এবার ১০ হাজারের মতো হজযাত্রী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে যাবেন না। যারা শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে যাবেন, তারা মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভের আওতায় পড়বেন।
Published : 21 Apr 2025, 05:04 PM
এ বছরও বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়া যাত্রীরা ‘মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভের’ অধীনে সেবা পাবেন বলে জানিয়েছেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ার।
সোমবার সৌদি আরবের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষে রাজধানীর লো মেরিডিয়েন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, যারা হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে হজে যাবেন, শুধু তারাই এই সুবিধা পাবেন।
সৌদি আরবের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালেহ বিন সাদ আল মুরাব্বা।
নূরুল আনোয়ার বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আজকে একটা দ্বিপক্ষীয় সভা ছিল। সভায় আমাদের দেশ থেকে যে হাজীরা যায়, তাদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যাতে করে তাদের গমণাগমণ সুগম হয় এবং তারা যাতে ঝামেলা ছাড়া যেতে পারে।”
২০২২ সালে একটি চুক্তির মাধ্যমে ‘মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ’ নামের উদ্যোগ নিয়েছিল সৌদি আরব। এর অধীনে দুটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের হজযাত্রীরা সুবিধা পায় বলে জানান পাসপোর্টের ডিজি।
তিনি বলেন, “একটি হল সৌদি আরবে হাজীরা পৌঁছার পরে সে দেশের বিমানবন্দরে যে ইমিগ্রেশন হয়, সেটা আসলে বাংলাদেশের বিমানবন্দর থেকে ত্যাগ করার আগেই সম্পন্ন হয়ে যায়।
“আরেকটি হল হাজীদের লাগেজ ব্যবস্থাপনা একটা স্মার্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে তারা হ্যান্ডেল করে। লাগেজ আমাদের এখানে হাজী ক্যাম্পে স্থানান্তর হয়, তারপরে লাগেজটা তারা হ্যান্ডেল করে হাজীদের গন্তব্যে। অর্থাৎ, তারা যে হোটেলে ওঠেন, সে হোটেলের লবিতে তারা পৌঁছে দেন।”
সৌদি ভিশন ২০৩০-এর অন্যতম কর্মসূচি ‘পিলগ্রিম এক্সপেরিয়েন্স প্রোগ্রাম’র অংশ হিসেবে মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ বাস্তবায়ন করছে সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এই উদ্যোগে বাংলাদেশ, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক ও আইভরি কোস্ট- এই ৭টি দেশের ১১টি বিমানবন্দরে ডেডিকেটেড লাউঞ্জ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভের লক্ষ্য সুবিধাভোগী দেশগুলো থেকে সৌদি আরবে হজযাত্রীদের জন্য উচ্চমানের পরিবহন পরিষেবা দেওয়া।
সোমবার সৌদি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেওয়া নূরুল আনোয়ার বলেন, “সকালে আমাদের শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টের যে লাউঞ্জ বা বোর্ডিং ব্রিজ ব্যবহার করেন হাজীরা যায়, সেই এলাকাটা তারা দেখতে গিয়েছেন। সেখান থেকে ফেরত এসে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
“এরপর মিটিংয়ে তারা হাজীদের রিলেটেড কিছু এজেন্ডা পাঠিয়েছিলেন। এই সেবাটা যেহেতু আমাদের তারা দেয়, সেজন্য সৌদি কিছু ওয়ার্কফোর্স এখানে থাকে। উনারা কবে নাগাদ আসবেন, কয়জন আসবেন, অবস্থানকালীন সময়ে তাদের কী কী ফ্যাসিলিটিজ আমাদের দিতে হবে, সেটা নিয়ে বিশদভাবে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। প্রতিবারের মতো হাজীরা সহজভাবে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে যাবেন বলে আমি আশা করি এবং সেখানে গিয়ে ঝামেলাবিহীন পোঁছাবে বলে আমি মনে করি।”
মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভের আওতায় সবাই সেবা পাবে কি না এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এবার হজে যাচ্ছেন ৮৭ হাজার ১০০ জন। এরমধ্যে হয়ত ১০ হাজারের মতো শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে যাবেন না। যারা শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে যাবেন, তারা মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভের আওতায় পড়বেন। অন্যান্য বিমানবন্দর থেকে যারা যাবেন, তারা এর আওতায় পড়বেন না।”
অনেক সময় হাজীরা তাদের একদম গন্তব্যে লাগেজটা পান না, এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে নূরুল আনোয়ার বলেন, “গতবছর ৮৫ হাজার হাজী গিয়েছেন, এর মধ্যে একশর কিছু বেশি লাগেজ নিয়ে সমস্যা হয়েছে। তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে, এটা তারা অবশ্যই খেয়াল রাখবে। আমাদের দিক থেকেও কিছু সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি। আমরাও সেটা দেখার চেষ্টা করব।”
সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অধিশাখার অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম বলেন, “লাগেজ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য আমরা দুটি প্রস্তাব দিয়েছি। আরএফআইডি ট্যাগ (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ট্যাগ) থাকবে, সেটা আমরা লাগেজের সাথে লাগিয়ে দিব। বিভিন্ন জায়গায় রিডার থাকবে, স্ক্যানার থাকবে, এটা সেসব জায়গা হয়ে যাবে। ফলে, কোনো লাগেজ হারালে বা অদলবদল হলে সেটা বোঝা যাবে; উদ্ধার করা সহজ হবে।”
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “সৌদি আরবে যেসব হজযাত্রীর বাড়িভাড়া নিয়ে জটিলতা ছিল, তাদের সবার বাড়িভাড়া সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ হাজারের মতো ভিসা অনুমোদন হয়েছে।
“এবারও বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন, বোর্ডিং এবং চেক ইন হজ ক্যাম্পে হবে এবং সৌদি আরবের প্রি-অ্যারাইভালটা হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে হবে।”