কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি অনেকের ছবির তোলার আবদারও মেটান তিনি।
Published : 31 Mar 2025, 08:13 PM
দেশের শান্তির জন্য ঈদের মর্মবাণী ধারণ করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। আহ্বান করেছেন, পরস্পরের দূরত্ব থেকে সরে এসে দেশের শান্তি কামনার।
সোমবার রাজনীতিক, কূটনীতিকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে রোজার ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর দেওয়া বক্তবে এ কথা বলেন তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান বলেন, “ঈদের বাণীটাই হল নিজেদের মধ্যে সমঝোতা। অতীতকে পেছনে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাবার।”
তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের লনে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের আয়োজন করেন মুহাম্মদ ইউনূস। শুভেচ্ছা বিনিময়ে তার সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা।
মেয়ে দিনা আফরোজ ইউনুসকে সঙ্গে নিয়ে অতিথিদের কাছে গিয়ে একে একে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি অনেকের ছবির তোলার আবদারও মেটান তিনি।
শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর মঞ্চে এসে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন তিনি।
মঞ্চে ইউনূসের বাম দিকে ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
ঠিক ডান দিকে দুই সোফায় বসেন প্রধান উপদেষ্টার মেয়ে দিনা আফরোজ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
মুহাম্মদ ইউনূস অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌ বাহিনী প্রধান এডমিরাল মো. নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনের সঙ্গে কুশল বিনিয়ম করেন।
শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আজকে ঈদের দিন। আমরা সবাই একত্র হতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। আমার অবস্থা এমন, কারো সঙ্গে দেখা করা আমার বড় কঠিন বিষয়।
“কাজেই আজকে একসঙ্গে এত জনের সঙ্গে দেখা করার সৌভাগ্য পেয়ে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আমরা আজকে ঈদের মহাউৎসব আমরা পালন করছি।”
ঈদের মর্মবাণীর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “সমাজে এরকম যে একটা দিন আমরা স্থির করতে পেরেছি, আমাদের ধর্ম আমাদেরকে দিয়েছে, এটাই আমাদের জন্য একটা মস্ত বড় আশীর্বাদ।
“একটা দিন এবং সেটা যেমন তেমন দিন না; যেমন তেমনভাবে দেখা করলে হয় না, কোলাকুলি করতে হয়। এটাই ধর্মের বিধান। আমরা কোলাকুলি করি সবাইকে আপন করে নিই, আজকের দিনটা আপন করে নেওয়ার দিন।”
এমন বাণী মনে ধারণ করার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “যতরকম দূরত্ব ছিল, সেই দূরত্ব থেকে আমরা সরে আসতে পারি। এটাই সমাজের মঙ্গল; যেকোনো সমাজের মঙ্গল। সেই সমাজের মঙ্গল আমরা যেন আগ্রহ সহকারে নিজেদের মধ্যে আত্মস্থ করতে পারি।
“সেই জন্যই এবারের ঈদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঈদ। যাতে আমরা পরস্পরের কাছে আসি, পরস্পরের দূরত্ব থেকে আমরা সরে আসতে পারি, জাতিকে-সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি।”
জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “কারণ এই ঐক্যবদ্ধ হওয়াটা আমাদের জন্য, এই সময়টার জন্য বিশেষভাবে জরুরি। সেটা যেন আমরা অর্জন করতে পারি। আজকে এই মিলন মেলা, আমরা সেই বাণী আত্মস্থ করে সামনের পথে অগ্রসর হব।
“আমরা পরস্পরের প্রতি সহনশীল হব, শুধু সহনশীল নয় তার চাইতেও বেশি। আমরা পরস্পরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করব। এর মাধ্যমেই সমাজে শান্তি আসে। বাংলাদেশে শান্তি অত্যন্ত জরুরি।”
দেশের শান্তির বিষয়টি সবাইকে মনে রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিদিন মনে রাখি। আজকের দিনটা, আমরা প্রতিদিন স্মরণ করি। আমরা দেশের শান্তি চাই। যাতে মানুষ নিজ মনে নিজের আগ্রহে দিন চলতে পারে।
“কারোর ভয়ে ভীত হয়ে তাকে চলতে না হয়। আমরা সবাই সবার মঙ্গল কামনা করি। জাতি শান্তি চায়। এবং পৃথিবীর জন্য শান্তি চাই আমরা।“
কূটনৈতিকদের উদ্দেশে ইউনূস ইংরেজিতে বলেন, মানুষকে ঐকবদ্ধ করার বিষয়ে এতক্ষণ বাংলায় কথা বলছিলেন তিনি। যাতে আমরা সব ধরনের বিভেদ দূর করতে পারি।
বর্তমান সময়কে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি আশা করব, আপনারা আমাদের সহায়তা করবেন, যাতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমুখে এগিয়ে যেতে পারি।
“বাংলাদেশের আরও বেশি কিছু পাওয়ার অধিকার রাখে। বাংলাদেশের রয়েছে ভবিষ্যৎ, যেটার উন্মোচন করা হয়নি। আমরা সেই ভবিষ্যতকে নির্মাণ করতে চাই, আর সেখানেই ঐক্যবদ্ধ জাতির সূচনা হবে।”