প্রধানমন্ত্রীর হাতে মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র দেয়া নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে ‘সাংবিধানিক’ প্রশ্ন ওঠার পর আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, সেগুলো আদতে পদত্যাগপত্রই নয়, কেননা তা রাষ্ট্রপতির বরাবরে দেয়া হয়নি।
Published : 12 Nov 2013, 01:47 PM
মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার জন্য মন্ত্রীরা কেউ পদত্যাগপত্র দেননি। তারা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার জন্য পদত্যাগপত্র দিলেই তা কার্যকর হয়, এক্ষেত্রে তা হয়নি।
“সংবিধান অনুযায়ী, কোনো মন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার জন্য পদত্যাগপত্র দিয়ে থাকলে তা পদত্যাগপত্র হবে। যে পদত্যাগপত্র দেয়া হয়েছে তা রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করার জন্য নয়। কাজেই ৫৮(১) ক যে বিধানটি তা আকৃষ্ট হচ্ছে না।”
আইনমন্ত্রীর ভাষায়, “রাস্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে কোনো পদত্যাগপত্র দেয়া হয়নি, এটি পদত্যাগপত্রই না, এটি একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।”
অবশ্য এটা কিসের আনুষ্ঠানিকতা জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেননি শফিক আহমেদ।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী দলের আন্দোলনের মধ্যেই সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ‘তারিখবিহীন’ পদত্যাগপত্র জমা দেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা, যার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সংবিধান অনুযায়ী একজন মন্ত্রী পদত্যাগপত্র জমা দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা কার্যকর হয়ে যাওয়ার কথা।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এবার মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে সেটি ঘটবে না। যারা সর্দলীয় সরকারের থাকবেন না, কেবল তাদের পদত্যাগপত্রই রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে।
অন্যদিকে সরকারের এ দাবি নিয়ে বিরোধী দলসহ টেলিভিশনে বিভিন্ন আলোচনায় প্রশ্ন তোলা হয়। বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়ে যায়। তা গ্রহণ করা বা নাকচ করার সুযোগ সংবিধানে নেই।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “পত্র দিলেই তা পদত্যাগ হবে না, একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকতে হবে যে এটি রাস্ট্রপতির নিকট পেশ করার জন্য দেয়া হয়েছে।”
শফিক আহমেদের যুক্তি, মন্ত্রীরা কেউ পদত্যাগ করেননি, তারা অভিপ্রায় ব্যাক্ত করেছেন মাত্র। যে পদত্যাগপত্র দেয়া হয়েছে, তা সংবিধান অনুযায়ীও হয়নি। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী রাস্ট্রপতির কাছে পেশ করার আগ পযন্ত কোনো পদত্যাগপত্রই কার্যকর হয় না।
“কাজেই মন্ত্রিপরিষদে যারা আছেন তারা মন্ত্রী হিসেবেই আছেন। তাদের পদ শূন্য হয়নি, মন্ত্রীর সুযোগ সুবিধা নেয়া এবং দায়িত্ব পালনেও কোনো বাধা নেই।”
যদি তেমনটিই হয়, সেক্ষেত্রে যারা সর্বদলীয় সরকারে থাকবেন না, তাদের আবার নতুন করে পদত্যাগপত্র দিতে হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “এটি কার্যকর করতে রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার জন্য দিতে হবে, আবার পদত্যাগপত্র দিতে হবে না, পদত্যাগের জন্য মুখে বললেই হবে।”
তাহলে সোমবার মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর হাতে যে পত্র দিয়েছেন, তাকে কী বলা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে শফিক আহমেদ বলেন, “আপনারা যা খুশি বলতে পারেন।”
তাহলে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার নামে মন্ত্রীরা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন কি না-এমন প্রশ্নে শফিক আহমেদ বলেন, “না, মোটেই না। প্রতারণার কি আছে?”
এ বিষয়ে ‘কোনো কনফিউশন নেই’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।