সুলতানসে ‘অন্য প্রাণীর’ মাংস ব্যবহারের প্রমাণ মেলেনি: ভোক্তা অধিদপ্তর

“অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে জানতে চেয়েছে তারা আসলেই সেই প্রাণির মাংস খাচ্ছেন কি না”, বলেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2023, 12:39 PM
Updated : 13 March 2023, 12:39 PM

সোশাল মিডিয়ায় ওঠা অভিযোগের কারণে আলোচনায় থাকা সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসি বাদে অন্য প্রাণীর মাংস ব্যবহারের অভিযোগ ‘সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়া’র কথা জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সোমবার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “খাসি বাদে অন্য প্রাণীর মাংসের ব্যবহার সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান সুলতান’স ডাইনকে অন্য প্রাণীর মাংস ব্যবহারে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে।”

তিনি জানান, যে মোবাইল ফোন নম্বর থেকে ফোন করে সুলতান’স ডাইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল, সেই নম্বরটি পরে বন্ধ পেয়েছেন তারা।

সোমবার ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘মা বাবার দোয়া’ নামে কাপ্তানবাজারের একটি দোকানের মাধ্যমে মাংস সংগ্রহ করে সুলতান’স ডাইন। খাসি জবাইয়ের সময় সুলতানস’ এর কর্মীরা উপস্থিত থাকেন মাঝেমধ্যে। ভেন্ডর নিজ দায়িত্ব মাংস সরবরাহ করে।

গত ৯ মার্চ ভেন্ডর ১২৫ কেজি মাংস পাঠানোর কথা জানালেও সুলতান’স ১৫০ কেজি মাংস সংগ্রহ করার কথা জানায়।

অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, যে মাংস নিয়ে বিরোধ, তার হাড় চিকন হওয়ার বিষয়ে তাদেরকে সুলতান’স ডাইন বলেছে, তারা সাত থেকে ৯ কেজি ওজনের খাসি ব্যবহার করে। এই ওজনের খাসির হাড় চিকন হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। যে কাচ্চির মাংস নিয়ে বিতর্ক, সেটি কিসের ছিল, তা তিনি বলেননি।

মহাপরিচালক বলেন, “অনেকেই আমাদের কাছে অভিযোগ জানায়, আবার সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও আমরা কিছু তথ্য পাই। এসব তথ্যের ভিত্তিতেই সুলতান’স ডাইনে অভিযান চালানো হয়।

“এই সময়ের মধ্যে অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে জানতে চেয়েছে তারা আসলেই সেই প্রাণির (কুকুর, বেড়াল) মাংস খাচ্ছেন কি না। এখন তারা কী মাংস দিয়েছে বা সেখানে কীসের মাংস ছিল তা তো একটা ল্যাব টেস্টের ব্যাপার।” ‍

তিনি বলেন, “সুলতান’স ডাইনের ওখান থেকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নমুনা সংগ্রহ করেছে, তারা পরীক্ষা করবে। সেটা কীসের মাংস ছিল তা বলার কর্তৃপক্ষ তারাই। আমাদের সেই ল্যাব ফ্যাসিলিটিজ নেই।”

মহাপরিচালক জানান, ঢাকায় খাবারের দোকানের মাংসের উৎস নিয়ে যেন কোন সংশয় না থাকে, সে জন্য তাদের বিশেষ উদ্যোগ থাকবে।

“ঢাকা শহরে এমন বড় আকারে যারা ব্যবসা করেন, তাদের নিয়ে আমি একটা সভা করব। যাদের একটা বড় কাস্টমার গ্রুপ আছে, তারা কীভাবে, কোন জায়গা থেকে মাংস সংগ্রহ করেন, তার রেকর্ড তাদের রাখতে হবে।”

এর বাইরে শুনানিতে কী এসেছে তা লিখিত জানিয়ে দেওয়ার কথাও বলেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৯ মার্চ বিকেল আনুমানিক পৌনে ৪টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সুলতান’স ডাইনের গুলশান-২ শাখায় তদন্ত করা হয়। চার দিন পর সুলতান’স এর পক্ষে এর মহাব্যবস্থাপক, উপমহাব্যবস্থাপক এবং ওই শাখার ব্যবস্থাপক শুনানিতে উপস্থিত হয়ে মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য দেন।

২০১৭ সালে সুলতান’স ডাইন কাচ্চি বিরিয়ানি বিক্রি শুরু করে। এর আগে তারা পিৎজা, পাস্তা জাতীয় খাবার বিক্রির দোকান খোলে। কিন্তু সেই উদ্যোগ সফল না হওয়ায় পরে বিয়ে বাড়িতে বিরিয়ানি সরবরাহ শুরু করে।

পরে ধানমণ্ডিতে দোকান খুলে শুরু হয় কাচ্চি বিরিয়ানি এবং এ জাতীয় খাবার বিক্রি। জনপ্রিয় এই খাবার তৈরি করতে নিজস্ব একটি রেসিপিও আছে তাদের।

জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর ঢাকার গুলশান, বেইলি রোডসহ একাধিক এলাকায় শাখা খোলে সুলতান’স ডাইন। ঢাকার বাইরে পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জেও আছে তাদের শাখা।

চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে অনলাইনে অর্ডার করে এক গ্রাহক মাংসের হাড় দেখে সন্দেহ হওয়ার কথা জানান। তাদের কল পেয়ে ছুটে যান সুলতান’স এর কর্মকর্তারা।

সেই ভোক্তার সন্দেহ ছিল, এটি খাসির মাংস নয়। অন্য প্রাণীর। পরে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে যে, সুলতান’স কুকুর বেড়ালের মাংস ব্যবহার করে।

ওই অভিযোগ উঠার পর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সংরক্ষণ অধিদপ্তর গত ৯ মার্চ সুলতান’স এর গুলশান শাখায় অভিযান চালায়। সেখানে গিয়ে ২৫ কেজির মাংসের গড়মিল পাওয়া যায়।

সুলতান’স এর কর্মীরা দাবি করেন, তারা দেড়শ কেজি মাংস পেয়েছেন। তবে যারা মাংস সরবরাহ করে, সেই প্রতিষ্ঠান জানায় ১২৫ কেজি পাঠানোর কথা। 

শুরু থেকেই সুলতান’স ডাইন ওই অভিযোগকে ‘অপপ্রচার’ বলে আসছে। তারা দাবি করছে, টাকা চেয়ে না পেয়ে সেই ভোক্তা এই অভিযোগ সামনে এনেছেন।

সেই গ্রাহককেও এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার ফোন নম্বরও বন্ধ বলছে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।