চার মহাসড়কের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫৫ কোটি ৩৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা টোল আদায়ে হয়েছে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে।
Published : 27 Jun 2024, 07:59 PM
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতায় টোল আদায় করা হয় এমন মহাসড়কের সংখ্যা চারটি, যেখান থেকে বিদায়ী অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে টোল আদায় হয়েছে ১৮৪ কোটি ৩৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা।
কুমিল্লা-৮ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে সংসদকে এ তথ্য জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
ওবায়দুল কাদেরের তথ্য অনুযায়ী, চার মহাসড়কের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টোল আদায়ে হয়েছে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে (ধলেশ্বরী ও ভাঙ্গা অংশ), যার পরিমাণ ১৫৫ কোটি ৩৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
এরপর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের রুস্তমপুর টোল প্লাজায় ১৫ কোটি ২৩ লাখ ৮৮ হাজার, নাটোরের হাটিকুমরুল-বনপাড়া সড়কে ১১ কোটি ৪৫ হাজার এবং চট্টগ্রামের পোর্ট এক্সেস রোডে ২ কোটি ৭৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা টোল আদায় হয়েছে।
নোয়াখালী-৩ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সেতু বিভাগের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আওতায় তিনটি সেতু থেকে টোল আদায় করা হয়। সেতু তিনটি হল যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু, ধলেশ্বরী নদীর ওপর মুক্তারপুর সেতু এবং পদ্মা সেতু। চলতি অর্থবছরের ১৯ জুন পর্যন্ত এ তিন সেতু থেকে ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা টোল আদায় হয়েছে।
মামুনুর রশীদের আরেক প্রশ্নে সড়ক মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তায় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৪ হাজার ৯৮০ কোটি ১৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা, এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক দেবে ৩ হাজার ৭৫৯ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
১০ বছরে পাট রপ্তানি থেকে আয় ১০ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা: নানক
সরকার দলীয় সংসদ সদস্যা মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ২০১২-১৩ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে পাট রপ্তানি করে দেশের ১০ হাজার ৪৫৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা আয় হয়েছে।
পাটমন্ত্রী নানক বলেন, ১০ বছরে ১৩৫টি দেশে ১৯ দশমিক ৭ লাখ মেট্রিক টন কাঁচাপাট বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি গন্তব্য ছিল- ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, সিঙ্গাপুর, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, জিবুতি, ভিয়েতনাম, অস্ট্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, জার্মানি, মেক্সিকো, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, জাপান, কোরিয়া, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, বেলজিয়াম, তিউনিশিয়া, কেনিয়া ও উগান্ডা।
ঢাকা-৮ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নে পাটমন্ত্রী বলেন, উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ১২ লাখ ৯ হাজার ২৬ মেট্রিক টন কাঁচা পাট এবং দুই হাজার ১৬৪ দশমিক ১২১ মেট্রিক টন পাটবীজ উৎপাদন করা হয়েছে।
তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামালের ঘাটতির বিষয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সাদ্দাম হোসেন পাভেল সরকারের অবস্থান জানতে চান বস্ত্র মন্ত্রীর কাছে।
জবাবে নানক বলেন, বর্তমানে দেশের স্থানীয় বাজারে বস্ত্রের চাহিদার পরিমাণ প্রায় সাত বিলিয়ন মিটার। দেশের স্থানীয় বাজারে বস্ত্রের চাহিদার ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুযায়ী পুরোটাই দেশে উৎপাদিত হয়। তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ওভেন এবং ডেনিম বস্ত্রের চাহিদা প্রায় আট বিলিয়ন মিটার। এর মধ্যে প্রায় চার বিলিয়ন মিটার দেশে উৎপাদিত হয় এবং প্রায় চার বিলিয়ন মিটার আমদানি করা হয়।
“তবে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে নিট সুতার চাহিদা প্রায় ১৬ লাখ টন। তা মধ্যে প্রায় ১২ লাখ টন সুতা দেশে উৎপাদিত হয় এবং প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন ঘাটতি রয়েছে, যা আমদানি করা হয়।
“শিল্প উদ্যোক্তারা দেশে নতুন নতুন বস্ত্র ও সুতা উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করছেন। ফলে তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য ওভেন ও ডেনিম বস্ত্রের ঘাটতি ক্রমান্বয়ে কমে আসবে।”
বন্ধ থাকা জুট মিলের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে- স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথের এমন প্রশ্নে পাটমন্ত্রী বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে বিজেএমসির ২৫টি মিলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। ২০টি মিল ইজারার ভিত্তিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু করার সরকারি সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ১৪টির লিজ চুক্তি হয়েছে, যার মধ্যে সাতটি মিল এরই মধ্যে পাটজাত পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যার মধ্যে কিছু কিছু মিল তাদের উৎপাদিত পাটজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করেছে।
সব মিটারগেজ লাইন হবে ডুয়েলগেজ: রেল মন্ত্রী
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রশ্নের জবাবে রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেন, দেশে তিন হাজার ৯৩ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে এক হাজার ৬৭৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার মিটারগেজ এবং ৭৯ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ এবং ৫৩৩ দশমিক ৭০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিকল্পনা ২০১৬ সাল থেকে ২০৪৫ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়ন হবে। এতে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হওয়ার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে রেললাইন একই গেজে (ইউনিগেজ) রূপান্তরের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
“এ কার্যক্রমের আওতায় প্রাথমিক পর্যায়ে সব মিটারগেজ লাইন ডুয়েলগেজ লাইনে রূপান্তর করা হবে এবং পরবর্তীতে ব্রডগেজে রূপান্তর করা হবে। মাস্টার প্ল্যানে এ বিষয়ে ১৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা ২০৪৫ সালের মধ্যে পর্যাপ্ত অর্থায়ন প্রাপ্তি সাপেক্ষে সম্পন্ন করা বলে আশা করা যায়।”