বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ডিজেলের মান নির্ধারণের আগে পরিবেশকে গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ।
Published : 15 Apr 2023, 08:39 PM
দেশে চলমান বায়ুদূষণ কমাতে দ্বৈত নীতি পরিহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে 'বায়ুদূষণ কমাতে দ্বৈত নীতির পরিহার জরুরি' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারকে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে সবার কল্যাণে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এতে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, "বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বায়ু দূষণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি উপলব্ধি করে পিএম২.৫ এর আদর্শমান প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম থেকে কমিয়ে ৫ মাইক্রোগ্রাম করেছে। সেখানে বাংলাদেশের বায়ু দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০২২ (তফসিল-১) এ পিএম২.৫ এর আদর্শমান প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে বাড়িয়ে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম করা হয়েছে। আবার তফসিল ৫ অনুযায়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্ট্যাক ইমিশনের জন্য সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেনের অক্সাইডগুলো এবং বস্তুকণার সর্বাধিক অনুমোদিত সীমা যথাক্রমে ২০০, ২০০ ও ৫০ মিলিগ্রাম/ন্যানো ঘনমিটার। এ মাত্রা যেসব দেশ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলায় সহযোগিতা করছে, তাদের চেয়েও ৪-৫ গুণ বেশি।"
তিনি ভবিষ্যতে বায়ুদূষণের মারাত্মক প্রভাব কমাতে পিএম২.৫ এর আদর্শমান প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম বজায় রাখার তাগিদ দেন।
তিনি বলেন, "দেশের উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ডিজেলের মত গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তবে এগুলোর মান নির্ধারণের পূর্বে অবশ্যই পরিবেশকে গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ছোট বা বড় যেসকল শিল্প হতে পরিবেশ দূষিত হবে তাদের সঠিক শ্রেণি বিন্যাস করতে হবে এবং নির্গত দূষণের মাত্রা স্বচ্ছভাবে নির্ধারণ করে দিতে হবে।"
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, "বায়ুদূষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন ও নীতিমালায় দ্বৈত নীতির মধ্যমে দূষণের মানমাত্রা বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়ে আমাদের সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেশের আইন মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার বদলে, ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের গোষ্ঠী স্বার্থকে রক্ষা করছে, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।"
ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচারের সহ সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, "বায়ুদূষণ কমানোর জন্য আমরা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, কিন্তু বিভিন্ন নীতিমালায় তার বিপরীতমুখী আইন পাস হয়ে যাচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক।"
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের অভিযোগ, "বাংলাদেশের নীতি প্রণয়নে দুর্নীতির মাধ্যমে জনস্বার্থ উপেক্ষা করে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য সমন্বিত নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন না করে একটি অগ্রহণযোগ্য বায়ুদূষণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।"
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, "সরকারের পক্ষ থেকে আইন প্রণয়নের যে উদ্যোগ আসে, সেটি জনগণের হবে কি না তা নির্ভর করে আইন প্রণয়নে কারা জড়িত তার উপর। আমাদের সংসদ নেতৃত্ব দেন ব্যবসায়ীরা এবং পলিসি নির্ধারিত হয় তাদের স্বার্থে। পরিবেশ দূষণ এর জন্য প্রধানত দায়ী ব্যবসায়ীরা।"
বারসিকের সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "বাংলাদেশের যত মানুষের অকাল মৃত্যু হয় তার ২০ ভাগ মৃত্যু হয় বায়ুদূষণের কারণে।