র্যাব বলছে, ' পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে' টঙ্গী চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ডের 'ঢাকা এক্সপ্রেস' পরিবহনের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনের পরিকল্পনায় একই পরিবহনের টিকেট বিক্রেতা আকাশকে খুন করা হয়েছে।
Published : 12 Jan 2024, 01:10 PM
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ের পাশে এক ব্যক্তির চোখ উপড়ানো মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
তারা হলেন-মো. নিজাম উদ্দিন (৩৬), মো. সোহাগ (৩৮), মো. জহিরুল ইসলাম (৪৮), মো. রনি হোসেন (২৩) ও মো. বাদশা (২৩)। গ্রেপ্তর সবাই পরবিহন খাতের সঙ্গে জড়িত।
রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুরের টঙ্গী ও লক্ষ্মীপুরের রায়পুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
শুক্রবার রাজধানীর কাওরানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন বলেছেন, পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় এবং পূর্বশত্রুতার জেরে টঙ্গীর চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ডের ‘ঢাকা এক্সপ্রেস’ পরিবহনের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনের পরিকল্পনায় একই পরিবহনের কর্মী ওমর ফারুক আকাশকে (৩২) খুন করা হয়েছে।
গত ৯ জানুয়ারি রূপগঞ্জের কালনি এলাকায় এশিয়ান হাইওয়ের পাশে চোখ ওপড়ানো অবস্থায় আকাশের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
টঙ্গীর চেরাগআলী এলাকায় ‘ঢাকা এক্সপ্রেস’ পরিবহনের বাসের টিকেট বিক্রি করতেন আকাশ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাউনিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি; তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর।
কমান্ডার মঈন জানান, মৃতদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন কাছের র্যাব ক্যাম্পে খবর দেয়। র্যাব এরপর মরদেহের সঙ্গে থাকা মানিব্যাগ, কিছু কাগজপত্র এবং 'ওআইভিএস ডিভাইস'র মাধ্যমে তার নামপরিচয় বের করে।
এই ঘটনায় আকাশের মা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর তদন্তে নেমে এই খুনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে র্যাব কর্মকর্তা মঈন জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ৯ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে আকাশ কাজের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে টঙ্গী চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ডে যান। কিন্তু সময়মত বাসায় না ফেরায় বারবার স্বজনরা বারবার তার মোবাইলে ফোন করেও বন্ধ পায়। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, আকাশের সঙ্গে তার পরিচয় টঙ্গির বাসস্ট্যান্ড থেকে। দুজনের মধ্যে টাকাপয়সাও লেনদেন হত। পরে সেই লেনদেন নিয়ে দুজনের সম্পর্কের অবনতিও হয়।
এরমধ্যে নিজাম উদ্দিনের কাছে আকাশ তার পাওনা টাকা ফেরত চাইলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। নিজাম সে সময় আকাশকে উচিৎ শিক্ষা দেবেন বলে নিদ্ধান্ত নেন। এজন্য গ্রেপ্তার বাকি চারজন সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশাসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে করণীয় ঠিক করতে পরিকল্পনা করেন।
“সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজাম ফোন করে আকাশকে টাকা নেওয়ার জন্য কাউন্টারে আসতে বলেন। আকাশ টাকা নিতে কাউন্টারে আসলে নিজামের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশা আকাশকে মারধর করে। পরে তাকে জোর করে 'ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনের' একটি খালি বাসে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর বাসের মধ্যে তারা আকাশের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র নিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
“সোহাগ ও রনি আকাশের হাত-পা চেপে ধরে এবং বাদশা বাসে থাকা টুলবক্স থেকে স্ক্রু ড্রাইভার নিয়ে আকাশের বাম চোখ উপড়ে ফেলে।”
আকাশ মারা গেছে নিশ্চিত হওয়া পার তারা তার মরদেহ নিয়ে রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে পাশে রঘুরামপুর এলাকার নির্জন রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যায়।
নিজাম উদ্দিন সাত বছর ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। বাদশা টঙ্গীতে একটি গ্রিল ওয়ার্কশপের কর্মচারি। তার সঙ্গে নিজাম উদ্দিন ও রনির পূর্ব পরিচয় ছিল।
রনি ঢাকা এক্সপ্রেস ও লাবিবা ক্লাসিক পরিবহনের টঙ্গী স্টেশনের কাউন্টার মালিক। সোহাগ ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে ১৭ বছর ধরে সুপারভাইজারের কাজ করছেন। আর জহিরুল ইসলাম ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে গত চার বছর ধরে চালক হিসেবে আছেন।