সুলতান বলকিয়াহর শান শওকত

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাসাদের বাসিন্দা, ৭ হাজার বিলাসবহুল গাড়ি ও স্বর্ণখচিত উড়োজাহাজের মালিক বলকিয়াহ বিশ্বজুড়ে আলোচিত তার বিলাসী জীবনের জন্য।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2022, 04:36 PM
Updated : 6 Oct 2022, 04:36 PM

রাষ্ট্রীয় সফরে প্রথমবার বাংলাদেশে আসছেন ব্রুনেই দারুসসালামের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ; ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তিনিই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে কোনো দেশের সিংহাসনে থাকা শাসক।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিন দিনের সফরে ১৪ অক্টোবর ঢাকায় আসবেন ব্রুনেইয়ের সুলতান। তার এই সফরে জ্বালানি সহযোগিতা, নিরাপদ অভিবাসন নিয়ে চারটি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ব্রুনেইয়ের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বেও রয়েছেন হাসানাল বলকিয়াহ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাসাদের বাসিন্দা, ৭ হাজার বিলাসবহুল গাড়ি ও স্বর্ণখচিত উড়োজাহাজের মালিক বলকিয়াহ বিশ্বজুড়ে আলোচিত তার বিলাসী জীবনের জন্য।

বাবা ওমর আলী সাইফুদ্দিন সাদুল খাইরি ওয়াদ্দিন স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পর বলকিয়াকে সুলতান ঘোষণা করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১ অগাস্ট তিনি দেশটির ২৯তম সুলতান হিসাবে দায়িত্ব নেন।

ক্ষমতা গ্রহণের এক দশক পর ১৯৭৮ সালে উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হতে ব্রিটেনের সাথে আলোচনা শুরু করেন সুলতান বলকিয়াহ। তার ধারাবাহিকতায় ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি স্বাধীনতা পায় ব্রুনেই।

তেল সমৃদ্ধ দেশ ব্রুনাইয়ের এই শাসক এক সময় ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তালিকাতেও ছিলেন। ২০১১ সালে ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সুলতান বলকিয়াহ আনুমানিক ২ হাজার কোটি ডলারের মালিক।

নিজের শাসনকে ছাপিয়ে বিলাসবহুল ও জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপনের জন্যই পরিচিতি পেয়েছেন সুলতান হাসানাল বলকিয়া। ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মিরর, ইনসাইডার ডটকম, ফোর্বস এবং সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের বিভিন্ন প্রতিবেদনে তার বর্ণিল জীবনের বিবরণ ছাপা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। 

৭ হাজার বিলাসবহুল গাড়ি

গত জুলাইয়ে ডেইলি মিররের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সুলতান বলকিয়াহর সংগ্রহে রয়েছে বহু বিলাসবহুল গাড়ি। তিনশ ফেরারির পাশাপাশি ছয়শ রোলস রয়েস রয়েছে তার সংগ্রহের তালিকায়।

বিলাসবহুল গাড়ির নির্মাতাদের পছন্দের তালিকায় সুলতানের থাকার কথা তুলে ধরে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নব্বইয়ের দশকে যত রোলস রয়েস তৈরি হয়েছিল, তার প্রায় অর্ধেক কিনেছে সুলতানের পরিবার।

ভিন্নতা আনার জন্য একটি রোলস রয়েসের উপরে ছাতার নকশা করা হয়েছিল সুলতানের জন্য। আর সেই গাড়ির বিভিন্ন জায়গায় অবধারিতভাবে ছিল সোনার আস্তরণ।

স্বর্ণখচিত উড়োজাহাজ

নিজের ঐশ্বর্যের প্রমাণ সুলতান রেখেছেন ব্যক্তিগত বোয়িং ৭৪৭-৪০০, বোয়িং ৭৬৭-২০০ এবং এয়ারবাস এ৩৪০-২০০ উড়োজাহাজ কিনে।

সেখানে থেমে থাকেননি তিনি; তার একটি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজেও দেওয়া হয়েছে সোনার আস্তরণ। সাজ-সজ্জা আর সুযোগ সুবিধার জন্য ওই উড়োজাহাজকে সুলতানের ‘উড়ন্ত প্রাসাদ’ বলেও ডেকেন কেউ কেউ।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওই উড়োজাহাজে একটি সোনার বেসিনও রয়েছে।

পশুপ্রেমী সুলতান, খেলেন ব্যাডমিন্টন

সুলতান বলকিয়াহকে পশুপ্রেমী হিসাবে বর্ণনা করেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, তার রয়েছে ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা।

ইনসাইডার ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই চিড়িয়াখানায় বাজপাখি, ফ্লেমিঙ্গো আর কাকাতুয়াসহ অসংখ্য পশুপাখি রয়েছে; আছে ৩০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগারও।

ব্রুনাইয়ের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে সুলতানের জীবনীতে বলা হয়, পোলো, স্কোয়াশ ও ব্যাডমিন্টন খেলেন সুলতান। উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার– দুটোই চালাতে পারেন।

গিনেস বুকে ১৭৮৮ কক্ষের প্রাসাদ

সুলতানের ‘ইসতানা নুরুল ইমান’ প্রাসাদে রয়েছে ১ হাজার ৭৮৮টি কক্ষ। রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ানে ২ লাখ বর্গমিটার বিস্তৃত ওই প্রাসাদ বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবাসিক প্রাসাদ হিসাবে স্থান করে নিয়েছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে।

গিনেস বুকের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এই প্রাসাদে ২৫৭টি স্নানঘর, ৫ হাজার অতিথির ভোজনালয়, বড় মসজিদ, ১১০ গাড়ির পার্কিং এরিয়া, ২০০ ঘোড়ার জন্য শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত আস্তাবল এবং পাঁচটি সুইমিং পুল রয়েছে।

ফিলিপিনো স্থপতি লিনদ্রো ভি লসিনের নকশায় ওই প্রাসাদের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৮৪ সালে। খরচ হয় ১৪০ কোটি ডলার।