গত ১ এপ্রিলও তাদেরকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিলেন বিচারক।
Published : 04 Apr 2024, 11:21 PM
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় এক তরুণীকে ২৫ দিন শিকলে বেঁধে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় চার আসামির আমার দুই দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
তিন দিনের রিমান্ড শেষে তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ থানার উপ-পরিদর্শক ফারুকুল ইসলাম আসামিদেরকে আদালতে হাজির করে আবার পাঁচ দিনের রিমান্ড চান। আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা করেন জামিনের আবেদন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বিরোধিতা করা হয় এর।
আসামি পক্ষের আইনজীবীর বলেন, “আসামি সান ঘটনার বিষয়ে কিছু জানেন না। তার সঙ্গে বাদীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে না করার কারণে এই মামলা হয়েছে।”
দুই পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তার সিদ্ধান্ত জানান।
আসামিরা হলেন সান, হিমেল, রকি এবং সালমা ওরফে ঝুমুর।
মোহাম্মদপুর থানার আদালতের (নারী-শিশু) সাধারণ নিবন্ধন শাখার উপ-পরিদর্শক উত্তম কুমার এসব তথ্য জানান।
গত ১ এপ্রিল চার আসামিকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।
গত ৩০ মার্চ ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে পুলিশ শেকলে বাঁধা তরুণীকে উদ্ধারের পর তিনি মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। এরপর মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল চার আসামিকে মোহাম্মদপুর, পল্লবী, হাজারীবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
তাদেরকে আদালতে পাঠানোর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার আজিমুল হক সংবাদ সম্মেলনে এসে নেপথ্যের কথা তুলে ধরেন।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বিদেশে অবস্থান করা এক আইনজীবীর ভূমিকা জানতে পারার কথা জানিয়ে বলেন, তরুণীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে সেই ব্যারিস্টারকে পাঠানো হত।
পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, ওই তরুণী তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে ব্যারিস্টার দেশে আসলে তার সঙ্গে অবস্থান করতেন।
তিনি বলেন, তরুণীর থাকার সে রকম জায়গা না থাকায় ব্যারিস্টার তার পূর্ব পরিচিত প্রবাসীর স্ত্রী সালমার সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এরই মধ্যে সান নামের এক তরুণের সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক হয়ে যায়।
বিষয়টি সেই ব্যারিস্টার জানতে পেরে তরুণীকে ‘শায়েস্তা’ করার জন্য পরিকল্পনা করেন।
তিনি বলেন, “ব্যারিস্টার মাসুদের নির্দেশেই সালমা, সানসহ তার দুই বন্ধু প্রায় ২৫ দিন তরুণীকে শিকল দিয়ে বেঁধে যৌন নির্যাতন চালাতেন।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সালমাকে রাজি করানো হয় অর্থের কথা বলে। পরে সালমাকে দিয়ে সানকে ‘ম্যানেজ’ করা হয়।
এরই মধ্যেও সান তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
উপ কমিশনার আজিমুল হক বলেন, “সালমা তার মোবাইলে ওই তরুণীর নগ্ন ভিডিও ধারণ করে নিয়মিত মাসুদের কাছে পাঠাত। পরে সানের সঙ্গে ধর্ষণের ভিডিও মাসুদকে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে পালা করে চারজন পরস্পরের মোবাইলে ভিডিও করত এবং তা ওই ব্যারিস্টারকে পাঠাত।”
ব্যারিস্টারের অবস্থান শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সেই তরুণীর করা মামলায় বলা হয়েছে ৫ থেকে ৩০ মার্চ তাকে শেকলে বেঁধে রেখে ধর্ষণ করা হয়েছে।
পুরোটা সময় তাকে শেকলে বেঁধে রাখা হয়। কেবল খাবার এবং বাথরুমে যাওয়া সময় শেকল খুলে দিতেন সালমা।
গত ৩০ মার্চ রাতে বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে জানলা দিয়ে চিৎকার করে স্থানীয় এক ব্যক্তির দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন। পরে সেই ব্যক্তিই ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ এগিয়ে আসে।
শেকলে বেঁধে ধর্ষণ: ‘যত বড় হোক, নাম যেন তদন্তে আসে’
২৫ দিন শেকলে বেঁধে ধর্ষণ: ‘নেপথ্যে’ প্রবাসী ব্যারিস্টার
মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাটে ২৫ দিন শেকলে বেঁধে সংঘবদ্ধ ‘ধর্ষণ’, তরুণী উদ্ধার