কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর রায় আবারো পিছিয়েছে।
Published : 24 Jun 2014, 02:02 PM
নির্ধারিত দিনে মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় আবার পেছানোর আদেশ দেন।
যুদ্ধাপরাধের ১৬ অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের এই নেতার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রায় ঘোষণার জন্য দিন ছিল।
তবে সকালে কারা কর্তৃপক্ষ নিজামীর অসুস্থতার কারণ জানিয়ে চিঠি দেয়ার পর শুনানি শেষে রায় ঘোষণা অপেক্ষমান রাখে ট্রাইব্যুনাল। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হলো এই মামলাটি।
আদেশে এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, “আমরা কারা-কর্তৃপক্ষের চিঠি পেয়েছি। উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্যও শুনেছি।
“এই পরিস্থিতিতে তার অনুপস্থিতিতে রায় দেয়া আমরা যুক্তিসঙ্গত মনে করছি না। এ কারণে আজ আমরা রায় প্রদান করছি না। দ্রুত জেল কর্তৃপক্ষের নিকট নিজামীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চাচ্ছি। সে পর্যন্ত রায় সিএভি (রায়ের জন্য অপেক্ষমান) রাখছি।”
শুনানিতে প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন মোহাম্মদ আলী। আসামি পক্ষে ছিলেন মিজানুল ইসলাম।
মোহাম্মদ আলী বলেন, “বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার। ট্রাইব্যুনাল অন্তর্নিহিত ক্ষমতায় যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।”
মিজানুল বলেন, “বিধি অনুসারে আসামি যদি জামিন নিয়ে পলাতক থাকেন, দীর্ঘ অসুস্থতায় থাকেন বা আদালতে আসতে অস্বীকৃতি জানান, সেক্ষেত্রে তার অনুপস্থিতিতে রায় হতে পারে।”
নিজামীর অপর আইনজীবী তাজুল ইসলামও ‘অসুস্থ’ অবস্থায় রায় দেয়া আইন অনুযায়ী হবে না বলে সকালে মন্তব্য করেছিলেন।
রায় না দেয়ার আদেশের পর তাজুল ইসলাম বলেন, “রাতে তিনি উচ্চ রক্তচাপে পড়েছেন। সকাল ৮টা পর্যন্ত তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। তাকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলেছেন এবং নড়াচড়া করতে নিষেধ করেছেন।”
এর আগে জেল সুপার ফরমান আলী বেলা ১১টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় নিজামীকে আদালতে নেয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, “আপাতত তাকে আদালতে নেয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। গতরাতে তার প্রেসার বেড়ে যাওয়ায় ওষুধ দেয়া হয়। সকালেও তার প্রেসার না কমায় ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়। এখন তিনি ঘুমাচ্ছেন। ঘুম থেকে উঠলে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উসকানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো ১৬টি অভিযোগে ২০১২ সালের ২৮ মে জামায়াত আমিরের বিচার শুরু হয়।
২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ নিজামীর মামলার রায় অপেক্ষমান রাখে।
তবে রায় দেয়ার আগেই ট্রাইব্যুনাল-১ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসা বিচারপতি এ টিএম ফজলে কবীর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে গেলে এই আদালতের বিচার কার্যক্রমে কার্যত স্থবিরতা তৈরি হয়। ঝুলে যায় নিজামীর রায়ও।
পরে এবছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে ওই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।
দায়িত্ব নিয়ে আসামিপক্ষের আবেদনে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এই মামলার যুক্তিতর্ক আবার করতে আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর নতুন এই চেয়ারম্যান।
দ্বিতীয় দফা যুক্তিতর্ক শেষে গত ২৪ মার্চ নিজামীর যুদ্ধাপরাধের মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে ট্রাইব্যুনাল।
রায় লেখার পর গত ২৩ জুন রায়ের দিন ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। ওই ঘোষণা অনুসারে মঙ্গলবার রায় দেয়ার দিন ছিলো।
২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদকে (বাচ্চু রাজাকার) মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। বিচার প্রক্রিয়ার শুরু থেকে পলাতক থাকায় তার অনুপস্থিতিতেই এই রায় হয়।
সর্বশেষ গত বছরের ৩ নভেম্বর দুই বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে তাদের অনুপস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। একাত্তরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেয়া এই দুজন পুরো বিচার প্রক্রিয়াতেই অনুপস্থিত ছিলেন।
এর বাইরে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, দলটির নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, মুক্তিযুদ্ধকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াত আমির গোলাম আযম, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রামের তৎকালীন সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও দলটির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের রায় হয় তাদের উপস্থিতিতে।
চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় জামায়াতের এই আমির ও জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী নিজামীকে এই বছরের জানুয়ারিতে ফাঁসির আদেশ দেয় চট্টগ্রামের একটি আদালত।