মেলার ২৫টি স্টলে পাহাড়ের বিভিন্ন উপকরণ আর পাহাড়ের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী খাবার বিক্রি হচ্ছে।
Published : 10 Apr 2025, 12:01 AM
স্টলে স্টলে দেখা মিলছে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী খাবার, গয়না আর পোশাকের। পাহাড় থেকে আসা বিভিন্ন ধরনের ফল আর শাক-সবজিও পাওয়া যাচ্ছে। পাহাড়ের বর্ষবরণ উৎসবের আমেজ নগরবাসীকে দিতে রাজধানীতে বসেছে বিজুর মেলা।
বুধবার মিরপুরের শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারে বিজু উৎসব উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী বিজু মেলার আয়োজন করে ঢাকাস্থ পার্বত্য উদ্যোক্তা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড।
ঢাকায় এবারই প্রথম বিজু মেলার আয়োজন করা হল। মেলার শুরুর দিকে দর্শনার্থী কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে ভিড় বাড়ছিল। দর্শনার্থীরা বলছিলেন, শহরে এমন আয়োজন পাহাড়ি সংস্কৃতির প্রচার বাড়াবে।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে বিজু মেলা। মেলার ২৫টি স্টলে পাহাড়ের বিভিন্ন উপকরণ আর পাহাড়ের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী খাবার বিক্রি হচ্ছে।
উদ্যোক্তারা এ মেলাকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন, যার ফলে পাহাড়ের উপকরণের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ব্যবসার প্রচারও হচ্ছে বলে মনে করছেন।
মিজেল রেস্টুরেন্টে বিক্রি হচ্ছে মিয়ানমারের নুডলস দিয়ে তৈরি মুংড়ি, পাহাড়ি আম, তেঁতুলের শরবত, রাঙামাটির চিংড়ি দিয়ে রান্না করা কাঁঠালের তরকারি, ফিশ ফ্রাই, কাঁকড়া ভুনা।
এর স্বত্বাধিকারী বোধি প্রিয় চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার সব খাবার পাহাড়ের আইটেম দিয়ে তৈরি। আমাদের সেল মোটামুটি ভালোই হচ্ছে। আমরা খুব খুশি।”
মেলায় বন্ধুদের নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মহানাম চাকমা। দোকানটি থেকে তিনি আমের শরবত কিনছিলেন।
মহানাম বলেন, “আনন্দের জন্য এখানে আসছি। এটা তো আমাদের সংস্কৃতি। মেলায় অনেক কিছু আছে পাহাড়ের।”
বিজু মেলার খবর পেয়ে স্টল দিতে সাভার থেকে চলে এসেছেন এসএস কালেকশনের স্বত্বাধিকারী শিশিরময় চাকমা । বিক্রয়কেন্দ্রটিতে চাকমাদের পোশাক পিনো, মারমাদের পোশাক, পাহাড়ি কাপড়ে তৈরি ওড়না, ফতুয়াসহ বিভিন্ন পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।
শিশিরময় চাকমা বলেন, “আমি নতুন ব্যবসায়ী তো; পরিচিত হওয়ার জন্য এসেছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি, অনেক মানুষ আসতেছে। বাঙালি, পাহাড়ি সবাই নিচ্ছে। তবে বাঙালিরাই নিচ্ছে বেশি।”
জাবা রেস্টুরেন্টের স্টলে বিক্রি হচ্ছে গারোদের ঐতিহ্যবাহী খাবার খারি জাবা, পুড়া খারি। স্টলের কর্মী মনি মারমা ভালো সাড়া পাওয়ার কথা বলছেন।
রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী পিঠা ফেঠৌমুং (হেতেল পিঠা বা হেতেল পাতার পিঠা), মুংলুসে (স্টিকি রাইস বল), ক্যাতেমুং (রাইস পুডিং) পাওয়া যাচ্ছে রোরা ফুডসের বিক্রয়কেন্দ্রে।
এর স্বত্বাধিকারী নিলা সোওয়েন রাখাইন বলেন, “একেকদিন একেক ধরনের পিঠা নিয়ে আসব আমরা। একসঙ্গে এতগুলো পিঠা রেডি করা ঝামেলা।
“আমাদেরও যে এমন ট্র্যাডিশনাল পিঠা আছে, এটা সবাই জানে না। সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে এসেছি। তবে ভালোই রেসপন্স আছে, সামনে বাড়বে আশা করি।”
বক্স অব অর্নামেন্টে বিক্রি হচ্ছে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী গয়না হুজি হারু, আলছড়া, থ্যাঙ্ক অত হারু, পয়সা মালা, ফুইজে মালা, আজুলি।
এর স্বত্বাধিকারী ঋতিষা চাকমা বলেন, “এর বাইরে পাহাড়, সমতলের ফিউশনেও গয়না তৈরি করি আমরা। সব হাতে তৈরি গয়না। আমাদের নিজস্ব ক্রিয়েটিভিটি যে দেখাতে পারছি সেটার জন্য ভালো লাগছে। মানুষজন ভালো আসতেছে।”
রাঙমাটি হিল ফুড স্টলে পাওয়া যাচ্ছে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি জেলা থেকে আসা সবজি, আনারস, কাঁঠাল, বাঁশফুল, মরিচ, কলাসহ বিভিন্ন শাক-সবজি, ফল।
স্টলটির স্বত্বাধিকারী পারমী চাকমা বলেন, “আদিবাসীদের বিজু মেলায় যে খাবারগুলো ব্যবহার করা হয়; সেগুলো আমাদের এখানে পাওয়া যাচ্ছে। সবগুলোই পাহাড় থেকে নিয়ে আসা। অনেক ধরনের ফল, সবজি আছে।”
মিরপুর ১০ নম্বর থেকে মেলায় এসেছন তুষি চাকমা। তিনি বলেন, “আমাদের সব জিনিস এখানে আছে। ঢাকায় সহজে যেটা পাই না, এই মেলার মাধ্যমে সেটা নিতে পারব। যা যা লাগবে এখন কিনে নেব আরকি।”
বিজয় নগর থেকে মেলায় আসা সরকারি চাকরিজীবী বিজ্ঞান জ্যোতি চাকমা এ আয়োজনকে তাদের সংস্কৃতির প্রচার হিসেবে দেখছেন।
তিনি বলেন, “গ্রামের উৎসবের মতো শহরের উৎসব হবে না। তারপরও ভালো লাগছে, এটার একটা প্রচার পাচ্ছে।”
শেওড়াপাড়া থেকে বন্ধুদের নিয়ে মেলায় এসেছেন প্রিয়াঙ্কা চাকমা। এ আয়োজনের ফলে তাদের পাহাড়ি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করাতে পারার কথা বলছেন তিনি।
প্রিয়াঙ্কা বলেন, “অনেকে আসতেছে; যারা আমাদের সম্পর্কে জানে না, তারা জানতেছে। এটুকুই যথেষ্ট আমি বলব। আশা করি সবাই দেখবে।”
বিজু মেলা দেখতে এসেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখেন। এ সময় উদ্যোক্তারা পাহাড়ি পণ্যের প্রচার বাড়াতে সরকারি সহায়তা চান তার কাছে।
উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “এই বৈচিত্র্যটা তুলে ধরা খুবই জরুরি। আমরা আপনাদের (বাঙালি) পাশাপাশি দাঁড়াতে চাই, থাকতে চাই- এ কারণে এই উদ্যোগ। আপনারা রাঙামাটিতে আসুন, বান্দরবানে আসুন বিজু উৎসবে। খেলায় যোগ দিন।”