“ঢাকার খালগুলো দখলমুক্ত করেছি, এখন সময় এসেছে দূষণমুক্ত রাখার,” বলেন তিনি।
Published : 28 May 2024, 08:14 PM
ঢাকার দখলমুক্ত খালগুলোতে যারা আবর্জনা ফেলবেন, ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাদেরকে চিহ্নিত করে অর্থদণ্ড দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “ঢাকার খালগুলো দখলমুক্ত করেছি, এখন সময় এসেছে দূষণমুক্ত রাখার। খালে কেউ ময়লা ফেলেছে, এটা প্রমাণিত হলেই জরিমানা।”
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘রেজিলিয়েন্ট সিটিস টুওয়ার্ড এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন’ শিরোনামে নগর সংলাপে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মেয়র আতিক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ এবং ২০টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কনসোর্টিয়াম ‘আরবান আইএনজিও ফোরাম’ এর যৌথ উদ্যোগে এ সংলাপ আয়োজন করা হয়।
মানুষ সচেতন নয় মন্তব্য করে ডিএনসিসির মেয়র আতিক বলেন, “জরিমানা করলে সচেতনতা বাড়বে। সিটি করপোরেশন থেকে খালের আশপাশে অনেক ক্যামেরা বসানো হয়েছে, খালে ময়লা ফেললে সেগুলো থেকে ফুটেজ পাওয়া যাবে।”
তিনি বলেন, “আমরা দেখছি অনেকে অসচেতনভাবে গৃহস্থালির বর্জ্য খাল, ডোবা, নালা, ড্রেনে ফেলে দেয়। পরিত্যক্ত লেপ, তোষক, সোফা, লাগেজ, খাট, কেবল, টায়ার, কমোড, ফুলের টব, রিকশার অংশবিশেষ, টেবিল, চেয়ার, বেসিন, ব্যাগ, প্লাস্টিকের বিভিন্ন পাত্রসহ নানা পরিত্যক্ত পণ্য ফেলা হয়। এগুলোর কারণেই মূলত পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।”
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যদিকে যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য পশ্চিমাদের দিকে আঙুল তুলে তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন আমাদের মাথাব্যথা। অথচ উন্নত বিশ্বের মাত্র ছয়টি দেশ ৬০ শতাংশ গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী। আজকে আইলা, রিমাল সবকিছুর ভুক্তভোগী হচ্ছি আমরা।
“তাপমাত্রা যত বাড়বে, ততই বাড়বে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অথচ তারা যুদ্ধের জন্য যে পরিমাণ ব্যয় করছে, তার ১০ শতাংশ পেলেও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই না।”
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা বিষয়ে গবেষণা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ডিএনসিসির আগামী বাজেটে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার ঘোষণা দেন মেয়র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, “এবার রেমাল ঘূর্ণিঝড়ের ভিন্নরূপ দেখলাম, দীর্ঘসময় ধরেই বৃষ্টি ছিল। এর মূল কারণ বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা, এটা জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে হয়েছে।
“জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়, ডেঙ্গু, নগর অঞ্চলে তাপ অনুভব বেশি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ে সরাসরি উৎপাদনে। তাপমাত্রা বাড়লে মানুষের শক্তি কমে, মনোযোগ বিঘ্ন ঘটে। ফলে শিল্পের উৎপাদন কমে যায়।”
ঢাকার বায়ু মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মাকসুদ কামাল বলেন, “করোনার আগে এবং করোনার সময় লকডাউনে ঢাকার বাতাসে কার্বন, নাইট্রোজেন কত, তা আমরা দেখেছি। দুই সময়ে বায়ুর খুব পরিবর্তন হয়নি। কারণ এখানে দূষণ এত বেশি যে প্রতিদিনের স্বাভাবিক কার্যক্রম লকডাউনে বন্ধ থাকার পরও কয়েক মাসে দূষণ কমেনি।
“এলডিসি থেকে উত্তরণ শুধু মাথাপিছু আয় নয়; সেখানে শহরের অবস্থা, বায়ুর অবস্থা, মানুষের স্বাস্থ্যের অবস্থা কী, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত। সেদিকে নজর দিতে হবে।”
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন হ্যাবিট্যাট ফর হিউম্যানিটি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর ন্যাশনাল ডিরেক্টর জেমস্ স্যামুয়েল, গ্লোবাল ওয়ান বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ম্যানেজার রায়হান মাহমুদ কাদেরী, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনিষ কুমার আগারওয়াল ও ব্র্যাকের কান্ট্রি ডিরেক্টর লিয়াকত আলী।