লঞ্চ ভাড়া বাড়াতে ৮ ধরনের হার প্রস্তাব ওয়ার্কিং কমিটির

কমিটির প্রস্তাব থেকে নতুন হার বেছে নিয়ে লঞ্চের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করে দেবে নৌ মন্ত্রণালয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2022, 08:46 AM
Updated : 11 August 2022, 08:46 AM

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে লঞ্চের ভাড়া বেড়ে কত হবে, তা নির্ধারণে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি আটটি ধাপ রেখে প্রস্তাব জমা দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে।

কমিটির সদস্য সচিব বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব কিছু বিবেচনা করে এই প্রস্তাব সচিব স্যাবের দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। ১৯.৫ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে কোনো একটি ধাপ এখন বিবেচনা করতে পারে।”

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে লঞ্চের ভাড়া ১৯.৫%, ২২%, ২৫%, ৩০%, ৩৫%, ৪০%, ৪২% কিংবা ৫০% বাড়ানো যেতে পারে।

আট ধরনের ভাড়ার হার কেন প্রস্তাব করা হল জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, “সড়ক পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে ২২ শতাংশ, তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৪২ শতাংশ আর মালিক সমিতি ৫০ শতাংশ দাবি করেছে ( যদিও মালিক সমিতি ১০০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল)। এই তিন বিষয় পর্যালোচনা করে এই ধাপগুলো তৈরি করা হয়েছে। সরকার এখান থেকে উপযুক্ত একটি নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করবে।”

প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি পেলে প্রতি কিলোমিটারে লঞ্চ ভাড়া বাড়বে ৪৫ পয়সা। ২২ শতাংশে বাড়বে ৫১ পয়সা, ২৫ শতাংশে ৫৭ পয়সা, ৩০ শতাংশে ৬৯ পয়সা, ৩৫ শতাংশে ৮০ পয়সা, ৪০ শতাংশে ৯২ পয়সা, ৪২ শতাংশে ৯৬ পয়সা আর ৫০ শতাংশ হলে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়বে ১ টাকা ১৫ পয়সা।

এতদিন ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে প্রতি কিলোমিটারের লঞ্চ ভাড়া ২ টাকা ৩০ পয়সা, আর দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারের বেশি হলে ভাড়া ২ টাকা ছিল। লঞ্চের সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ৩০ টাকা।

গত বছরের নভেম্বরে ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর লঞ্চের ভাড়া ৩৫ শতাংশের বেশি বাড়িয়ে এই হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল।

ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে ডলারের উচ্চ মূল্যকে কারণ দেখিয়ে গত শনিবার সরকার ডিজেলের দাম এক লাফে ৪২ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বাসের ভাড়া ২২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতি ভাড়া দ্বিগুণ করার একটি প্রস্তাব গত রোববার বিআইডব্লিউটিএতে পাঠায়।

সেখানে ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়িয়ে ৪ টাকা ৬০ পয়সা; ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে ৪ টাকা ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে মালিক পক্ষ।

তাদের প্রস্তাবে বলা হয়, “সরকার কর্তৃক জ্বালানি তেলের (ডিজেল) মূল্য লিটারে ৩৪ টাকা বৃদ্ধি করায় এবং বিশ্ব বাজারে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের খোলা বাজারে মবিলের মূল্য ৫০ শতাংশ, প্লেট, অ্যাঙ্গেল, ইঞ্জিনের খুচরা যন্ত্রাংশ, ওয়েল্ডিং রড ও গ্যাসসহ স্পেয়ার পার্টসের মূল্য প্রায় ২০০ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায়” এই হারে লঞ্চের ভাড়া নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

সোমবার নৌ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ওই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার পর নৌ সচিব মো. মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, মালিকপক্ষের প্রস্তাব তারা ‘যৌক্তিক মনে করছেন না’। সেজন্যই ওয়ার্কিং কমিটি করা হয়েছে।

“মালিকদের প্রস্তাবিত ভাড়ার হার বেশি। কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য কাজ করবে ওয়ার্কিং কমিটি। প্রজ্ঞাপন হওয়ার আগ পর্যন্ত আগের ভাড়াতেই লঞ্চে যাত্রী পরিবহন করা হবে।”

নৌ পরিবহন একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে সোমবার ওই কমিটি করার পর সেদিনই প্রথম বৈঠকে বসেন সদস্যরা। বুধবার তারা সুপারিশ জমা দিলেও মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও জানানো হয়নি।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। শুক্রবার রাতে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে প্রথম ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের জন্য যে হারে ভাড়া বৃদ্ধি হবে, ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের জন্যও ঠিক একই হারে ভাড়া বাড়ানো যেতে পারে।

পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিসির আওতায় পরিচালিত ফেরির ভাড়া ২০ শতাংশ এবং উপকূলীয় যাত্রী সেবার ভাড়া বিআইডব্লিউটিসি নিজস্ব খরচ অনুযায়ী নির্ধারণ করার সুপারিশ করেছে ওয়ার্কিং কমিটি।

কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এসএম ফেরদৌস আলম, বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ছিলেন সদস্য সচিব।

আর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. আব্দুল মোক্তাদের, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্মসচিব মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী, বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক এসএম আশিকুজ্জামান, লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু, সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম খান কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন।