দ্বিতল এ সেতুর নিচ তলা দিয়ে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমে যশোর পর্যন্ত যাচ্ছে রেল।
Published : 09 Oct 2023, 11:45 PM
প্রমত্তা পদ্মার বুকের ওপর সেতু নির্মাণ করে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় দুই যুগেরও বেশি সময় আগে। দীর্ঘ এ সময়ে আর্থিক সংকট, দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগসহ বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন সবার জন্য খুলে যায় দক্ষিণের এ দুয়ার; শুরু হয় এক স্বপ্নযাত্রার।
দ্বিতল এ সেতুর নিচ তলা দিয়ে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমে যশোর পর্যন্ত যাচ্ছে রেল। মঙ্গলবার ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটারের রেলপথ উদ্বোধন করা হচ্ছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত আরও ৮৭ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধন করা হবে। জেনে নেওয়া যাক এ প্রকল্পের খুঁটিনাটি।
এক নজরে পদ্মরেল সংযোগ প্রকল্প
>> ১৯৯৮ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের মতোই প্রথম প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইও শুরু হয়েছিল দেশি অর্থায়নে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মানদীতে সেতু নির্মাণ করে সড়ক যোগাযোগের প্রথম উদ্যোগ নেন।
>> ১৯৯৯ সালের মে মাসে পদ্মাসেতু প্রকল্পের জন্য প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা (প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি) শুরু হয়।
>> ২০০৩ সালের মে মাস থেকে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার কাজ শুরু হয়ে ২০০৫ সালে শেষ হয়।
>> তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ২০ অগাস্ট একনেক সভায় ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
>> ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারির একনেক সভায় প্রকল্পটির ব্যয় দ্বিগুণ করে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায় উন্নীত করে প্রকল্পটির সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই সংশোধনীতেই প্রথমবারের মতো পদ্মাসেতুতে রেল যুক্ত করা হয়।
>> ২০১১ সালের প্রথম দিকে বিশ্ব ব্যাংকের নেতৃত্বে একটি কনসোর্টিয়াম তৈরি করা হয়। সেই কনসোর্টিয়ামে ছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)।
>> ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
>> ২০১২ সালে বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পটিতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে।
>> ২০১২ সালের ৩০ জুন দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে সরকার সহযোগিতা না করার অভিযোগে ঋণ বাতিল করে দেয় বিশ্ব ব্যাংক।
>> ২০১২ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন।
>> ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনা প্রকল্পের মূল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।
>> ২০১৬ সালের ৩ মে একনেক সভায় পদ্মা সেতুর ওপর রেললাইন স্থাপনে ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকায় এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
>> প্রকল্পটির জন্য প্রস্তাবিত ৩১৩ কোটি ডলারের চীনা ঋণের চূড়ান্ত চুক্তি করতে বিলম্ব হওয়ায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। চীন প্রকল্পে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার কথা জানায়।
>> ২০১৮ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ২৬৭ কোটি ডলার বা ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকার ঋণচুক্তি করে।
>> ২০১৮ সালের ২২ মে প্রকল্পটির ব্যয় ৪ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকায় একনেক সভায় প্রথম সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়। মূলত জমি অধিগ্রহণে জমির দাম তিনগুণ হয়ে যাওয়ায় ব্যয় বেড়ে যায়। ওই সংশোধনীতে মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
>> কোভিড মহামারীতে কাজের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হলে দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
>> ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
>> ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৮৩ শতাংশ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশের ৮০ শতাংশ বাস্তবায়ন। এ সময়ে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয় প্রায় ৮৭ শতাংশ।
>> ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার পথে রেল চলাচল উদ্বোধন।