ইভিএম অধ্যায়ের ‘ইতি’

জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে আর এগোবে না কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2014, 03:10 AM
Updated : 13 August 2014, 05:06 AM

‘রাজনৈতিক মতৈক্য না হওয়ায়’ আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে এ নিয়ে আর কোনো সংলাপও করবে না নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি।

৫ সদস্যের এই কমিশন ইতোমধ্যে তাদের মেয়াদের অর্ধেক সময় পার করে ফেলেছে। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন এ কমিশনের অধীনে হওয়ার সুযোগ না থাকায় ইভিএম বিষয়ে নিজেদের ‘গুটিয়ে’ রাখবেন তারা।

এমনকি সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। কেবল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ‘ছোট’ পরিসরে কোনো কোনো ওয়ার্ডে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা থাকছে কাগজে কলমে।

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, “ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই বছর পার করেছি, আর অর্ধেক বাকি। আমাদের অধীনে তো আগামী সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। এ পর্যায়ে ইভিএম নিয়ে আর এগোচ্ছি না আমরা।”

তিনি বলেন, প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে ইভিএম ‘শতভাগ ত্রুটিমুক্ত নয়’ - এমন অভিযোগে বড় রাজনৈতিক দলগুলো এর বিরোধিতা করেছে। ফলে কমিশনের পক্ষেও আর এগোনো সম্ভব হয়নি।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ‘স্বল্প পরিসরে’ এই যন্ত্র ব্যবহার করার জন্য বিধিমালা সংশোধন চলছে বলে নির্বাচন কমিশনার জানান।

“এটি নিয়ে আসলে আমরা চিন্তিত। ছোট কয়েকটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে গিয়ে যান্ত্রিক ত্রুটি হয়েছে। বড় নির্বাচনে হলে এ নিয়ে ঝামেলাও হতে পারে। বড় পরিসরে যেতে ত্রুটিমুক্ত যন্ত্র ও দক্ষ লোকবলের বিষয়টি বিবেচনার পাশাপাশি রাজনৈতিক ঐকমত্যও দরকার রয়েছে।”

এটিএম শামসুল হুদার বিগত কমিশন একটি ওয়ার্ড দিয়ে ইভিএমের যাত্রা শুরু করে পুরো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় ‘সফল’ হয়। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদায়ের আগে সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতিও রেখে যায় পরবর্তী কমিশনের জন্য। এ লক্ষ্যে ইভিএমের প্রটোটাইপ তৈরির নির্দেশনাও দিয়ে যায় বিগত ইসি।

সে ধারাবাহিকতা ধরে না রেখে কাজী রকিবের কমিশন নিজেদের পিছিয়ে নিয়েছে ওয়ার্ড পর্যায়ে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অর্ধেক আসনে ভোট না হলেও কমিশন ইভিএমের দিকে যায়নি।  

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে একটি ওয়ার্ডে ব্যবহারের মধ্য দিয়ে দেশে ইভিএমের যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং গাজীপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সহায়তায় এ প্রযুক্তি চালু হয়।

এরপর নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ও নরসিংদী পৌরসভায় পুরো ভোট হয় ইভিএমে।

তবে বুয়েট ও ইসির দ্বন্দ্বে সিইসির ঘোষণার পরও রংপুর সিটি কর্পোরেশনে এর ব্যবহার নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। শেষ মুহূর্তে ইসির নিজস্ব জনবল দিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে ইভিএমে ভোট হয়।

বর্তমান ইসির অধীনে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেটে সিটি নির্বাচনে মাত্র ১৩টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় এ যন্ত্র নিয়ে এগোনোর কাজ।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ইসির হাতে এক হাজার দুশ’টির বেশি ইভিএম রয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহায়তায় প্রথমে ১৩০টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৪০০টি এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সহযোগিতায় আরও ৭০০ ইভিএম পায় ইসি। ইতোমধ্যে ইভিএম তৈরিতে কমিশনের কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন বিষয়ে মতামত জানতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন আর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে কি না- সে বিষয়েও শঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, “ আর কোনো সংলাপের চিন্তা আমাদের নেই। শুধু শুধু কেন সংলাপ করব?”

বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যেই গত ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন হয়। বর্তমান ইসিকে বরাবরই ‘অথর্ব ও মেরুদণ্ডহীন’ বলে সমালোচনা করে আসছে বিএনপি। আগের মহাজোট সরকারের শরিক ও বর্তমানের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও সংসদে ইসির সমালোচনা করেছেন।

এসব বিষয় স্মরণ করিয়ে দিয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে তো একবার করেছি। ডেকে এনে দলগুলোর কটাক্ষ শোনার কী দরকার! চুলকিয়ে ঘা করার আর দরকার নেই।”

৫ সদস্যের বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি। সাংবিধানিকভাবে নতুন ইসির অধীনে ২০১৯ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।