হামলার ঘটনায় দ্রুত বিচারের পাশাপাশি আহত শিক্ষার্থীদের যথাযথ চিকিৎসার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
Published : 17 Jan 2025, 07:53 PM
পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত চিত্রকর্ম বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে রাস্তায় নামা আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সচিবালয়ে যাওয়ার পথে জলকামান ও লাঠিপেটার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ ঘটনার দ্রুত বিচারের পাশাপাশি আহত শিক্ষার্থীদের যথাযথ চিকিৎসার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
হামলাকারীদের জবাবদিহিতর আওতায় আনার দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, “কমিশন বিশ্বাস করে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি ‘দায়মুক্তির সংস্কৃতির অংশ’। এর ফলে দেশে কট্টর মৌলবাদীদের উত্থান ঘটছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করেছ বলেছে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে এর পরিণতি আদিবাসীদের ক্ষতির সীমাকে ছাড়িয়ে যাবে।
“এই অপশক্তি দেশের সরকার ও সার্বজনীন বাংলাদেশের লক্ষ্যকেও অস্থিতিশীল করে তুলবে। ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ নামের সংগঠনের ব্যানারে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামরা চালানো এই অপশক্তি গত ২৫ অগাস্ট জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের সময়ও প্রতিবাদ করেছে। প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করেন। ওই কথাকে তারা ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ক্ষমা প্রার্থনা অথবা তার পদত্যাগ দাবি করেন।”
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত একটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। সেখানে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় লেখা ছিল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী; পাশে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ ব্যানারে গত ১২ জানুয়ারি এনসিটিবি ঘেরাও করার পর রাতে ওই বইয়ের অনলাইন সংস্করণ থেকে চিত্রকর্মটি সরিয়ে ফেলা হয়।
এর প্রতিবাদে বুধবার বেলা ১১টায় পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতা’ নামে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। পরে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ও একইসময়ে পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাও করার ঘোষণা দেয়। সেখানে কর্মসূচি চলাকালে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করা হয়।
আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে। ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতার’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে গেলে শিক্ষাভবনের সামনে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। শিক্ষার্থীরা বাধা উপক্ষো করে এগোতে গেলে তাদের ওপর জলকামান ও লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন বিবৃতিতে বলেছে, “স্বাধীনতার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। এবারই প্রথম রাজধানীতে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মর্মান্তিক হামলার শিকার হলেন।”
আরও বলা হয়, “যাহোক হামলার ঘটনার পর প্রধান উপদেষ্টা সমালোচনা ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন সেটিকে স্বাগত জানায়। সরকারকে আমরা এ ব্যাপারে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই।”
আরও পড়ুন-
বইয়ে 'আদিবাসী চিত্রকর্ম': হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২
আদিবাসীদের ওপর হামলায় গ্রেপ্তার দুজনের মাথায় ‘আঘাতের চিহ্ন নেই’: পুলিশ
বইয়ে 'আদিবাসী চিত্রকর্ম': পক্ষের লোকজনকে পেটাল বিরোধীরা
পাঠ্যবই থেকে 'আদিবাসী চিত্রকর্ম' বাতিলের প্রতিবাদ চিত্রকর্মেই