“দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে বাংলাদেশে স্পেশাল ইকোনমিক জোনে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনসহ নানামুখী বিনিয়োগে এবং আইটি পার্কগুলোতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ব্রাজিলিয়ানদের বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে,” বলেন হাছান মাহমুদ।
Published : 07 Apr 2024, 10:11 PM
ব্রিকস জোটে বাংলাদেশের সদস্যপদের বিষয়টি জোরালোভাবে বিবেচনার কথা বলেছেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা।
রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন তিনি।
সফররত ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সম্প্রসারণ করার পর ব্রিকস দেশগুলোর প্রথম সভায় আমরা দেশগুলোর সদস্যপদের বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব।
“বাংলাদেশ আমাদের খুব কাছের দেশ। আমরা আমাদের নীতি, আমাদের অবস্থান তুলে ধরব। আমাদের দিক থেকে এটাকে খুব জোরালোভাবে এবং খুবই ইতিবাচকভাবে বিবেচনার করব।”
বিশ্ব অর্থনীতির পঞ্চমাংশের নিয়ন্ত্রণকারী পাঁচ দেশের জোট ব্রিকসের সদস্য ছিল ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
গত বছরের অগাস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে এই জোটকে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হয়। তাতে সৌদি আরব, ইরান, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইথিওপিয়া ও আর্জেন্টিনা জোটের সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ পায়।
ব্রিকস দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্যপদ ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নিয়েছে। কিন্তু গত বছর জোটের সদস্য হওয়ার আবেদনে সাড়া পাওয়া যায়নি।
দুইদিনের সফরে রোববার সকালে ঢাকায় পৌঁছেছেন ব্রিকসের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য দেশ ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিয়েরা।
লাতিন আমেরিকায় আয়তনে সবচেয়ে বড় এবং অর্থনীতির শীর্ষ দেশ ব্রাজিল বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর জি-২০ জোটের সভাপতি।
দুদেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে হওয়া এই সফরে একদল ব্যবসায়ীকেও সঙ্গে এনেছেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিন রাজধানীর একটি হোটেলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে বৈঠক করেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
লাতিন আমেরিকার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ব্রাজিলের তৈরি পোশাক, ওষুধসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ তৈরির কথা বলছে সরকার।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন মাউরো ভিয়েরা। বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার আইনি পথরেখার তৈরির বিষয়ে ‘কারিগরি সহযোগিতা চুক্তিতে’ সই করেন তারা।
এরপর যৌথ ব্রিফিংয়ে এসে বৈঠকে আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন হাছান মাহমুদ এবং মাউরো ভিয়েরা।
ব্রাজিলের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দুই বৈঠকে চেয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন পথ ও নতুন খাতগুলোকে কীভাবে কাজে লাগিয়ে ভারসাম্য আনা যায়, সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
“ব্রাজিলে বাংলাদেশের কিছু পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কর পদ্ধতির বিষয়ে প্রশ্নের ব্যাখ্যা আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে করেছি। যেগুলো নির্দিষ্ট সময়ে পর্যালোচনা করা হয়। এটা পর্যালোচনার পথরেখা ও এই সম্পর্কের উন্নতির বিষয় আমরা আলোচনা করেছি।”
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, “আমাদের উন্নয়ন সহযোগিতা সম্ভাবনাময় এবং এটি সাউথ-সাউথ কোঅপারেশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আজকে আমরা যে কারিগরি সহযোগিতা চুক্তি সই করেছি, সেটি এই সহযোগিতার আইনি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছে।”
প্রাণীসম্পদ, ডেইরি ও গরুর ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা বাস্তবায়ন বিষয়ক প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।
দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ২০২৩ সালে ২৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে জানিয়ে একে ‘সম্ভাবনাময়’ অভিহিত করেন মাউরো ভিয়েরা।
তিনি বলেন, লাতিন আমেরিকায় ব্রাজিল বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রাজিলের দ্বিতীয় বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ।”
২০১৪ সাল থেকে ব্রাজিল ও বাংলাদেশের বাণিজ্য তিনগুণ বাড়ার কথা তুলে ধরেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাণিজ্যকে বাড়াতে দুদেশের ব্যবসায়ীদের যোগাযোগের সুযোগ তৈরির কথাও বলেন তিনি।
জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী
চলতি বছরের জুলাইতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রাজিল সফর হওয়ার সম্ভাবনার কথা ব্রিফিংয়ে বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্ভাব্য ব্রাজিল সফর নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রাজিল সফরের একটি আমন্ত্রণ প্রেসিডেন্ট লুলার পক্ষ থেকে রয়েছে। আগামী জুলাইতে প্রধানমন্ত্রীর ব্রাজিল সফর হতে পারে।”
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, “এই প্রথম ব্রাজিলের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন। আমাদের মধ্যে খুব সফল আলোচনা হয়েছে। ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত তুলা দিয়ে তৈরি পোশাক ব্রাজিলে রপ্তানির ক্ষেত্রে কর মওকুফ ও অন্য পোশাক রপ্তানিতে কর হ্রাসের অনুরোধ জানিয়েছি।
“দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে বাংলাদেশে স্পেশাল ইকোনমিক জোনে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনসহ নানামুখী বিনিয়োগে এবং আইটি পার্কগুলোতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ব্রাজিলিয়ানদের বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে।”
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পর মন্ত্রী ভিয়েরা গাজীপুরে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াাল পার্ক পরিদর্শন ও বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জি-২০ এর বর্তমান সভাপতি হিসেবে ব্রাজিলের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলোর ওপর বক্তব্য দেয়ার কথা রয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সম্মানে এফবিসিসিআই ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করেছে। সেখানে অংশ নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করবেন মাউরো ভিয়েরা।