“মাননীয় আদালত, তখন আমি মন্ত্রী ছিলাম ঠিকই কিন্তু আমি এসব কিছু করিনি। আমি যা কাজ করেছি তা সবকিছুই ফাইল অনুযায়ী করেছি”, আদালতে বলেন তিনি।
Published : 21 Oct 2024, 06:06 PM
রাজধানীর পল্টন থানায় মানবপাচার আইনে করা মামলায় সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদকে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
সোমবার ঢাকার মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব এই আদেশ দেন।
সাবেক মন্ত্রীকে আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন মডেল থানার উপ-পরিদর্শক নাজমুল হাছান তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। ইমরানের আইনজীবী কামরুজ্জামান চৌধুরী করেন আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে এর বিরোধিতা করে শুনানি করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি বলেন, “উনি দেখতে বয়স্ক, কিন্তু ‘চুরিতে’ যুবক।
“মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে তিনি ও তার ছেলে কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সি সিলেক্ট করেন। তারপর তাদের কাছ থেকে প্রতি লোকের জন্য ‘দেড় লক্ষ টাকা নেন’।”
মামলার বাদীর কাছ থেকেও ১২ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “এছাড়াও এ খাত থেকে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে।”
আসামির আইনজীবী কামরুজ্জামান বলেন, “এ মামলায় তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ নাই। ঘটনার সময় তিনি দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু সেক্রেটারি লেভেলের লোকদের দায়িত্ব ছিল এটা। আর কারা কারা রিক্রুটিং এজেন্সি থাকবে সেটা মালয়েশিয়ার সরকার ঠিক করে দিয়েছে। উনি এখানে জড়িত নন। উনি বয়স্ক মানুষ। আমি উনার জামিন আবেদন করছি।”
ইমরান কিছু বলতে চান কি না, এই প্রশ্ন রাখেন বিচারক। তিনি তখন আদালতকে বলেন, “মাননীয় আদালত, তখন আমি মন্ত্রী ছিলাম ঠিকই কিন্তু আমি এসব কিছু করিনি। আমি যা কাজ করেছি তা সবকিছুই ফাইল অনুযায়ী করেছি।
“মানুষের কাছ থেকে টাকা যা নেওয়ার তা এজেন্সিগুলো নিয়েছে। তারাই নির্দিষ্ট সংখ্যার অতিরিক্ত লোক নিয়েছে। আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”
পরে বিচারক আদেশ দেন।
মামলায় কী অভিযোগ
রোববার রাতে রাজধানীর বনানী থেকে ইমরানকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গত ৩ সেপ্টেম্বর ‘সিন্ডিকেট করে’ অর্থ আত্মসাৎ ও মানবপাচারের অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানায় মামলাটি করেন আফিয়া ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী আলতাব খান। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ২৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় ইমরান আহমদ ছাড়াও সাবেক প্রবাসীকল্যাণ সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, সাবেক সংসদ সদস্য ও এম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, আহমেদ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ও সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ এবং ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. রুহুল আমীন স্বপনসহ ১০৩ জনকে আসামি করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, “জনশক্তি রপ্তানিতে দুই হাজারের বেশি রিক্রুটিং এজেন্ট থাকলেও আসামিদের ‘সিন্ডিকেট চক্র’ ব্যবসায়ীদের মধ্যে ‘বৈষম্য’ তৈরি করে সংবিধানের মূলনীতি পরিপন্থি জঘন্য অপরাধ করেছে।
“আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় নিজ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছেলেকে ‘সিন্ডিকেট চক্রের’ সদস্য হিসেবে ব্যবহার করেছেন। আর সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ তার পরিবারের সদস্য অর্থাৎ তার স্ত্রীর বড় ভাইয়ের ছেলেকে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ প্রবাসী নামক একটি অ্যাপ চালুর অনুমোদন দিয়ে ‘চক্রকে’ সহযোগিতা করেছেন।”
এজাহারে বাদী লেখেন, পরস্পর যোগসাজশে ভয়ভীতি ও বলপ্রয়োগ করে মানবপাচারের উদ্দেশে তার কাছ থেকে জোর করে অতিরিক্ত চাঁদা হিসেবে প্রত্যেকের দেড় লাখ টাকা হারে ৮৪১ জনের ১২ কোটি ৫৬ লাখ এক হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে।
তারা সঙ্ঘবদ্ধভাবে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে আত্মসাৎ করেছে, এমন একটি অভিযোগও আনা হয় মামলায়।