদ্ধ দেশ ব্রুনেইয়ের এই শাসক এক সময় ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তালিকাতেও ছিলেন। ২০১১ সালে ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সুলতান বলকিয়াহ আনুমানিক ২ হাজার কোটি ডলারের মালিক।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ঢাকায় সুলতানের সফরের বিষয়টি ২০২০ সালের এপ্রিলে চূড়ান্ত করা হলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়।

সুলতান বলকিয়াহকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ২১ বার তপোধ্বনিসহ গার্ড অব অনারে তাকে সম্মান জানানো হবে।

সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন সুলতান, ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরও পরিদর্শন করবেন।

সফরকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন ব্রুনেইয়ের সুলতান। পরে তার সম্মানে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন।

সফরের দ্বিতীয় দিন রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন সুলতান বলকিয়াহ।

ব্রুনেই ১৯৮৪ সালে ব্রিটেন উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভের পরপরই বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এরপর ১৯৯৭ সালে ব্রুনেইয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন পুনঃস্থাপন করা হয়।

এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বিশেষত বিগত এক দশকে ব্রুনেইয়ের সাথে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়ন সহ নানাবিধ ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারিত হচ্ছে।”

ব্রুনেইয়ের সুলতানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে রাজপরিবারের সদস্যরা, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা আসবেন।

সুলতানের আমন্ত্রণে ২০১৯ সালের এপ্রিলে ব্রুনেই সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারের আলোচনার পাশাপাশি ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল।

আকাশপথে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ-ব্রুনেই

সুলতান বলকিয়াহর সফরে দুদেশের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু ও বাংলাদেশি জনশক্তি নিয়োগসহ তিনটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

তিনি বলেন, সুলতানের এই রাষ্ট্রীয় সফরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি তিনটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

“দ্বি-পক্ষীয় বিমান চলাচল চুক্তি, বাংলাদেশি জনশক্তি নিয়োগ সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক এবং দুই দেশ কর্তৃক নাবিকদের সার্টিফিকেটেরে স্বীকৃতি সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক।”

ব্রুনেই থেকে জ্বালানি আমদানির বিষয়ে সমঝোতা হওয়ার কথা থাকলেও তা এই সফরে হচ্ছে না বলেই ইঙ্গিত মিলেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়। তবে এই বিষয়ে আলোচনায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ব্রুনেইয়ের যথেষ্ট তেল আছে, গ্যাস আছে, এলএনজি আছে। আমরা তাদের সাথে আমদানির ব্যাপারে আলাপ করছি। ভালো স্টেজে আমাদের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আশা করি, আমরা এটা করব, সিস্টেমেটিক ওয়েতে।”

ব্রুনেইয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “ব্রুনেই সব খাদ্যশস্য বিদেশ থেকে আমদানি করে। খাদ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে তারা আমাদের সাথে কাজ করতে চায়। আমরা এদিক থেকে মোটামুটিভাবে ভালো অবস্থায় আছি।

“আমরা পৃথিবীর প্রথম সারির ধান, মাছ ও সবজি উৎপাদনকারী দেশ। আমরা সরাসরি ফ্লাইটটা চালু করলে আমাদের ব্যবসা অনেক বাড়বে।”

বাংলাদেশে চুক্তিভিত্তিক কৃষির মাধ্যমে খাদ্যশস্য রপ্তানির সুযোগ তৈরির বিষয়েও দুদেশের মধ্যে আলোচনা চলার কথা জানিয়েছেন তিনি।

পুরোনো খবর:

Also Read: সুলতান বলকিয়াহর শান শওকত