বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিবছর বৈশাখী মেলা হলেও এবার মেলা হচ্ছে না।
Published : 09 Apr 2024, 09:25 AM
এবার ঈদের পরপরই বাংলা নববর্ষ পড়ায় খুশির আমেজ থাকবে দীর্ঘ সময়। উৎসবের সময় বেড়ে গেলেও সেবা যাতে বিঘ্নিত না হয় তা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিয়েছে রাজধানী ও আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
চিড়িয়াখানা
ঈদ ও বাংলা নববর্ষকে ঘিরে সপ্তাহজুড়েই খোলা থাকবে ঢাকার মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা।
বিনোদন কেন্দ্রটির পরিচালক মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদ ও বর্ষবরণকে ঘিরে চিড়িয়াখানাকে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। দর্শনার্থী যারা আসবেন, তাদের যেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে, তার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীকে আমরা চিঠি দিয়েছি।
“পাশাপাশি আমাদের এখানে যারা কর্মরত আছেন, সবার সঙ্গে সভা করে ডিউটি ভাগ করে দিয়েছি। দর্শনার্থীদের সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত।”
সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানা খোলা থাকবে। রোববার সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও ঈদের পরের রোববার দুয়ার খোলা রাখবে জাতীয় চিড়িয়াখানা।
রফিকুল ইসলাম বলেন, “ঈদের পরের রোববার বাংলা নববর্ষ। এদিন চিড়িয়াখানা খোলা থাকবে। ঈদের পরের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
“চিড়িয়াখানা নিয়মিত যেভাবে থাকে, সেভাবেই পরিচালিত হবে- নতুন কোনো কিছু হচ্ছে না। তবে সেবার মান ভালো করার চেষ্টা থাকবে।”
শিশুমেলা
কয়েক বছর ধরেই বন্ধ রয়েছে শাহবাগের জাতীয় শিশু পার্ক। তাতে করে বিভিন্ন দিবসে শিশুদের ভিড় বেড়েছে শ্যামলীর শিশুমেলায়। শিশুদের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে সেখানকার বিভিন্ন রাইড রঙ করে নতুন রূপে সাজানো হয়েছে।
শিশুমেলার ব্যবস্থাপক রাজিবুল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিশুমেলা সাত দিনই খোলা থাকে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ঈদের জন্য নতুন সময় সূচি করা হয়নি। এই সময় অনুযায়ী খোলা থাকবে।
“তবে দর্শনার্থীদের চাপ বাড়লে তখন সময় বাড়ানো বা কমানোর চিন্তা করা হবে। আপাতত সকাল ১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্তই খোলা থাকবে।”
শিশুমেলায় ১৭টি ফ্যামিলি রাইড ও ৭০টি কিডস রাইড আছে। এ ছাড়াও শিশুমেলার ভেতরে খাবারের দোকান আছে।
বিভিন্ন রাইড শিশুদের মাঝে আনন্দ ছড়াবে মন্তব্য করে রাজিবুল বলেন, “স্বপ্নপুরী নামে একটা রাইড আছে। এটাতেই সবার আগ্রহ বেশি থাকে।
“ঈদের কারণে টিকেটের মূল্য আগের মতোই থাকবে। বাড়ানো বা কমানো হচ্ছে না।”
ফ্যান্টাসি কিংডম ও নন্দন পার্ক
ঈদ ও বাংলা বর্ষবরণ ঘিরে দর্শনার্থীদের জন্য নতুন পরিকল্পনা সাজিয়েছে ঢাকার সাভারের নন্দন পার্ক, আর আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম। নানা বয়সের মানুষের বিনোদনের কথা চিন্তা করে আয়োজনে থাকছে বৈচিত্র্য; যুক্ত হচ্ছে নতুন রাইডও।
নন্দন পার্কের মার্কেটিং অফিসার মোহাম্মদ সুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোজার মাসে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আমাদের নন্দন পার্ক খোলা রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে আট দিনের বিশেষ আয়োজন রয়েছে।
“ঈদের দিন থেকে এই আট দিনের আয়োজন শুরু হবে। এজন্য আমাদের দিক থেকে সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আয়োজনে থাকবে ডিজে পার্টি, ফায়ার ড্যান্স, ড্যান্স শো, ডল শো। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে ঈদের বিশেষ আয়োজন। কেউ যদি দলগতভাবে আসেন, তারা অগ্রিম বুকিং করেও আসতে পারবেন।”
আর ফ্যান্টাসি কিংডমে নতুন রাইড যোগ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মালিক কোম্পানি কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড।
কোম্পানির হেড অব মার্কেটিং এম মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদ উপলক্ষে আমাদের একটা নতুন রাইড যুক্ত হচ্ছে। নাম ‘হ্যারিকেন’। এটা সবাইকে আনন্দে ভাসাবে বলে আমরা মনে করছি।
“খুবই ‘হার্ট ফিলিং’ একটা রাইড হবে। এটা ঈদের দিন থেকে যুক্ত হচ্ছে ফ্যান্টাসি কিংডমে। এছাড়া প্রতিদিনই ডিজে, ড্যান্স শোসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়োজন তো থাকবেই।”
সপ্তাহের সাত দিনই সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ফ্যান্টাসি কিংডম খোলা থাকবে বলে জানান তিনি।
ছায়ানটের বর্ষবরণ, চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা
১৯৬৭ সাল থেকে পহেলা বৈশাখের নতুন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রমনার বটমূলে প্রভাতী আয়োজনের মাধ্যমে বর্ষবরণ করে আসছে ছায়ানট। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বছর ছাড়া প্রতিবছরই এই পরিবেশনা হয়েছে। কোভিডের দু’বছর আয়োজনটি ভার্চুয়ালি করা হয়। এবারও ছায়ানট প্রস্তুতি নিচ্ছে বর্ষবরণের।
এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। এ দুটি আয়োজন বাড়তি আনন্দ দেবে নগরীর মানুষকে।
ক্যাপশন থেকে ছবি: বৈশাখী সাজে নানা বয়সের আর নানা শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ শুক্রবার বর্ষবরণের মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।
গত শতকের আশির দশকে সামরিক শাসনের অর্গল ভাঙার আহ্বানে পহেলা বৈশাখে চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হয়েছিল; সেটিই পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় রূপ নেয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিও পায় এ কর্মসূচি।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বর্ষবরণ
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিবছর বৈশাখী মেলা হলেও এবার মেলা হচ্ছে না। এই মেলার আয়োজন করে মূলত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ও বাংলা একাডেমি।
বিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা পারুল আক্তার কেয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের পর পর হওয়ায় দর্শক সমাগম হবে কি না- সেই শঙ্কা থেকে পহেলা বৈশাখে মেলা হচ্ছে না। তবে এক সপ্তাহ বা ১০ দিন পর থেকে হবে। তারিখ চূড়ান্ত হলে সবাইকে জানানো হবে।"
বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সাইমন জাকারিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতি বছরের মতো এবার পহেলা বৈশাখে বাংলা একাডেমি আয়োজন করবে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল ৮টায় থাকবে বর্ষবরণ বক্তৃতা, গান ও অন্যান্য আয়োজন।”
মঞ্চে থাকবে নাটক
রোজার ঈদ ও বাংলা বর্ষবরণকে ঘিরে সিনেমা, টেলিভিশন নাটক, সংগীতসহ বিনোদন জগতের অন্যান্য মাধ্যমের মতো মঞ্চ নাটকও নতুন কাজের পরিকল্পনা নিয়েছে। ঈদে ঢাকার মঞ্চে আসছে চার নাটক। এর মধ্যে দুটি নাটকের হবে উদ্বোধনী মঞ্চায়ন।
লেখক, নির্দেশক ও অভিনেতা মামুনুর রশীদের নাট্যদল আরণ্যক মঞ্চে আনছে ‘কম্পানি’; আর প্রাঙ্গণেমোর মঞ্চে আনছে উৎপল দত্তের লেখা কালজয়ী নাটক ‘টিনের তলোয়ার'।
এছাড়া নূনা আফরোজ নির্দেশিত ‘অভিনেতা’ এবং সৈয়দ জামিল আহমেদ নির্দেশিত ‘বিস্ময়কর সবকিছু’ নাটক দুটিও ঈদ আয়োজনে মঞ্চস্থ হবে।
আরণ্যক নাট্যদল জানিয়েছে, ঈদের দিন সন্ধ্যা ৭টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে হবে ‘কম্পানি’র প্রথম প্রদর্শনী। টানা পাঁচ দিন একই সময় একই মঞ্চে নাটকটির প্রদর্শনী হবে।
অন্যদিকে পহেলা বৈশাখে প্রাঙ্গণেমোর মঞ্চে আনছে ‘টিনের তলোয়ার'।
এ নাটকের নির্দেশক ও অভিনেতা অনন্ত হিরা গ্লিটজকে বলেন, আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে টানা তিনদিন শিল্পকলা একাডেমিতে ‘টিনের তলোয়ার' দেখানো হবে।
১৯ এপ্রিল বেইলি রোডের মহিলা সমিতিতে নতুন নাটক ‘অভিনেতা'র প্রদর্শনী হবে।
এবারের ঈদেও নাটক নিয়ে ঢাকার মঞ্চে থাকবে স্পর্ধা। ১১ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭ টায় গুলশানে মঞ্চস্থ হবে নাটক ‘বিস্ময়কর সবকিছু’। এটি নির্দেশনা দিয়েছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ।