হেফাজতবিরোধী মতিঝিল অভিযান নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগে ডানঘেঁষা মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান শুভ্রকে পাঁচ দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।
Published : 11 Aug 2013, 10:46 PM
হেফাজতকাণ্ড: ‘নিখোঁজ’ কারো সন্ধান পাননি রিটকারী
মতিঝিলে লাশ গুম করা হয়েছে: বিএনপি
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের এই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে শনিবার রাতে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন জানিয়ে রোববার আদালতে নেয় পুলিশ।
এদিকে আদিলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে পাওয়ার পর রোববার রাতে গুলশানে অধিকারের কার্যালয়ে পুলিশ তল্লাশি চালায়।
অধিকারের সেক্রেটারিকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের নেয়ার নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। খালেদা জিয়া বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে সরকারের ‘স্বৈরাচারী মুখোশ’ উন্মোচিত হল।
আদিলকে দুপুরে ঢাকার মহানগর হাকিম অমিত কুমার দের আদালতে নেয় পুলিশ। তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিন রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
অন্যদিকে আদিলের পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের নেতা এ জে মোহাম্মদ আলী।
শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের তুলতে গত ৫ মে রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে অভিযান চালায়, তাতে ৬১ জন নিহত হয় বলে অধিকারের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মতিঝিলে গণহত্যা চালানো হয়েছিল বলে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা দাবি করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই অভিযানে কেউ মারা যাননি।
আদিলের আইনজীবী শুনানিতে দাবি করেন, হেফাজতে ইসলামের সদস্যদের ‘হত্যার’ বিষয়ে অধিকারের দেয়া তথ্য সঠিক।
“আসামি একজন আইনজীবী এবং ঢাকা বারের সদস্য। যেহেতু তাকে সন্দেহের ভিত্তিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আটক করা হয়েছে, সেহেতু হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, তাকে রিমান্ডে চাওয়ার সুযোগ নেই। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা হলে রিমান্ডের প্রশ্ন আসবে।”
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু বলেন, গত ৫ মে মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশের পুলিশি অভিযান নিয়ে অধিকারের বক্তব্য মিথ্যা। পুলিশ সে সময় কাউকে হত্যা করেনি; বরং হেফাজতের হামলা ও সংঘর্ষে পুলিশসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন।
“আসামি ভিন্ন ঘটনার মৃতদেহের ছবি সংগ্রহ করে বানোয়াট ক্যাপশন দিয়ে মতিঝিলের ঘটনায় ৬১ জন মারা গেছে বলে গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করেন।”
আসামি রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন অভিযোগ করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন।
শুনানি শেষে বিচারক পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আদিলকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি হেনরিক ভাস উইক এবং সুইডেন দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি লুডভিক বনটেল এই মানবাধিকার সংগঠকের রিমান্ড শুনানির সময় আদালতে ছিলেন।
আদিলকে আদালতে নেয়ার আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে অধিকারের সেক্রেটারির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তুলে ধরেন যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, মতিঝিল অভিযান নিয়ে বিকৃত তথ্য ও ছবি প্রচারের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি আইন লঙ্ঘন করায় আদিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
“এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার তথা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষূন্ন হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এটি তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার ১ ও ২ উপধারায় অপরাধ।”
অধিকারের ওই প্রতিবেদনের পর সরকারের পক্ষ থেকে অধিকারের কাছে বক্তব্যের সপক্ষে প্রমাণ চেয়ে গত মাসে চিঠি দেয়া হয়।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ওই চিঠিতে কথিত নিহত ৬১ জনের পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, নাম, ঠিকানা চেয়ে বলা হয়, “৫ মে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার কোথাও ১৬ জনের বেশি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া না গেলেও প্রতিবেদনে ৬১ জন নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
“ফলে ওই রাতে হেফাজতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ও হেফাজতের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণার অবতারণা হয়েছে।”
এরপর অধিকার মন্ত্রণালয়ে ওই চিঠির জবাব পাঠিয়ে মতিঝিল অভিযান নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।
আদিলের আগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে গ্রেপ্তার করা হয় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে, যিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন।
কাবা শরিফের গিলাফ পরিবর্তনের ছবিকে ‘যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি দাবিতে ইমামদের মানববন্ধনের ছবি’ হিসেবে প্রকাশকারী মাহমুদুরকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখিয়ে আসছে অধিকার।
আদালত অবমাননার এক মামলায় সাজা খেটে ২০১১ সালের ১৭ মার্চ মাহমুদুর রহমান মুক্তি পেলে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে কারাফটকে ফরহাদ মজহারের সঙ্গে আদিলুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
সেক্রেটারিকে রিমান্ডে পাওয়ার পর রাতে অধিকারের গুলশানের কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় গোয়েন্দা পুলিশ।
আদালতের অনুমতি নিয়েই এই তল্লাশি চালানো হয় বলে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
আদিলের বাড়িতেই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। সেখান থেকে আগের দিন আদিলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ অধিকার কার্যালয়ে আধা ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালায়। এরপর ওই কার্যালয় থেকে কম্পিউটারের সিপিইউ গোয়েন্দা পুলিশের মাইক্রোবাসে তুলতে দেখা যায়।
তল্লাশি অভিযানে কী পাওয়া গেছে- জানতে চাইলে সে বিষয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল।