গতবারের ৭৫-৮০ হাজার টাকার গরু এবার ১ লাখের ঘরে চলে গেছে বলে ভাষ্য রায়ের বাগের ক্রেতা মারুফ হোসেনের।
Published : 16 Jun 2024, 01:08 AM
কোরবানির ঈদের একদিন আগে শনিবার রাজধানীর শনির আখড়া হাটে বেশি দেখা গেল মাঝারি আকারের গরু; ৬৫ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছিল সেগুলো।
মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা সবসময়ই বেশির কারণে বিক্রি দামকে খানিকটা বেশিই বলছিলেন এ হাটের ক্রেতারা। আবার একই আকারের গরুর গায়ের রঙের ভিন্নতার কারণেও রয়েছে দামের পার্থক্য।
হাটটির ইজারাদার ও বিক্রেতাদের ভাষ্য, শুক্রবার ক্রেতা সমাগম ছিল বেশি, বিক্রি হয়েছে কাঙ্ক্ষিতের চেয়ে কম। তবে শনিবার হাটে মাঝারি গরু বেশি হওয়ায় বিক্রিও বেড়েছে আগের দিনের চেয়ে।
ঢাকার এই হাটটি মূলত দনিয়া কলেজের পাশেই। যদিও তা পূর্ব-পশ্চিমে এক কিলোমিটার বেড়ে চলে গেছে বিভিন্ন অলি-গলিতেও। শনিবার এ হাটে ৬৫ হাজারের নিচে গরু বিক্রি হতে দেখা যায়নি। ৩ থেকে ৭ লাখ টাকার গরুও উঠেছে হাটে।
মানিকগঞ্জ থেকে আটটি গরু নিয়ে শনিবার এ হাটে আসেন মোহাম্মদ তারেক। সকালে এলেও বিকাল পর্যন্ত বিক্রি করেন দুটি গরু।
এর মধ্যে একটি গরুর দাম হাঁকেন তিনি ৭৫ হাজার। তবে দেখতে একটু দুর্বল হওয়ায় ৪৫ হাজার বলে দরদাম শুরু করেন ক্রেতা আলমগীর হোসেন।
সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার দিতে চাইলেও গরু ছাড়েননি বিক্রেতা; সবশেষ বিক্রি হয় ৬৫ হাজার টাকায়।
বিক্রেতা তারেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ছয় মাস আগে ৫২ হাজার টাকা দিয়ে গরুটি কেনা হয়েছিল। ভালো করে খাওয়াতে না পারায় সেভাবে বাড়েনি। কিন্তু শরীর দেখেই বুঝবেন, জাত ভালো।”
তারেকের ভাষ্য, “শনির আখড়ার হাটে এর চেয়ে কম দামের কোনো গরু নেই। গরুর আকার ঠিকই আছে। গোশত কম থাকায় দাম পাইলাম না। গৃহস্থ খাওয়াইতে গরুর শরীরডা আরো বলত (বৃদ্ধি পেত), তহন দাম হইত কমপক্ষে ৮০ হাজার।”
বেশি দামের আশায় তিন বছর বিরতি দিয়ে শনির আখাড়ার প্রধান সড়কের ফুটপাতে ছয়টি গরু আনেন কুমিল্লার বিল্লাল হোসেন।
দেশি গরুর চেয়ে সংকর জাতের গরু পালনে খরচ বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, “গরুর খাবারের দাম আগের চেয়ে বাড়তেই আছে। দেশি গরু (স্থানীয় জাত) মাঠে চড়িয়ে ঘাস খাওয়ানো যায়। হাইব্রিড গরু বাসায় রাইখা পালতে হয়। খাওন-দাওন সব রেডি করতে হয়। তাই খরচ বেশি লাগে।”
তার ছয়টি গরুর মধ্যে পাঁচটি গরু বিক্রি শেষে শনিবার বিকেল পর্যন্ত আরেকটি বিক্রির অপেক্ষায় ছিলেন। শেষ গরুটির দাম হাঁকছিলেন ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যদিও ক্রেতারা ৮০ থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছে জানান তিনি।
শনির আখড়ার হাটে শুক্রবার গরুর দরদাম করে ফিরে যান ক্রেতা মনির হোসেন। শনিবার একই হাটে একটি গরুর দাম করেন ৯৪ হাজার টাকা।
বিক্রেতা তাতে রাজি না হওয়ায় দুই ঘণ্টা ঘুরে ৯৬ হাজার টাকায় গরুটি নিয়ে যান মনির। হাটের ‘হাসলি ঘরে’ (খাজনা ঘর) দামের ওপর ৫ শতাংশ হারে দেন আরও ৪ হাজার ৮০০ টাকা।
ঢাকার দক্ষিণ অংশে ১০টি অস্থায়ী ও স্থায়ী একটি পশুর হাট ইজারা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ইজারা মূল্য হিসেবে পেয়েছে ৩১ কোটি ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
এর মধ্যে দনিয়া-শনির আখড়া পশুর হাঁট ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকায় ইজারা নেন ৬২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
হাটের ৪ নম্বর হাসলি ঘরের দায়িত্বে থাকা মহিউদ্দিন টিপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাইলকা (শুক্রবার) হাটে গরুর চেয়ে খরিদ্দার বেশি ছিল। দরদাম করে অনেকেই কিনে নাই। বিক্রি মোটামুটি ভালোই ছিল। আজ (শনিবার) তার চেয়ে ৩০-৪০ পার্সেন্ট বেশি কাটতে হচ্ছে হাসলি রসিদ।’’
হাটের চারপাশে ইজারাদারের কর্মী রয়েছে। গরু নিয়ে যাওয়ার সময়ে তারা হাসলি রসিদ যাচাই করেন।
যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকার মারুফ হোসেন এ হাটে শুক্রবার আসলেও গরু না কিনে ফিরে যান। পরদিন মাঝারি আকারের একটি গরু কেনেন ৯৩ হাজার টাকায়।
হাসিল পরিশোধ শেষে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতবারের চেয়ে দাম মোটামুটি বেশি। মাঝারি আকারের মধ্যে একটু ভালো গরু কিনতে ১ লাখ বা তার চেয়ে ৫-১০ হাজারা টাকা বেশি লাগবে।”
নিজের কালো রঙের গরুটি দেখিয়ে মারুফ বলেন, “এই সাইজের লাল গরু কিনতে আরও ১৫ হাজার টাকার মত বেশি লাগত।”
তার ভাষ্য, “গতবার এই আকারের গরু বিক্রি হয়েছে থেকে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায়।”
স্থানীয় জাতের একটি ধূসর রঙের গরু ৮০ হাজার টাকায় কেনেন বশিরউদ্দিন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশি জাত, দেখতে একটু ছোট মনে হবেই। তবে জাত ভালো, দামও মোটামুটি হাতের নাগালে হওয়ায় কিনলাম।”
সংকর জাতের মাঝারি আকৃতির মধ্যে দৈহিক গঠনে ভালো, লাল রঙের একটি গরু এ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়। শনিবার হাটে গিয়ে গরু বদলিয়ে নিয়েছেন যাত্রাবাড়ীর কাজলার সাইফুর রহমান।
তিনি বলেন, “রাতে গরু কিনেছি। সকালে ছোট ভাই প্রথম সমস্যাটি দেখতে পায়। হাটে গিয়ে লাল রঙের আরেকটি গরু কিনে নেই সেই বিক্রেতার কাছ থেকে। আগের গরুটি দিয়ে বাড়তি ৮ হাজার টাকাও দিতে হল।”
হাটের কাজলা সড়ক পয়েন্টে প্রবেশ মুখেই পছন্দসই গরু খুঁজে পান শাহাদাত হোসেন। অল্প সময়ের মধ্যেই সেটি কিনে ফেলেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শনিবার সকালে গরু কিনতে পাঁচ মিনিট সময় লেগেছে। দেখে পছন্দ হওয়ায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা কিনে নিলাম। সময়ও বাঁচল, হাঁটেও এত ঘোরাঘুরি করা লাগল না।”