মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর স্বস্তি জানিয়েছেন তার পৈত্রিক নিবাস রাউজানের বাসিন্দারা।
Published : 01 Oct 2013, 02:22 PM
মঙ্গলবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সালাউদ্দিন কাদেরের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যকে।
মুক্তিযোদ্ধা ও রাউজানের সাধারণ মানুষ বলছেন, এই রায়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা মাস্টারদা সূর্যসেনের স্মৃতিধন্য রাউজান কলঙ্কমুক্ত হলো।
রায় ঘোষণার পর রাউজান সদরে মিছিল বের করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
এর আগে সোমবার থেকেই রাউজান উপজেলায় টহল জোরদার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই এক ধরণের চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল রাউজানবাসীর মধ্যে।
একাত্তরে হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী রাউজানের কুণ্ডেশ্বরীর ঔষধালয়, জগতমল্লপাড়া ও উনসত্তর পাড়া এলাকার বাসিন্দারা মঙ্গলবার সকালেও মুখ খুলতে নারাজ ছিলেন।
অবশ্য রায় ঘোষণার পর স্বস্তি জানিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাউজানের মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ।
রাউজান কদলপুর এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল শাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একাত্তরের জুনে প্রশিক্ষণ শেষে তিনি রাউজানে ফিরে আসেন। উনসত্তর পাড়ার হত্যাকাণ্ডের কথা শুনে চার-পাঁচ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ সেখানে যান।
“গিয়ে দেখি গ্রামের বিভৎস অবস্থা। সেটা ছিল নারকীয় হত্যাকাণ্ড।”
ইসমাইল জানান ৭৫ পরবর্তী সময়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের ভয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও সংখ্যালঘু পরিবার এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন।
“রাউজান একসময় সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিল। এর নেপথ্যে ছিল সালাউদ্দিন কাদের ও তার পরিবারের সন্ত্রাস। ফাঁসির রায়ই তার উপযুক্ত শাস্তি।”
রায় শোনার পর রাউজানের মোহাম্মদপুরের মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “একাত্তরে সালাউদ্দিন কাদেরের ভূমিকা রাউজানবাসীর জন্য লজ্জাজনক। তিনি চরম হিন্দু বিদ্বেষী একজন।”
রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বেবি বলেন, “রায়ের অপেক্ষায় ছিলাম। সঠিক বিচার হয়েছে। সূর্যসেনের জন্মস্থান হিসেবে রাউজান যেমন গর্বিত, তেমনি সালাউদ্দিন কাদেরের জন্মস্থান হিসেবে এতদিন ছিল কলঙ্কিত।”
এই রায়ে রাউজানবাসী কলঙ্কমুক্ত হলো উল্লেখ করে দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানান তিনি।
রাউজানের কদলপুরের মুক্তিযোদ্ধা কিরণ লাল আচার্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জাতির জন্য সালাউদ্দিন কাদের একটি ‘ক্ষতিকর ব্যধির’ মতো। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি অনেক আগেই এ রায় চেয়েছিলেন।
‘কিন্তু তা হয়নি। সালাউদ্দিন কাদের একজন আজন্ম সাম্প্রদায়িক মানুষ। তার বিরোধী কেউ ২০০১-০৬ পর্যন্ত রাউজানে স্বস্তিতে ছিলেন না। এখন শহীদ পরিবারের সদস্যরা শান্তি পাবেন।”
এই রায় দ্রুত কার্যকর করা না হলে এবং সরকার পরিবর্তন হয়ে গেলে সালাউদ্দিন কাদেরের পরিবার রাউজানে আবার অতীতের বিভীষিকা ফিরিয়ে আনতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন গ্রামবাসী।