পুলিশ বলছে, ছোট ভাই আবুল কালামের সঙ্গে মোশারফ হোসেনের ব্যবসায়িক বিরোধ চলছিল। তাই তাকে ‘শায়েস্তা করার’ পরিকল্পনা করেন তিনি।
Published : 12 Oct 2023, 01:34 AM
রাজধানীর শ্যামপুরে এক ব্যবসায়ীর ৫৪ লাখ টাকা ডাকাতির তদন্তে নেমে তার বড় ভাইসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ, গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুজন আবার পুলিশ সদস্য।
শ্যামপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলছেন, ছোট ভাইয়ের টাকা ছিনতাই করতে পুলিশ ভাড়া করেছিলেন বড় ভাই। ১৫ দিন আগে সব পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে সোমবার সকালে রাজধানীর দোলাইর পাড় এলাকায় পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী আবুল কালামের টাকা ছিনতাই করে তারা ।
ওই ঘটনায় কালাম শ্যামপুর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। এরপর মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছিনিয়ে নেওয়া ৪১ লাখ ৮৭ হাজার টাকাও তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান ওয়ারী বিভাগের গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার আব্দুল আহাদ।
গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে মোশাররফ হোসেন হলেন ছিনতাইয়ের শিকার ব্যবসায়ী কালামের বড় ভাই। দুই পুলিশ সদস্য হলেন গুলশান থানার এএসআই দেলোয়ার হোসেন এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত কনস্টবল আবু সায়েম। গ্রেপ্তার চতুর্থ জন হলেন গাড়ি চালক বাতেন।
উপ কমিশনার আহাদ জানান, উদ্ধার হওয়া টাকার মধ্যে ১২ লাখ টাকা পাওয়া গেছে মোশারফের আলমারিতে। বাতেনের কদমতলীর বাসায় পাওয়া গেছে ৯ লাখ টাকা।
আর ১২ লাখ টাকা মিলেছে এএসআই দেলোয়ারের ভগ্নিপতির বাসায়। সায়েমের ভাগের ৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা পাওয়া গেছে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স ক্যান্টিনের ব্যারাকে।
পুলিশ কর্মকর্তা আহাদ বলেন, “ওই ঘটনায় মোট পাঁচজন জড়িত। ছিনতাইয়ের মামলা হলেও সেটা ডাকাতি হিসেবে গণ্য হবে। পলাতক একজনকে গ্রেপ্তার করতে পারলে বাকি টাকাও উদ্ধার করা সম্ভব।”
তিনি জানান, মোশারফ ও বাতেন ইতোমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আর পুলিশের দুই সদস্যকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
শ্যামপুর থানার ওসি নজরুল বলেন, এএসআই দেলোয়ারের সঙ্গে মোশারফের আগে থেকে পরিচয় ছিল। তারা দীর্ঘদিন পাশাপাশি বাসায় থেকেছেন।
“ছোট ভাইয়ের সঙ্গে মোশারফের ব্যবসায়িক বিরোধ চলছিল। তাই তাকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করেন। সেজন্য তিনি দেলোয়ারের সঙ্গে পরামর্শ করেন। পরে দুজনে মিলে ছিনতাইয়ের ছক আঁকেন।
“সোমবার ছিনতাইয়ের সফল অপারেশনের পর ওই টাকা তারা ভাগ করে নেন। এএসআই দেলোয়ার রাজারবাগে তার ভগ্নিপতির বাসায় সেই টাকা লুকিয়ে রাখেন। কনস্টেবল আবু সায়েম (তিনি অন্য ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত) তার ভাগের টাকা রাখেন রাজারবাগের ক্যান্টিনে।”
গ্রেপ্তার এএসআই দেলোয়ারের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে। ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় করা ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি।
আর পুলিশ সদস্য সায়েম অস্ত্র মামলার আসামি। ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর পল্টন থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হয়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে যুক্ত করা হয় পুলিশ লাইনসে।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে ওসি বলেন, গত সোমবার ঘটনার দিন সকাল ৯টার দিকে মোশারফ ফোন করে দেলোয়ারকে জানান, দোলাইর পাড়ের সাবান ফ্যাক্টরির গলি থেকে তার ভাই কালাম তার নাতি তানভীর হাসান নয়নের মাধ্যমে ৫৪ লাখ টাকা মতিঝিলে ব্যবসায়িক অংশীদার জাবেদুর রহমানের অ্যাকাউন্টে জমা দিতে পাঠিয়েছেন।
“নয়ন দোলাইর পাড়ের ইউনিকেয়ার হাসপাতালের সামনে হেঁটে যাওয়ার সময় অজ্ঞাতপরিচয় দুই ব্যক্তি তার গতিরোধ করে। তাদের মধ্যে একজনের গায়ে ছিল লাল গেঞ্জি। নয়নকে একজন প্রশ্ন করেন, ‘তুই কি নয়ন? তুই কি কালামের নাতি?’
“উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলার পরপরই নয়নকে জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে তারা। গাড়িতে উঠতে না চাইলে তারা পুলিশ বলে পরিচয় দেয়। এরপর টেনেহিঁচড়ে তাকে মাইক্রোবাসে তোলা হয়।”
ওসি বলেন, মাইক্রোবাসের ভেতরে নয়নের কাছ থেকে সব টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রসুলপুরে তাকে নামিয়ে দেয় ছিনতাইকারীরা।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা আহাদ জানান, মামলা হওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করে। সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসিটিভি ভিডিও বিশ্লেষণ করে একটি গাড়ির নম্বর শনাক্ত করে। এরপর প্রযুক্তির সহায়তায় চারজনকে শনাক্ত করা হয়। পরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
কালাম কী ব্যবসা করতেন জানতে চাইলে ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ছিনতাই হওয়া ৫৪ লাখ টাকা হুন্ডির। ব্যবসায়ী দুই ভাই মোশারফ ও কালাম হুন্ডির সঙ্গে জড়িত। তারা টাকা এভাবে লেনদেন করে কমিশন খেত।”