শহীদ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার জীবন ও কর্ম নিয়ে বানানো ‘জ্যোতির্ময় (দ্য প্রফেসর)’ প্রামাণ্যচিত্রের প্রিমিয়ার শোতে কথা বলছিলেন এই ইমেরিটাস অধ্যাপক।
Published : 13 Dec 2023, 11:42 PM
ইতিহাস ও সাহিত্য চর্চা মানুষের জন্য অপরিহার্য হলেও সেই চর্চা এখন কমে গেছে বলে মনে করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
বিষয়টিকে ‘দুঃখজনক ও ক্ষতিকর’ মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, “দুঃখজনক এজন্য যে, আমরা স্মৃতিকে শক্তিতে পরিণত করতে পারছি না। এ ধরনের প্রামাণ্যচিত্র ['জ্যোতির্ময় (দ্য প্রফেসর)'] নির্মাণের মধ্য দিয়ে আমদের স্মৃতিকে শক্তিতে পরিণত করার চর্চা করতে হবে।”
বুধবার ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে স্মরণ করে একথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইমেরিটাস অধ্যাপক।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে বিকাল সাড়ে ৫টায় প্রিমিয়ার শো হয় 'জ্যোতির্ময় (দ্য প্রফেসর)’ প্রামাণ্যচিত্রের।
জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার জীবন ও কর্ম নিয়ে ৭২ মিনিটের এ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্রকার সন্দীপ কুমার মিস্ত্রী।
প্রামাণ্যচিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে উপস্থিত হয়ে জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বর্তমান প্রজন্মের ইতিহাস চর্চার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেন সিরাজুল ইসলাম।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের অংশ। এই শহীদদের আমরা ভুলে যেতে চাচ্ছি। যদি শহীদদের ভুলে যাই, আমরা দুর্বল হব তাই নয়, কৃতঘ্ন হব। সেই কাজটা ঘটছে। আমরা ক্রমাগত ওই স্মৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। তার একটা বড় কারণ হচ্ছে, আমরা ইতিহাস চর্চা করছি না। ইতিহাস ও সাহিত্য চর্চা সব মানুষের জন্য অপরিহার্য।”
বাঙালির দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রামের জন্য সংগ্রহশালার প্রয়োজনীতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে যখনই আসি, আমার তখন মনে হয়, এটা অনেক বড় একটা কাজ। সেই সাথে এটাও মনে হয়, কেবল ৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ নয় বরং বাঙালির যে দীর্ঘ মুক্তির সংগ্রাম, তার জন্য এমন একটি সংগ্রহশালা দরকার।”
জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ইতিহাসবিদ সিরাজুল ইসলাম।
তার কথায়, “আমি যে শিক্ষকতায় এসেছি, তার অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন এই জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে থেকে উনাকে চিনতাম। তিনি 'মুক্তি' নামে একটা পত্রিকা বের করতেন। এ পত্রিকা নিয়ে কৌতূহল থেকেই আমি প্রথম উনার নাম জানি।
“আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সাথে এই অধ্যাপক জড়িয়ে আছেন। তিনি আগাগোড়া একজন অধ্যাপক ছিলেন।”
প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনীতে জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার মেয়ে মেঘনা গুহঠাকুরতা, ভাইয়ের মেয়ে কৃষ্ণা দত্ত ও চলচ্চিত্রকার তানভীর মোকাম্মেল উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারী শহীদ হয়েছিলেন তাদেরই একজন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ও জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা।
২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী 'অপারেশন সার্চলাইট' এর নামে ঢাকা শহরে যে গণহত্যা চালায় তার নির্মম শিকার হন এই শিক্ষক। তার জীবন ও কর্ম নিয়েই নির্মাণ করা হয়েছে 'জ্যোতির্ময় (দ্য প্রফেসর)’।
তার মেয়ে মেঘনা গুহঠাকুরতা বলেন, “এই সিনেমার ব্যাপারে আমার বন্ধু তানভীর মোকাম্মেলের সাথে কথা বলি। তানভীর সন্দীপের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে যখন জানলাম সন্দীপ জগন্নাথ হলের ছাত্র ছিল। তখন মনে হয়েছে সে ভালো করতে পারবে।"
প্রামাণ্যচিত্রটি গবেষণা ও প্রযোজনা করেছেন মেঘনা গুহঠাকুরতা। তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ছিলেন চলচ্চিত্রকার তানভীর মোকাম্মেল।
প্রামাণ্যচিত্রটি প্রসঙ্গে পরিচালক সন্দীপ কুমার মিস্ত্রী বলেন, “শুরুর আগে দুটি প্রশ্ন সামনে রেখে এগিয়েছিলাম যে, ২৫শে মার্চ রাতে অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার হত্যাকাণ্ডটি কি শুধুই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের সাধারণ হত্যাকাণ্ড? আর কেমনই বা ছিলেন নিভৃতচারী এই মানুষটি?
“প্রামাণ্যচিত্রটি শেষ করার পরে আমার মনে হয়েছে আমরা অনেক কমই জানি এই মানুষটি সম্পর্কে। একজন আদর্শ শিক্ষক, একজন ভালো বাবা, একজন মানবতাবাদী রাজনীতি সচেতন দেশপ্রেমিক, সর্বোপরি একজন বুদ্ধিজীবী মানুষ, যাকে আমরা হারিয়েছি একাত্তরে; এ প্রামাণ্যচিত্রটির মাধ্যমে দর্শক কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারবেন ব্যক্তি জ্যোতির্ময়কে।”