সদ্য শেষ হওয়া তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে সোমবার নিজেদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠনটি, তাতে এই সুপারিশ এসেছে।
গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। এর দুই সপ্তাহ পর টিআইবি তাদের ‘নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ’ তুলে ধরল।
ভোট সুষ্ঠু করতে টিআইবির পক্ষ থেকে আইনি সংস্কার, প্রার্থীর হলফনামার নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করা এবং ইভিএম ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়।
ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সত্যিকার অর্থে তিন সিটির নির্বাচন সঠিকভাবে হয়নি। ভোটাররা প্রতারিত হয়েছেন। ব্যাপক ভোট জালিয়াতি ও কারচুপির ঘটনা ঘটেছে। এ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বলা যায় না।”
ভোট জালিয়াতি বন্ধের জন্য ইভিএম ব্যবহারের পাশাপাশি ভোট কেন্দ্রে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর সুপারিশও করেন তিনি।
এ বিষয়ে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা তার দায়িত্বকালীন সময়ে ইভিএমের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
২০০৭ থেকে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা এই সিইসি ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও বাতিল ভোট বন্ধে ইভিএম ব্যবহারের জোর তাগিদ দেন।
“ইভিএম থাকলে জালিয়াতি, স্টাফিং হওয়ার সুযোগ নেই। ভোট বাতিলও হবে না। আমরা ইভিএম প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিয়েছিলাম। মাঝপথে তা বন্ধ হয়ে গেল। ইভিএম থাকলে এত অরাজকতাও হত না।”
হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি ইভিএম নিয়ে এগোলেও কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির কার্যক্রমে সেই প্রক্রিয়ায় ছেদ ঘটেছে।
পাশের দেশ ভারতে ইভিএম ব্যবহারের সফলতা তুলে ধরে শামসুল হুদা বলেন, বুয়েট ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় দেশীয় ইভিএম রয়েছে। এতে ‘ম্যানিপুলেট’ করার সুযোগ থাকে না।
বর্তমান কমিশনকে ইভিএম প্রযুক্তি এগিয়ে নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
তিন সিটি নির্বাচনের পর গত ২৯ এপ্রিল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীতে ইভিএম ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের প্রযুক্তিনির্ভর হওয়া উচিত।”
তিন সিটির তফসিল দেওয়ার সময় ১৮ মার্চ বর্তমান সিইসি কাজী রকিব জানিয়েছিলেন, চার সিটি নির্বাচনের সময় কিছু ইভিএমে সমস্যা হয়েছিল। তাই সে নষ্ট মেশিনগুলো ঠিক করতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার পর এখনও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
“যতদিন এ সমস্যার সমাধান না করা যাবে, ততদিন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার স্থগিত রাখা হবে।”
সাবেক সিইসি হুদা বলেন, ভোটকেন্দ্র দখল করে জালিয়াতি রোধে কমিশন ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকেই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
“ভোটকেন্দ্র দখল হলে তো অসুবিধা। আমাদের সময়ে কোনো ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম হলেই সঙ্গে সঙ্গে তা বাতিল করা হয়েছে।”