যুক্তরাষ্ট্র-চীন বিরোধ বাংলাদেশের ‘মাথাব্যথা’ নয়: মোমেন

“এটা ভালো খবর যে, আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছি,” বলছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2023, 03:22 PM
Updated : 10 Jan 2023, 03:22 PM

একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারা ‘চ্যালেঞ্জিং’ হিসাবে দেখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

তবে তিনি বলছেন, অর্থনীতির শীর্ষ দুই দেশের মধ্যে সমস্যা থাকলেও তা বাংলাদেশের ‘মাথাব্যথা’ নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তার সফরের মধ্যে ঢাকায় চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যাত্রাবিরতি নিয়ে এক প্রশ্নে মঙ্গলবার একথা বলেন তিনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তবে, আমরা অন্য কারও ‘ধানে মই দিই না’। তাদের সমস্যা থাকতে পারে, এটা তাদের মাথাব্যথা। আমরা তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে চাই।

“কারণ হলো, কী সব কারণে তাদের অসুবিধা, তা আমাদের মাথাব্যথা না, এটা তাদের মাথাব্যথা। সুতরাং আমরা তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাই। এবং আমরা এই নীতিতে আছি, ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা না’; আমরা এটাতে বিশ্বাস করি।”

শনিবার থেকে চার দিনের বাংলাদেশ সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলিন লউবাখার।

ঢাকায় তার বিভিন্ন বৈঠকের মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশ সফরে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার গভীর রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় এক ঘণ্টার যাত্রাবিরতি দেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন গ্যাং।

Also Read: চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যাত্রাবিরতি, আলোচনায় শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা

ওই সময়ে বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা ও বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বিমানবন্দরে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

রাতে বিমানবন্দরে আব্দুল মোনেম সাংবাদিকদের বলেন, তাদের আলোচনায় চীনের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত প্রকল্প, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক ফোরামে একসঙ্গে কাজ করাসহ বিভিন্ন বিষয় স্থান পায়।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তা লউবাখারের সফরের এক সপ্তাহের মধ্যে পর ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু।

এসব সফর ঘিরে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “এটা ভালো খবর যে, আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছি। আর চীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দও এসেছেন, এই মুহূর্তে এখানে আছেন।”

বাংলাদেশের অভাবনীয় অর্জন ও ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতির কারণে এমন ‘নজর’ ও ‘স্বীকৃতি’ পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, এই বছরে ৩৫তম অর্থনীতির দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। সেজন্য অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধা হাতছাড়া করতে চায় না। আর সরকারও চায় বেশি পরিমাণে সম্পৃক্ততা।

“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিনিধি এই মুহূর্তে শহরে রয়েছেন, আরও আসবেন। তাদের সাথেও আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো, আমরা সেই সম্পর্ককে আরও আরও সলিডিফাই করতে চাই।”

Also Read: রোহিঙ্গা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও সমুদ্র নিরাপত্তার আলোচনায় ঢাকা-ওয়াশিংটন

যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের সফরে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এগুলা নিয়ে আমরা বড় বেশি বেশি আলাপ করেন। শোনেন, নির্বাচন এক বছর পরে হবে। অনেক দিন বাকি। এগুলো নিয়ে আপনারা খামোখা বেশি বেশি হৈ চৈ করেন।

“আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক দেশ। আর আপনারা দেখেছেন যে গত ১৪ বছরে কত হাজার, কত কত নির্বাচন হয়েছে এবং সুষ্ঠু হয়েছে। এই সেদিন নির্বাচন হলো, সেটা সুষ্ঠু হয়েছে।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনী সহিংসতায় মানুষের মৃত্যুসহ বিভিন্ন ‘দুর্বলতা’ বাংলাদেশের রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে বিদেশিরা পরামর্শ দিতে পারেন, কিন্তু সেগুলো দূর করতে হবে বাংলাদেশের সরকার, রাজনৈতিক দল ও জনগণকে।

“আমাদের দেশের সব জনগণ, আমাদের দেশের সব দল, সরকার পক্ষ, বিরোধী পক্ষ-- আমরাই এই উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি। অন্য কেউ পারবে না। অন্য কেউ হয়ত আপনাকে, দোষটা ধরায় দিতে পারেন, এই পর্যন্তই। কিন্তু কাজটা আমাদেরই করতে হবে।”

সরকার উন্নত, সুন্দর, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা জনগণের উপর বিশ্বাস রাখি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে। কারণ আওয়ামী লীগ হলো জনগণের দল। আমরা কখনও পেছনের দরজা দিয়ে আসিনি, আমরা সব সময় ভোটের মধ্য দিয়ে এসেছি।”