যথাসময়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে: ইসি আলমগীর

তবে কবে নাগাদ তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি কমিশনার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2023, 12:21 PM
Updated : 15 Jan 2023, 12:21 PM

নিয়ম অনুযায়ী ‘যথাসময়ে’ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আয়োজন করতে ইতোমধ্যে ‘প্রক্রিয়া শুরু’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কশিমনার মো. আলমগীর।

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া আমরা ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছি। যথাসময়ে নির্বাচন হবে।”

তবে কবে নাগাদ তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি এ কমিশনার।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এভাবে তো বলতে পারব না, যথাসময়ে হবে। প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আইন অনুযায়ী স্পিকারের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এ প্রসঙ্গে আলাপ হবে।”

আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে শেষ হচ্ছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে, অর্থাৎ ২৪ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

এদিকে সংসদের চলতি অধিবেশন ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে বলে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংসদের ৩৫০ আসনের মধ্যে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করার পর সাতটি আসন শূন্য রয়েছে, এর মধ্যে ছয় আসনের উপ নির্বাচন রয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের প্রার্থীর রাষ্ট্রপতি হওয়াটা নিশ্চিত।

সবশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল হয় ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি। সেসময় ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ থাকলেও প্রার্থী একজন থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৬ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন মো. আবদুল হামিদ।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইতোমধ্যে বলেছেন, “যেহেতু তিনি (আবদুল হামিদ) দুই টার্ম থেকেছেন, সংবিধান অনুযায়ী তিনি আর বেশি থাকতে পারেন না। সেহেতু আমরা নতুন রাষ্ট্রপতি দেখব, ইনশাল্লাহ।”

সংবিধানের ১২৩ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে এ পদ শূন্য হলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন হবে।

১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি আইনের সপ্তম ধারায় বলা হয়েছে- নির্বাচনী কর্মকর্তা নির্ধারিত দিন, সময় ও স্থানে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করবেন। প্রার্থী একজন হলে এবং পরীক্ষায় তার মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হলে কমিশন তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। তবে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে নির্বাচনের জন্য তাদের নাম ঘোষণা করবে ইসি।

একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোটের আয়োজন করবেন। নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখে সই দিয়ে তা জমা দেবেন সংসদ সদস্যরা।

ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদ কক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেওয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত থাকবে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করবে। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।

সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট করতে হয়েছিল। পরে প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন।

নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে, আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাতে নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

‘মিথ্যা তথ্য দিলে ভোটের পর কিছুই করার থাকে না’

নির্বাচনী হলফনামায় কোনো প্রার্থী মিথ্যা তথ্য দিলে ভোটের পর সেটি নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার থাকে না বলে মন্তব্য করেন ইসি কর্মকর্তা আলমগীর।

ক্ষমতাসীন দলের একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক বাড়ি থাকার বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার বিষয়ে রোববার সাংবাদিকরা জানতে চাইলে এ কথা বলেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, “হলফনামায় মিথ্য দিলে ভোটের আগে কেউ চ্যালেঞ্জ করলে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় ব্যবস্থা নিতে পারে নির্বাচন কমিশন। ভোটের পরে এ ধরনের অভিযোগ এলেও ইসির করার কিছুই থাকে না; আদালতে সংক্ষুব্ধ যে কেউ দ্বারস্থ হতে পারেন।

তিনি বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা প্রমাণ না করাতে পারছেন, যেহেতু নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কেউ এটাকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেনি, এখন উনি নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এখন উনি যে ভুল তথ্য দিয়েছেন এটা খালি বললে হবে না, এটা প্রমাণ করাতে হবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। ব্যবস্থা নেওয়ার পর যখন আমাদের কাছে পাঠাবেন তখন আমরা ব্যবস্থা নেব।”

এ বিষয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় কেউ চ্যালেঞ্জ করলে ইসি তা যাচাই-বাছাই করে দেখবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

“যাচাই-বাছাইয়ে যদি প্রমাণিত হয় তাহলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হবে। এটুকু ক্ষমতা ইসির আছে। এরপরে যদি হয়, তাহলে প্রতারণা করেছে, প্রতারণার মামলা হবে।

“এই ধারার শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে আদালত। আদালত ব্যবস্থা নিয়ে জানালে ইসি ব্যবস্থা নেবে।”

আরও খবর:

Also Read: রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই: আইনমন্ত্রী

Also Read: টিভি সূচি (শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২)

Also Read: রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনর্নির্বাচিত