ঘরবন্দি: মাকে ভর্তি সোহরাওয়ার্দীতে, দুই মেয়েকে মানসিক হাসপাতালে

উদ্ধারের আগে সপ্তাহখানেক ধরে তারা অভুক্ত ছিলেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2023, 06:31 PM
Updated : 7 Feb 2023, 06:31 PM

ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে দুদিন আগে যে নারীকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল তাকে মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর তার দুই মেয়েকে নেওয়া হয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে।

এ দিন ওই নারীর দুইভাইসহ স্বজনেরা এসে তাদের দায়িত্ব নিয়েছেন।

রোববার ভোরে ওই ভবনের দোতলার ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে শাফানা আফিফা শ্যামী নামের এক নারী আর তার ১০ বছর বয়সী যমজ মেয়েকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে উত্তরার কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর আগে সপ্তাহখানেক ধরে তারা না খেয়ে থাকলেও কেউ তাদের খোঁজ রাখেনি জানিয়ে পুলিশ বলছে, ১৫ দিন বাসায় বাজার হয়নি। ছিল না বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইনও। ফ্ল্যাট থেকে প্রায়ই শিশুদের চিৎকার আর কান্নার শব্দ পাওয়া যেত। তাদের ঘরে খাবার, পোশাক কিছুই ছিল না।

উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মুজাহিদুল ইসলাম মঙ্গলবার সকালে জানান, “মা ও দুই মেয়েকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে শেরেবাংলা নগরে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের উদ্দেশ্যে তুলে দেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সে তার সঙ্গে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পারি ফাউন্ডেশনের কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী।

এই ফাউন্ডেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম খান জানান, সকালে মা ও দুই মেয়েকে প্রথমে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। তখন ওই নারী খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।

“চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, তার শরীরের পটাশিয়াম একেবারেই কমে গেছে। তখন শ্যামীকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিতে বলেন চিকিৎসকেরা; আর শিশু দুটিকে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি নেওয়া হয়। পরে শ্যামীকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়।”

ওয়াসিম খান জানান, হাসপাতালে শ্যামীর দুই ভাই, এক চাচাত বোন, এক ফুফাত ভাইসহ বেশ কয়েকজন স্বজন মঙ্গলবার এসেছিলেন। পরে পারি ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু তালেবসহ স্বেচ্ছাসেবীরা মা ও শিশুদুটির দায়িত্ব স্বজনদের হাতে ছেড়ে সেখান থেকে চলে আসেন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক বিধান রঞ্জন রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “দুই শিশু হাসপাতালে মঙ্গলবার ভর্তি হয়েছে। আমরা অন্যসব রোগীর মতো তাদেরও গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।

“কেবল ভর্তি হলো। দু-একদিন পর বলা যাবে, তাদের কী কী সমস্যা এবং চিকিৎসার অগ্রগতি কতটুকু।”

মধ্য ত্রিশের শাফানা আফিফা শ্যামীর বাবা ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। পৈত্রিক সূত্রে ফ্ল্যাটটি পান তিনি। শ্যামী সিজোফ্রেনিয়ায় ভুগছেন বলে স্বজনেরা পুলিশকে জানিয়েছেন।

পুলিশ জানাচ্ছে, শ্যামীর বাবার দুই স্ত্রীর সংসার মিলিয়ে ছয় সন্তান। এর মধ্যে শ্যামীরা চার ভাই ও এক বোন। ভাইবোনদের মধ্যে শ্যামী তৃতীয়। তার চার ভাইই সমাজে প্রতিষ্ঠিত। এক ভাই কানাডা প্রবাসী। এক ভাই প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। কিন্তু প্রথম দুদিন তাদের কেউই দেখতে আসেননি।

শ্যামীর মাও আছেন, তবে অসুস্থ। শ্যামীর মা ও ভাইয়েরা আগে উত্তরার ওই বাড়িতেই ছিলেন। গত আগস্টে তারা বনানীতে আরেক বাসায় উঠে যান।

Also Read: ফ্ল্যাটে খাবারবিহীন দিন কাটছিল অসুস্থ মা-মেয়েদের, খোঁজ রাখেনি কেউ

Also Read: দুই সন্তানকে নিয়ে ঘরবন্দি মা, মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার