স্বাধীনতা পদক পেলেন সাতজন

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে এবং জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের জন্য সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ সাতজন বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার' পেয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2015, 05:11 AM
Updated : 25 March 2015, 09:36 AM

বুধবার সকালে এ বছর পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য শাহ এ এম এস কিবরিয়া ছাড়াও প্রয়াত কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী ও শহীদ মামুন মাহমুদকে এবার স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছে।

সাহিত্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সংস্কৃতিতে চলচ্চিত্র অভিনেতা আব্দুর রাজ্জাক, গবেষণা ও প্রশিক্ষণে ড. মোহাম্মদ হোসেন মণ্ডল এবং সাংবাদিকতায় প্রয়াত সন্তোষ গুপ্ত  এ পুরস্কার পেয়েছেন।

এই সাতজনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের একমাত্র জীবিত সদস্য অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদও এবার স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীতদের তালিকায় থাকলেও তিনি তা নেননি।

এ পর্যন্ত স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের পরিচিতিমূলক গ্রন্থেও তার নাম নেই।

মোজাফফর আহমেদের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেছেন, “উনি নিতে আগ্রহী নন। এজন্য উনার নাম ড্রপ করা হয়েছে।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জল ভূমিকা, অসামান্য আত্মত্যাগ ও অসাধারণ অবদানের জন্য যারা চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন এবং শিক্ষা-সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও জনকল্যাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন- তাদের যথাযথ সম্মান ও স্বীকৃতি প্রদানের দায়িত্ববোধ থেকে দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ দেওয়া হয়ে থাকে।

এ পর্যন্ত ২১২ জন ব্যক্তি ও ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে দেশের সর্বোচ্চ এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে আঠারো ক্যারেটের ৫০ গ্রামের একটি স্বর্ণপদক, দুই লাখ টাকা ও সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।

১৯৭১ সালে ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া এ বছর মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক পান। ২০০৫ সালের ১৭ জানুয়ারি নিজের নির্বাচনী এলাকায় জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত কিবরিয়া। তার পক্ষে তার চাচাতো ভাই শাহ আব্দুল মোসাব্বের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে স্বাধীনতা পুরস্কার নেন।

বৃহত্তর সিলেটে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা রাখায় প্রয়াত কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী এবার স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। সাবেক এই সাংসদ নিজে সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন মানিক চৌধুরী। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী সংসদের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিবাদের জন্য মানিক চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে চার বছর কারারুদ্ধ রাখা হয়। ১৯৯১ সালের ১০ জানুয়ারি মারা যান তিনি। তার পক্ষে তার স্ত্রী বেগম রোকেয়া চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে স্বাধীনতা পুরস্কার নেন।

১৯৭১ সালে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির দায়িত্বে থেকেও পাকিস্তানি বাহিনীর বদলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন মামুন মাহমুদ।  মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করায় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শহীদ হন তিনি। ২৬ মার্চ রাতে রাজশাহী পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগারের চাবি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর ও পুলিশ সদস্যদের আত্মসমর্পণ না করার নির্দেশ দেওয়ায় সে রাতেই রংপুর ব্রিগেড সদরদপ্তরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয় মামুন মাহমুদকে।  তার মেয়ে জেবা মাহমুদ বাবার পক্ষে  পদক গ্রহণ করেন।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য এবছর স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এই ইমেরিটাস অধ্যাপক একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন। 

দেশের সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এবার স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা আব্দুর রাজ্জাক, এদেশের মানুষের কাছে যিনি ‘নায়ক রাজ রাজ্জাক’ হিসেবেই বেশি পরিচিত।

গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিউটের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন মণ্ডলকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছে।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, আব্দুর রাজ্জাক ও মোহাম্মদ হোসেন মণ্ডল প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন।

আর সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য এ পুরস্কার পেয়েছেন প্রয়াত সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছাড়াও  দেশের সব আন্দোলনেই তিনি অসাম্প্রদায়িকতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন সন্তোষ গুপ্ত। তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদ কথকও ছিলেন। ২০০৪ সালের ৬ অগাস্ট মারা যান সন্তোষ গুপ্ত। তার পক্ষে ছেলে প্রিয়তোষ গুপ্ত  পুরস্কার গ্রহণ করেন।

২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য প্রতিবছর এ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করে সরকার।

স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, “যদিও স্বাধীনতাবিরোধিতা করেছেন এমন ব্যক্তিদের এই পুরস্কার দিয়ে একে কলুষিত করা হয়েছে, তবুও এটি সর্বোচ্চ পুরস্কার। এটি প্রত্যেকের জীবনে শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।”

বুধবারের এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া।

অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, মন্ত্রিসভার সদস্য, সাংসদ, বিচারপতি, তিন বাহিনী প্রধান ও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।