স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, কোন রকম অনিয়ম, কোনরকম গাফিলতির জন্য কোনো বাচ্চা যদি মারা যায়, তুমি তোমার মত ব্যবস্থা নেবে।“
Published : 25 Feb 2024, 01:30 PM
খতনা করাতে গিয়ে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে থাকতে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।
রোববার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “গতকাল আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি, প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, এ ব্যাপারে তুমি ‘জিরো টলারেন্স’। কোনো রকম অনিয়ম, কোনো রকম গাফিলতির জন্য কোনো বাচ্চা যদি মারা যায়, তুমি তোমার মত ব্যবস্থা নেবে। এরকম কড়া নির্দেশ উনি আমাকে দিয়েছেন।”
রাজধানীতে দুই মাসের মধ্যে খতনা করাতে গিয়ে দুই শিশুর মৃত্যু নিয়ে আলোচনা চলছে। গত ২০ জানুয়ারি রাতে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খতনা করতে এসে মারা যায় ১০ বছর বয়সী আহনাফ তাহমিন আয়হাম।
এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনার জন্য অজ্ঞান করার পর আর জ্ঞান ফেরেনি শিশু আয়ান আহমেদের। গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে সাত দিন লাইফসাপোর্টে রাখার পর ৭ জানুয়ারি তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এই দুই ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিককে ১০টি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
লাইসেন্সধারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছাড়া ডাক্তারের চেম্বার বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া এবং বিএমডিসির স্বীকৃত অবেদনবিদ ছাড়া যে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার করা যে নিষিদ্ধ, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পাশাপাশি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচারের জন্য একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসককে সার্জনের সহকারী হিসেবে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা জানেন, কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, সেটার পর্যালোচনা করে আমরা সবাই আলাপ-আলোচনা করলাম কীভাবে আমরা সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়। ইতোমধ্যেই আপনারা জানেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কীভাবে ক্লিনিক পরিচালনা করবে কী কী ক্রাইটেরিয়া থাকা লাগবে।
“এটি (স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা) গত বৃহস্পতিবার আমরা দিয়েছিলাম আজ রোববার। আমরা তিন চার দিন সময় দিয়েছিলাম, দেখি কি করে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এটা আমি নিজে মনিটর করব।”
চিকিৎসকদের উদ্দেশে সামন্ত লাল সেন বলেন, “আমার চিকিৎসক ভাই-বোনদের বলতে চাই, আমরা সেই জায়গায় অপারেশন করব… অপারেশন করার আগে আমাদের দেখতে হবে সেখানে সাপোর্টিং জিনিস আছে কিনা। সেটা অপারেশন করার জায়গা নাকি জায়গা না।
“আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক অপারেশন করেছি। সুতরাং আমি জানি কোথায় কী কী লাগে, কী কী ক্রাইটেরিয়া লাগে অপারেশন করার জন্য। সেগুলো না থাকলে কোনো অবস্থাতেই এটা করা যাবে না। যদি কেউ একটা ভায়োলেট করে, আমাদের যতরকম আইন অনুযায়ী…।
মন্ত্রী বলেন, “বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল ) হচ্ছে আমাদের সর্বোচ্চ আদালত। ইতোমধ্যে আমি বিএমডিসি'র সঙ্গে কথা বলেছি, এই তিনটি (অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে খতনা ও এন্ডোসকপি করাতে গিয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা) বিষয় ইনভেস্টিগেশন করার জন্য এবং যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়, তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমার কথা চিকিৎসকদের সুরক্ষা দেব, রোগীদেরকেও সুরক্ষা দেব।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেওয়া ১০ দফা নির্দেশনার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি আশা করি আগামী দুই একদিনের মধ্যে… আমি নিজে এটা মনিটর করব।
“আমি আপনাদের আগেও বলেছি, এখনো বলছি, আমি এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। আমি এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেব না, যার যেখানে যে যোগ্যতা, সেই যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করবে, এর বাইরে কাজ করতে পারবে না। এটা ক্লিয়ার।”
অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে
অবৈধ ক্লিনিক এর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান। অতীতে কি হয়েছে সেটা… আমি তো বলছি এটা আমি চলমান রাখব।
“আমি সেদিন ময়মনসিংহ গিয়েছিলাম, আসার সময় ডানে-বাম কত ক্লিনিক। এটাতো আমার একার পক্ষে সম্ভব না, এটার জন্য সবার, আপনাদের ভূমিকা লাগবে, স্থানীয় সংসদ সদস্যদের ভূমিকা লাগবে। সামগ্রিকভাবে যদি এটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো যায় এটা সম্ভব।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক কর্মকর্তা এ সময় বলেন, হাই কোর্টে ১২৭টি অবৈধ ক্লিনিকের তালিকা দেওয়া হয়েছে। এবং অবৈধ ক্লিনিকের সবগুলো বন্ধ করা হয়েছে।
পুরনো খবর:
খতনা করাতে গিয়ে মৃত্যু: সব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রকে ১০ নির্দেশনা