বৈশ্বিক সংকট শেষের ঠিক নেই, বিদ্যুতে সাশ্রয়ী হতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

আরও গ্যাস ও কয়লার পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ আমদানির পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2023, 03:41 PM
Updated : 4 June 2023, 03:41 PM

অস্বাভাবিক বৈশ্বিক এ পরিস্থিতি আর কতদিন চলবে তা কেউ বলতে পারে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বিদ্যুতের ঘাটতি প্রত্যেকটি মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। আরও গ্যাস ও কয়লা আমদানির মাধ্যমে বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বিদ্যুতের মতো সব জিনিস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার তাগিদ দেন।

রোববার সংসদে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের খাদ্য উৎপাদনও বাড়াতে হবে। নিজেদের আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। বিশ্বের এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আর কতদিন চলতে তা কেউ বলতে পারে না। হয়তো বিশ্ব পরিস্থতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।

“তবে আমাদের দেশের মানুষের সুরক্ষার জন্য তাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আমাদের যা যা করণীয় তা করে যাচ্ছি।”

বৈশ্বিক অর্থনীতির বর্তমান নাজুক প্রেক্ষাপটে দেশে সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার বলে জানান তিনি।

এদিন সংসদে চট্টগ্রাম ১০ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আফছারুল আমীনের মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। পরে তা সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয়।

বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরুর পর শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে সরকারপ্রধান বর্তমান বৈশ্বিক সংকট নিয়ে কথা বলেন। জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় নেওয়া সরকারে পদক্ষেপও তুলে ধরেন তিনি।

তিনি বলেন, আজকে স্বাধীনতার সুফল মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাচ্ছে। মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি হয়েছে। যদিও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশনের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি তেলের অভাব, যার জন্য এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে কিন্তু জ্বালানির অভাব হচ্ছে। সেখানে লোড শেডিং বা বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করা হচ্ছে। প্রত্যেকটা খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, উন্নত দেশেও বহু মানুষ চাকুরি হারাচ্ছে। এমন একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সারা বিশ্বব্যাপী, আমি জানি না আর কখনও এরকম পরিস্থিতি হয়েছিল কী না। হয়তো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তো দুর্ভিক্ষ, মনান্তর দেখা দিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের অতিমারী আর এরপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ; এর ফলে সমগ্র বিশ্বে যে খাদ্যমন্দা, মুদ্রাস্ফীতি, পরিচালন ও পরিবহন ব্যয়, বিদ্যুতের ঘাটতি- এটা প্রত্যেকটি মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। বাংলাদেশে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করেছি।

তিনি বলেন, আমাদের ওয়াদা ছিল মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার, পৌঁছে দিয়েছিলাম। কিন্তু জ্বালানি তেল, কয়লা বা গ্যাসের অভাব সারা বিশ্বব্যাপী, এখন তো অনেকটা কেনাটাই মুশকিল। ক্রয় করাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

“ইতোমধ্যে কাতার ও ওমানের সাথে আমাদের চুক্তি সই হয়ে গেছে। আমরা জলবিদ্যুৎও আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি। কয়লা কেনার জন্য ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আমরা আবার চালু করতে পারি।”

আফছারুল আমীনকে স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তিনি ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রতিটি সংগ্রামে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। দলের প্রতি তার নিষ্ঠা ও সততা ছিল অতুলনীয়। তিনি মন্ত্রী হিসেবেও অত্যন্ত সাফল্য দেখিয়েছেন।

তিনি বলেন, এটা খুবই কষ্টের যে যেদিন সংসদ শুরু করলাম সেদিন শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করি। আজকে আবার আবার শোকপ্রস্তাব জানাতে হচ্ছে। এবারের সংসদে আমরা এতজন সংসদ সদস্যকে হারালাম বোধহয় আর কখনও হয়নি।

তিনি বলেন, ’৭৫ এর পর ২১টি বছর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধারা পরিচয় দেওয়ারও সাহস পেত না।…আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। ‘৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। সেই সংগ্রামে সবসময় আফছারুল আমীনকে পেয়েছি। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছিল, নির্যাতিতও হয়েছেন। তার অবদান ভুলবার নয়। যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা নিষ্ঠার সাথে করেছেন।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সবসময়ই দুর্গতদের সেবা করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় হয়েছে মানুষ মারা গেছে। তৎকালীন বিএনপি সরকার জানেইনি যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। সকলের আগে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছুটে যায়। আমি নিজেও ছুটে যাই। সেই কুতুবদিয়া, মহেশখালী, বাঁশখালী- মরা মানুষের লাশ, মহিলা ও শিশুর লাশ ভাসছে। তখন আফসারুল আমীনসহ চট্টগ্রামের সকল নেতারা নেমেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা সবার আগে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আমরা সাধ্যমত রিলিফ দেওয়া ও লাশ দাফনের ব্যবস্থা করি। এটা নিয়ে সংসদে তখন প্রধানমন্ত্রী (খালেদা জিয়া) বলেছিলেন যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরেনি। তিনি তখন জানেনইনি, তার কাছে কোনো খবর ছিল না। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম কত মানুষ হলে আপনার তত মানুষ হবে।

শোক প্রস্তাবের ওপর অন্যদের মধ্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ওয়াসিকা আয়েশা খান, মোতাহার হোসেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মুজিবুল হক চুন্নু, মসিউর রহমান রাঙ্গা বক্তব্য রাখেন।