মুক্তিযুদ্ধে ভারত ও রাশিয়ার সহযোগিতার কথা কতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা হয় অনুষ্ঠানে।
Published : 17 Dec 2023, 10:05 PM
একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মিত্রবাহিনীর ৪৪ ভারতীয় ও রুশ সদস্যকে সংবর্ধনা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
রোববার রাতে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর ৩৬ এবং রাশিয়ার ৮ জন বীর সদস্যকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মনোজ সিংয়ের নেতৃত্বে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যরা বিজয় দিবস উপলক্ষে সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছেন। রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মিত্র বাহিনীর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন গোবেনকো ভিটালি বিটরোভিচ।
বিদেশি বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, "মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের সুসম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও দৃঢ় হবে।"
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদানের কথা স্মরণ করে মন্ত্রী বলেন, "প্রায় এক কোটি মানুষকে আশ্রয়, খাবার ও প্রশিক্ষণ দিয়ে ভারত সহায়তা না করলে এত অল্প সময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পারত না। স্বাধীনতার কয়েক মাস পরেই ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বন্ধুত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ভারত।”
ভারতীয় মিত্রবাহিনীর পরিবারের সদস্যদের জন্য বাংলাদেশ সরকার যে শিক্ষাবৃত্তি চালু করছে, সে কথাও বলেন মোজাম্মেল হক।
মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাধব আরেন বলেন, "আমরা আশা করি, উভয় দেশের সুসম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। পারস্পরিক সহযোগিতা দেশের জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে।"
মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া রাশিয়ার অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন গোবেনকো ভিটালি বিটরোভিচ বলেন, "এ বিজয় আমাদের যৌথ বিজয়। আমি দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকুক।"
ভারতীয় হাই কমিশনার প্রনয় ভার্মা, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, স্বাধীনতা পদক ও পদশ্রীপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাশ গুপ্তসহ ভারতীয় হাইকমিশন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ
ভারত ও রাশিয়ার ৪৪ সদস্যের এই প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে গত ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আসেন এবং সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
রোববার তারা সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সেনা সদর দপ্তরে গিয়ে তারা সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মিত্রবাহিনীর সকল সদস্যের অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।
ভারতীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান আবেগভরে তাদের স্মৃতি রোমন্থন করেন এবং এই অভ্যর্থনা ও সম্মানের জন্য বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সেনাপ্রধান এসময় স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন এবং স্বাধীনতাত্তোর সহায়তার জন্য রাশিয়ার অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নানের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
এসময় বিমান বাহিনী প্রধান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার পাশপাশি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় ও রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেন।
নৌবাহিনীর প্রধানের সাথেও এই প্রতিনিধিদলটি সাক্ষাত করে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আইএসপিআর।
এছাড়া তারা সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সাক্ষাত এবং মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।
পাঁচ দিনে এই সফরে প্রতিনিধি দলটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। তারা আগামী ১৯ ডিসেম্বর নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।