তারেক সাঈদের বিরুদ্ধে কুমিল্লায় মামলা

নারায়ণগঞ্জের সাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার র‌্যাব-৯ এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগে কুমিল্লায় একটি মামলা হয়েছে।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2014, 07:27 AM
Updated : 18 May 2014, 01:48 PM

রোববার জেলা আমলি আদালতে এই মামলাটি করেছেন লাকসাম বিএনপির নিখোঁজ এক নেতার বাবা রঙ্গু মিয়া।

রঙ্গু মিয়ার ছেলে লাকসাম পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ূন কবীর পারভেজ এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম হিরু ছয় মাস ধরে নিখোঁজ।

পারভেজ ও হিরুর স্বজনরা ঘটনার পর থেকে র‌্যাবকে দায়ী করে এলেও নারায়ণগঞ্জের ঘটনা নিয়ে র‌্যাব স্পষ্টত চাপে পড়ার পর অভিযোগ নিয়ে আদালতে গেলেন।

ত্রামণমন্ত্রী ও চাঁদপুরের সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা তারেক সাঈদের সঙ্গে এই মামলায় আরো চার র‌্যাব কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।

তারা হলেন- র‌্যাব-১১ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর শাহেদ রাজি, উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) শাহজাহান আলী এবং দুই এসআই কাজী সুলতান আহমেদ ও অসিত কুমার রায়।

র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সাবরিনা নার্গিস তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে লাকসাম থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় প্রথম সাক্ষী করা হয়েছে লাকসাম পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জসিমউদ্দিনকে, ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর রাতে হিরু ও পারভেজের সঙ্গে তাকেও তুলে নেয়া হয়েছিল বলে এজাহারে বলা হয়েছে। পরে জসিমকে থানায় হস্তান্তর করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, অ্যাম্বুলেন্সে করে রাতে কুমিল্লা যাওয়ার পথে আলীশহর এলাকায় গাড়ি থামিয়ে র‌্যাব সদস্যরা হিরু, পারভেজ ও জসিমকে তুলে নেয়। পরে জসিমকে পুলিশে দেয়া হলেও অন্য দুজনের সন্ধান আর পাওয়া যায়নি।

সংসদ নির্বাচনের আগে ওই সময়টি সারাদেশে ভোট বর্জনকারী বিএনপি জোটের ডাকে হরতাল-অবরোধ চলছিল। 

তখন হত্যার উদ্দেশ্যেই বিএনপির এই দুই নেতাকে র‌্যাব তুলে নিয়েছিল বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

সাবেক সংসদ সদস্য হিরুর বোন সেলিনা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার পরদিন তারা মামলা করতে থানায় গেলেও লাকসাম থানার তৎকালীন ওসি আবুল খায়ের র‌্যাবের বিরুদ্ধে মামলা নিতে রাজি হননি।

“বহু চেষ্টার পর ঘটনার তিন দিন বাদে র‌্যাবের নাম বাদ দিয়ে লাকসাম থানায় একটি জিডি (সাধারণ ডাইরি) করা হয়।”

মামলায় বলা হয়, ওই রাতে দৌলতগঞ্জ বাজারে হিরুর ‘বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার মিল’ নামে একটি আটা-ময়দা কারখানায় ঢুকে ১৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন র‌্যাব কর্মকর্তা শাহজাহান, সুলতান ও অসিত। 

ওই সময় কারখানা থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ী  মঞ্জুরুল ইসলাম বাচ্চু, সফিকুল ইসলাম লিটন, মো. আলাউদ্দিন, প্রবাসী মনিরুর রহমান, আক্তারুজ্জামান, কর্মচারী ভুদেব চন্দ্র সাহা, শাহআলম ও অর্জুন সাহাকে আটক করে গাড়িতে তুলে নেয়া হয়।

তখন হিরু পালিয়ে গ্রেপ্তার এড়িয়েছিলেন। পরে তিনি পারভেজ ও জসিমকে নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে কুমিল্লা রওনা হন। পথে তারা র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েন বলে মামলায় বলা হয়।

সেলিনা বলেন, র‌্যাব সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্সচালক সাদেক আলী ও হেলপার রিয়াদকে মারধর করে তাদের একটি জিপে তুলে নেয়।  আগে আটক আটজন র‌্যাবের অন্য গাড়িতে ছিল। জসিমকে সেই গাড়িতে তুলে দেয়া হয়।

তারেক সাঈদ ও শাহেদ রাজীবের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে সেলিনা দাবি করেন।

জসিমসহ অন্যদের পুলিশে তুলে দেয়া হলে হরতালে নাশকতার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।