বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কক্ষের সামনে পুলিশ মোতায়েন করতে দেখা যায়।
Published : 11 Sep 2024, 07:11 PM
দুই দিনের মধ্যে ৫৯ জেলায় নতুন ডিসি দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে আমলাদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষের জের বুধবারও দেখা গেছে সচিবালয়ে; কয়েক ঘণ্টা ধরে হট্টগোলের পর বিকালে এসে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কক্ষে তালা মারার প্রস্তুতি নিতেও দেখা যায়।
নিজেদের বঞ্চিত দাবি করা বিক্ষুব্ধ এই আমলারা ৫৯ জন নতুন ডিসির প্রজ্ঞাপন বাতিল করে যোগ্যদের তালিকা করে নতুন প্রজ্ঞাপন দেওয়ার দাবিতে সচিবালয়ে তৎপর রয়েছেন।
বুধবার সকাল থেকে ৩০-৪০ জন উপসচিব মর্যাদার কর্মকর্তা জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিভাগের বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করে প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে চাপ দেন।
গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের প্রশাসনে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ক্ষমতার পালাবাদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনে দেখা যায় পদত্যাগ, বাধ্যতামূলক অবসর, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল, পদোন্নতী, ভূতপূর্ব পদোন্নতী এবং রদবদলের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ।
সেই ধারায় যুক্ত হয় মাঠ প্রশাসনে পদোন্নতী ও রদবদল। জেলা প্রশাসক ও ইউএনও পর্যায়ে বদলি, পদোন্নতী ও পরিবর্তন অব্যাহত রয়েছে।
সর্বশেষ মাঠ প্রশাসনে বড় পরিবর্তন ৫৯ জেলায় নতুন ডিসি দেওয়ার ঘটনা, যা নিয়ে একাংশের আমলাদের মধ্যে ক্ষোভ কাজ করছে, যারা বুধবারও দিনভর সক্রিয় ছিলেন।
এ দিন বিকালে বিক্ষুব্ধ আমলাদের জনপ্রশাসন বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (নিয়োগ পদন্নতি ও প্রেষণ) কক্ষে তালা লাগানোর প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। অবশ্য পরে তালা না দিয়ে যাতে এই কর্মকর্তা কক্ষ থেকে বের হতে না পারেন, সে জন্য কক্ষের সামনে তাদের পাহারা বসাতে দেখা যায়।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিক্ষে বিক্ষুব্ধ উপ-সচিবরা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন।
এদিকে বিক্ষোভের মধ্যে দুপুরের পর পর জেলা প্রশাসকপ্রত্যাশী উপসচিবদের সমন্বয়ক নূরুল করিম ভূইয়া সাংবাদিকদের বলেন, "আমাদের দাবি- প্রশাসনের সর্বস্তরে বিগত দিনে যারা সুবিধাভোগী; যারা এই ছাত্র-জনতা হত্যার সঙ্গে জড়িত; খুন লুটপাট ও রাষ্ট্র সংস্কারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল; যারা এখনও পর্যন্ত ছাত্র জনতার এই বিপ্লবের মূল আকাঙ্ক্ষা ও চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করছে; সেসব কর্মকর্তাকে বিদায় দিতে হবে। এটা আমাদের প্রধান দাবি।
"৫৯ জনকে যে ডিসি করা হল, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ রয়েছে, আপত্তি রয়েছে। যেহেতু বিগত সরকারের সময়ে এই কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে সুবিধা নিয়েছেন এবং আশীর্বাদপুষ্ট হয়েছেন; তারা যে খুন-হত্যা ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত, সে তথ্য আপনারা মিডিয়ার মাধ্যমেই দিয়েছেন।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে কথা হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নূরুল করিম বলেন, “যেহেতু এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া, সেহেতু যত দ্রুত সম্ভব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে এ দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হবে বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
“আমাদের আজ যেসব কর্মকর্তা সেখানে গিয়েছিল তাদের সকলেই মেধাবী, যোগ্য ও সৎ। যেহেতু কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল মেধাবীরা নিয়োগ পাক, সেহেতু আমরাও চাই মেধাবী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হোক।”
সোমবার ২৫ ও মঙ্গলবার ৩৪ জন; দুই দিনেই নতুন করে ৫৯ জন জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর মধ্যে মঙ্গলবার নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে আটজনকে এক দিনের মাথায় প্রত্যাহার করে নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে চারজনের কর্মস্থল বদলে দেওয়া হয়েছে।
মাঠ প্রশাসনে রদবদলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষোভের মধ্যে বুধবার এই সিদ্ধান্ত জানায় অন্তর্বর্তী সরকার।
আট জেলায় নতুন ডিসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা প্রসঙ্গে প্রসঙ্গে নূরুল করিমের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, "নিশ্চয়ই আপনারা নতুন কোনো সিদ্ধান্ত পাবেন। আমাদের দাবি ছিল, আজ বিকাল ৫টার মধ্যে তারা যেন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন। তিনি আমাদের বলেছেন যতদ্রুত সম্ভব তিনি এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে কথা বলবেন, আমাদের ইমোশনের কথা তাকে জানাবেন।"
বিকাল ৫টার মধ্যে সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হওয়ায় এখন তারা কী করবেন- এমন প্রশ্নে বিক্ষুব্ধ উপসচিবদের মধ্যে একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমাদের দাবি হচ্ছে প্রজ্ঞাপন বাতিল করা, সেটা করতেই হবে। আগের প্রজ্ঞাপনের কয়েকজনকে রাখতে হলে সেটা নতুন প্রজ্ঞাপনে রাখবেন। আমরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এখানে আছি।"
বিকালে ডিসিপ্রত্যাশীদের বেশিরভাগই দাবি আদায়ে কড়া পদক্ষেপ হিসেবে জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিভিন্ন কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পক্ষে কথা বলছিলেন।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কক্ষের সামনে পুলিশ মোতায়েন করতে দেখা যায়।
সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সচিবালয়ে বিক্ষুব্ধ উপসচিবরা অবস্থান করছিলেন। তাদের ভাষ্য ছিল- দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখান থেকে যাবেন না