ইভিএমে ত্রুটি: ইসিকে বুয়েটের ‘না’

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) নষ্ট একটি কন্ট্রোল ইউনিটের ত্রুটি চিহ্নিত করতে নির্বাচন কমিশন অনুরোধ জানালেও তাতে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2015, 01:55 PM
Updated : 14 March 2015, 03:43 PM

চুক্তি লঙ্ঘনেরও অভিযোগ এনে পাঠানো ইভিএমটি কমিশনে ফেরত পাঠিয়েছে  বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশন (বিআরটিসি)।

বুধবার বিআরটিসি পরিচালক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবালয়ের মেনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারের কাছে পাঠানো হয়।

এরই মধ্য দিয়ে বুয়েট তৈরি করা ইভিএমের সামনে এগোনোর যাত্রা অনেকখানি আটকে গেল।

বুয়েটের জবাব নিয়ে এখনও কমিশন সভায় কোনো আলোচনা না হওয়ায় কোনো মন্তব্য করতে চাননি একাধিক নির্বাচন কমিশনার।

২০১০ সালে এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি বুয়েটের সহায়তায় ইভিএম চালু করে। ওই সময় চীন থেকে আমদানি করা ব্যাটারি ব্যবহার করা হত।

পরে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসি ২০১২ সালে দেশীয় ব্যাটারি ব্যবহার শুরু করে। তা নিয়ে ইসি-বুয়েট দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ২০১৩ সালে দেশীয় ব্যাটারি দিয়ে ইভিএম চালাতে গিয়ে রাজশাহীতে সমস্যায় পড়ে ইসি।

এর ধারাবাহিকতায় বুয়েটের বিআরটিসিকে তা সমাধান দিতে বলে ইসি।

এর জবাবে বুধবার বুয়েটের ব্যুরো অব রিচার্স, টেস্টিং এ্যান্ড কনসালটেশন পরিচালক ইসিকে পাঠানো চিঠিতে বলেন, বুয়েটের পরামর্শ বা উপদেশ উপেক্ষা করে বা আমলে না নিয়ে নির্বাচন কমিশন গত বছরের ১৫ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজস্ব বিবেচনায় ইভিএম-এর পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য দেশিয়/লোকাল ব্যাটারি ব্যবহার করে নির্বাচন সম্পন্ন করে।

“যা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন,” বলা হয় ওই চিঠিতে।

পরিচালক জানান, যেহেতু বুয়েট ইভিএমের ডিজাইন ও মেধাস্বত্বের একমাত্র অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও এর পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য বুয়েটের কোনো পরামর্শ নেওয়া হয়নি। সেহেতু রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ব্যবহৃত একটি কন্ট্রোল ইউনিট ‘সঠিকভাবে কাজ না করার কারণ চিহ্নিত করার বিষয়টি’ দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বাইরে যাওয়ার কারণে এ বিষয়ে বুয়েটের মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।

“আপনাদের পাঠানো ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিটটি আপনারা যেভাবে বুয়েটে পাঠিয়েছিলেন, হুবহু একই অবস্থায় ফেরত পাঠানো হল।”

ইভিএম পরিচালনায় পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য ব্যবহৃত ব্যাটারির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। যা বুয়েট ইসিকে বেশ কয়েকবার মৌখিকভাবে ও চিঠিতে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে স্থানীয় ব্যাটারি ব্যবহার করলে ইভিএমগুলোতে ‘আনপ্রেডিকটেবল ফল্ট’ দেখা দিতে পারে। ফলে নির্বাচনের ফলাফল সঠিকভাবে প্রতিফলিত নাও হতে পারে।

এক্ষেত্রে বুয়েট ইভিএমর সঠিক কার্যকারিতার বিষয়ে কোনো প্রকার দায়দায়িত্ব বহন করবে না বলে ইসিকে জানায় বুয়েট।

সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হচ্ছে না: সিইসি

বুয়েট জানিয়েছে, বুয়েট কখনও ইভিএমের পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য স্থানীয় ব্যাটারি ব্যবহারের বিপক্ষে ছিল না এবং এখনও নেই। তবে তাদের পরামর্শ বা নির্দেশনা ছিল- দেশীয় ব্যাটারির যথাযথ পরীক্ষার পর ফল সন্তোষজনক হলে শুধু তখনই ব্যবহার করা হবে।

মেনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার মো. ইকবাল জাভীদ বুয়েটের চিঠির জবাব সিইসি কাজী রকিব উদ্দীন আহমদের কাছে উপস্থাপন করেছেন।

কমিশন সভায় এ বিষয়ে শিগগির পর্যালোচনা করা হবে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।

আসন্ন চট্টগ্রাম ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার ইঙ্গিত দিয়েছে ইসি।

অলিম্পিক দিয়েই চলছে ইভিএম

বৃহস্পতিবার ইসি সচিবালয়ের আইটি শাখার কর্মকর্তারা জানান, ইভিএমে দেশীয় ব্যাটারি ব্যবহারের একটি পরীক্ষামূলক কাজ শেষ হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনকে জানানো হয়েছে, অলিম্পিক ব্যাটারি দিয়ে ইভিএম পরিচালনা যুক্তিযুক্ত হবে।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের ভোটের জন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ, ভোটার তালিকা বিন্যাস ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল নির্ধারণের কাজ চলছে।

চট্টগ্রাম ও ঢাকা সিটি করপোরেশনে ইভিএমের ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে কি না- জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি ইভিএম নষ্ট হয়েছিল। বুয়েটের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কাছে তা পাঠানোর পরেও ইউনিটটি ঠিক করে দেয়নি। ত্রুটি উদ্ধার না হওয়ায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে ইভিএম ব্যবহারের সম্ভাবনা খুব কম।”

ইতোপূর্বে ইভিএম নষ্টের পর ফল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদেরই ভোটারদের রোষানলে পড়তে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

“সময় স্বল্পতার কারণে ইভিএম ঠিক করাও যাবে না, ব্যবহারও করা যাবে না,” বলেন নির্বাচন কমিশনার।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে একটি ওয়ার্ডে ব্যবহারের মধ্য দিয়ে দেশে ইভিএমের যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং গাজীপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সহায়তায় এ প্রযুক্তি চালু হয়।