ছুটির শেষ দিনও ঢাকা ফাঁকা, সড়ক গতিময়

ডাকাডাকি করেও ফায়দা হবে না জেনে কোথাও দীর্ঘ সময় দাঁড়াচ্ছেও না বাস। যাত্রী বেশি নেই, এই অবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া চাইছেন না অটোরিকশা চালকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2023, 12:33 PM
Updated : 23 April 2023, 12:33 PM

ঈদের ছুটি কর্মক্লান্ত মানুষের পাশাপাশি ঢাকা শহরও যেন একটু জিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেল। লাখো মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়ায় রাজধানীতে কমেছে চাপ। এমনিতে গাড়ির চাপে স্থবির সড়কগুলো হয়ে উঠেছে গতিময়। বাধাহীন চলাচলে এক ঘণ্টার পথ নেমে এসেছে ২০ মিনিটে।

ঈদের ছুটির শেষ দিন রোববারও মোড়ে মোড়ে নেই গাড়ির চাপ, হর্নের অত্যাচার আর মানুষের কোলাহল।

শহরের ভেতরে চলাচলকারী বাসগুলো কর্মব্যস্ত দিনে তিনটির বেশি ট্রিপ দিতে পারে না। তবে এখন আধা বেলাতেই দিতে পারছে চারটি ট্রিপ।

যাত্রী সংখ্যা বেশি নেই, ডাকাডাকি করেও ফায়দা হবে না জেনে কোথাও দীর্ঘ সময় দাঁড়াচ্ছেও না সেগুলো। অটোরিকশাতেও মোটামুটি কম ভাড়ায় চলাচল করা যাচ্ছে। যাত্রী বেশি নেই, এই অবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া চাইছেন না চালকরা।

গাবতলী-যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান-মিরপুর, বাড্ডা-সাভার, মাতুয়াইল-সাভারের পাশাপাশি ঢাকা থেকে আশেপাশের জেলায় চলাচলকারী টঙ্গী-গুলিস্তান, গাজীপুর-মতিঝিল, গাজীপুর- আজিমপুর এবং নরসিংদী-সাভার রুটে চলাচলকারী বাসের চালক ও সহকারীরা জানালেন, যানজটহীন সড়কে চলার অভিজ্ঞতা।

বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের দিন বের হতে পারিনি। সোমবার থেকে অফিস খুলছে। তাই আজ পরিবারসহ বের হলাম। সড়ক ফাঁকা থাকায় মনে হচ্ছে তিন জন বন্ধু ও এক আত্মীয়ের বাসায় যেতে পারব। এমনিতে এক দিনে দুই বাসায় যাওয়াই কঠিন হয়ে যায়।”

মিরপুরের কালসী ১৭ মিনিটে রামপুরা ব্রিজ পৌঁছে গিয়ে আসিফ কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রেসিডেন্ট গেলে রাস্তা যেমন ফাঁকা থাকে, তেমন ফাঁকা ছিল আজকে। সামনে কোনো বাস বা গাড়ি ছিল না। আজকে নিজেকে প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট মনে হয়েছে।’’

বাসও কম যাত্রীও নেই

বাস মালিক সমিতির হিসাবে ঢাকায় ৬ থেকে ৭ হাজার বাস চলে সবগুলো রুটে। সেই সংখ্যাটি যে এখন অনেকটাই কমে এসেছে তা বোঝা যায়।

নারায়ণগঞ্জ-গুলিস্তান রুটে চলাচলকারী বন্ধন পরিবহনের বাস চালক জমির উদ্দিন জানালেন, তাদের রুটের ৫ শতাংশের মতো বাস চলছে এখন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যাত্রী নেই। অনেক সিট ফাঁকা রেখেই আসছি। আগে যেখানে রাস্তায় জ্যাম না থাকলেও এ পথে এক ঘণ্টা সময় লাগত, এখন সেখানে ২০ থেকে ২৫ মিনিটে ঢাকায় চলে আসছি।”

যেসব বাস চলছে, সেগুলোও সেভাবে যাত্রী পাচ্ছে না। চলতে হচ্ছে আসন ফাঁকা রেখেই।

তবে মিরপুরগামী বাসের যাত্রী কিছুটা বেশি। সেখানে চিড়িয়াখানা দেখতে পরিবারের ছোটদের নিয়ে ছুটছে অনেক মানুষ। এটিই এই রুটের বাসের চালকদের তুলনামূলক কিছুটা স্বস্তির কারণ।

সদরঘাট-চিড়িয়াখানা রুটে চলাচলকারী বিহঙ্গ পরিবহনের চালক রহিম উল্লাহ জানান, সকাল ৮টায় থেকে বেলা একটার মধ্যেই চারটি ট্রিপ দিতে পেরেছেন। সকালে চিড়িয়াখানাগামী যাত্রী বেশি ছিল জানিয়ে বলেছেন, বিকেলে ফিরতে পথে চাপ বেশি থাকবে।

বেলা ১১ টায় বাইপাইল থেকে বাস ছেড়ে গুলিস্তানে এসেছে ভিক্টর পরিবহনের একটি বাস। এর সহকারী আব্দুল জব্বার বলেন, রাস্তা ফাঁকা। দুই ঘণ্টাও লাগেনি আসতে। যা দেরি হয়েছে যাত্রী তুলতে অপেক্ষা করায়।

যাত্রবাড়ী-গাবতলী রুটে চলা ৮নম্বর বাসের চালক আবুল কাসেম বলেন, “কোনো মোড়ে সিগন্যাল পাইনি। একটানা চলে আসছি ৩০ মিনিটে। যাত্রী যা পাচ্ছি তাই নিচ্ছি।”

ঈদের পরদিনও বকশিস নেয়ার কারণে যাত্রী কম থাকলেও পুষিয়ে যাচ্ছে পরিবহন শ্রমিকদের। গন্তব্য ভেদে ৫ টাকা ১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া নিতে দেখা গেছে। বাড়তি টাকা দিতে যাত্রীরাও খুব একটা আপত্তি করছেন, এমনও না।

সাভার পরিবহনের একটি বাসের চালক ইউনুছ মিয়া জানালেন, এই বকশিসের কারণেই তাদের পুষিয়ে যাচ্ছে।

‘যাত্রীর খোঁজে’ অটোরিকশা চালকরা, কমেছে ভাড়া

যাত্রী না পেয়ে রিকশাচালকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে শান্তিনগর, কাকরাইল, গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ, মালিবাগ, মগবাজার, সাতরাস্তা ও মহাখালী এলাকায়। এমনিতে মিটারে চলতে রাজি না থাকলেও যাত্রী কম থাকায় মিটারের ভাড়াও হাঁকতে দেখ গেছে চালকদের।

গাইবান্ধার আনোয়ার হোসেন ঢাকায় অটোরিকশা চালাচ্ছেন গত ১২ বছর ধরে। এবারের ঈদে গ্রামের বাড়ি না যাওয়ায় ঈদের পরের দিনই সড়কে নামেন তার রিকশা নিয়ে।

বেলা দেড়টার দিকে গুলিস্তান থেকে রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় যেতে এক যাত্রীর ভাড়া ঠিক করলেন ২০০ টাকায়।

গাড়িতে ওই যাত্রী উঠানোর সময়ে ২০ টাকা চা পানের জন্য বকশিষ চাইলেন তিনি। হেসে উঠে পরিবারসহ যাত্রী হয়ে উঠা সালাম সরকারও সায় দিলেন।

আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘এক ঘণ্টা ধরে বসে থেকেও কোনো যাত্রী পাইনি। আমার গ্যারাজ বাড্ডা এলাকার। ২০০ টাকায় যাত্রী নিলে অন্য চালকরা ক্ষেপে যাবে। কিন্তু বসে থেকে কী লাভ?’’

কর্ম দিবসে এ গন্তব্যের ভাড়া অন্তত ৩০০ টাকা। কখনও কখনও সাড়ে তিন শতে গিয়ে ঠেকে জানালেন আরেক চালক ইব্রাহিম হোসেন।

নির্বাহী আদেশসহ সাধারণ ছুটি মিলিয়ে এবার ৫দিনের ছুটি শুরু হয়েছে গত ১৯ এপ্রিল থেকে, যার শেষ দিন চলছে রোববার। সোমবার থেকে খুলবে অফিস। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, ঢাকায় স্বাভাবিক ব্যস্ততা শুরু হতে হতে একটি সপ্তাহ লেগে যাবে।