“কাজ শুরুর পর বেতন অল্প হওয়ায় এবং দোকানের কাজকর্ম নিয়ে রফিকুলের সাথে রুমনের বেশ কয়েকবার ঝগড়া বাধে।“
Published : 02 Oct 2024, 04:11 PM
রাজধানীর গুলশানে জোড়া খুনের ঘটনায় দোকানের কর্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব বলছে, বেতন নিয়ে মালিক ও কর্মচারীর ‘মনোমালিন্য’ এই হত্যাকাণ্ডের কারণ।
দোকান মালিককে খুন করার দৃশ্য দেখে ফেলার কারণে আরেক কর্মচারীকেও খুন করা হয় বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।
জোড়া খুনের ঘটনায় দোকান কর্মচারী মো. রুমনকে চট্টগ্রাম থেকে আটকের পর বুধবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব।
এ বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস বলেন, “রুমন তার অপরাধ স্বীকার করেছেন এবং এই হত্যাকাণ্ডের সাথে আরও দুইজন জড়িত আছে।“
গুলশানের ১০৮ নম্বর সড়কের ২১ নম্বর ফাঁকা প্লট থেকে গত শনিবার রফিকুল ইসলাম (৬০) এবং তার দোকানের সহকারী সাব্বির হোসেনের (১৫) ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
রফিকুল ওই প্লটের কেয়ারটেকার ছিলেন, তিনি সেখানে একটি চা-বিস্কুটের দোকানও চালাতেন। রফিকুল ও সাব্বির ওই খালি প্লটের ওই দোকানেই থাকতেন।
২৭ বছর বয়সী রুমন ছিলেন রফিকুলের দোকানের কর্মচারী। হত্যাকাণ্ডের মাত্র চার-পাঁচ দিন আগে রুমনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন রফিকুল।
রুমনের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। আগে গ্রামের বাড়িতে কৃষি কাজের পাশাপাশি ইট ভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। বছর দুয়েক আগে ঢাকায় এসে উত্তরায় একটি দোকানে কাজ নেন এই তরুণ।
রফিকুলের ছেলে বাপ্পী ইসলামের বরাতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস সংবাদ সম্মেলনে বলেন গত ২৬ সেপ্টেম্বর রফিকুল দোকান বন্ধ করেছিলেন রাত ৮টার দিকে, তখনও বাপ্পীর সঙ্গে তার মোবাইলে কথা হয়।
এরপর পর ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে রফিকুলের মোবাইল বন্ধ পায় তার পরিবারের সদস্যরা। ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল সাড়ে ৮টাযর দিকে পরিবারের সদস্যরা এসে রফিকুলের ঘরের দরজার তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে বিছানার চাদর দিয়ে ঢাকা রক্তাক্ত দুটি দেহ দেখতে পায়।
র্যাব কর্মকর্তা ফেরদৌস বলেন, “গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুমন বলেছেন, গত একমাস ধরে রফিকুলের দোকানে সাব্বির কাজ করছিল। সাব্বির চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে এই খবর পেয়ে পরিচিত একজনের মাধ্যমে থাকাখাওয়াসহ ৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেয় রুমন।
“কাজ শুরুর পর বেতন অল্প হওয়ায় এবং দোকানের কাজকর্ম নিয়ে রফিকুলের সাথে রুমনের বেশ কয়েকবার ঝগড়া বাধে। রফিকুলকে উচিত শিক্ষা দিতে দোকানের মূল্যবান মালামাল ও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে সে।”
লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস বলেন, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে দোকান বন্ধ করে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে প্লটের ওই ঘরেই সাব্বির ও রুমনকে নিয়ে রফিকুল ঘুমাতে যান।
“পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রাত আনুমানিক ২টার দিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রথমে ভিকটিম রফিকুলের মাথায়, গলায় ও শরীরের আঘাত করে রুমন। এ সময় ঘুম থেকে জেগে উঠে সাব্বির ঘটনা দেখে ফেললে তাকেও মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে রাখেন রুমন।
“এরপর রুমন ওই বাসা থেকে নগদ টাকা, কফি মেশিনসহ দোকানের মূল্যবান মালামাল কয়েকটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখেন। সকাল ৭টার দিকে একটি ভাড়া পিকআপে দোকানের মালামাল নিয়ে তিনি এয়ারপোর্ট এলাকায় যান। তারপর বাসে উঠে মালামালসহ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদিতে চলে যান। সেখানে বোনের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন তিনি।”
লুট করা মালামাল রুমন তার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
পরে রুমন চট্টগ্রামের হালিশহরে এক আত্মীয়র বাসায় চলে যান। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব সদস্যরা।
আরও পড়ুন