অভিযান ছিল অপরিহার্য: প্রেসনোট

নৈরাজ্য প্রতিরোধ ও গণনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে অভিযান ‘অপরিহার্’ ছিল উল্লেখ করে সরকার এক ব্যাখ্যায় বলেছে, অসংখ্য মানুষ নিহত হওয়ার অভিযোগ ‘অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2013, 06:12 AM
Updated : 10 May 2013, 09:05 AM

শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেসনোটে বলা হয়, সমাবেশ থেকে পল্টন, বায়তুল মোকাররম ও আশপাশের এলাকায় যে তাণ্ডব চালানো হচ্ছিল তা থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য ওই অভিযানের কোনো বিকল্প ছিল না।

রাতে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের কোনো অনুমতি ছিল না জানিয়ে প্রেসনোটে বলা হয়, রোববার ঢাকা অবরোধ শেষে বেলা ২টা থেকে শাপলা চত্বরে হাটহাজারী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আহমদ শফির নেতৃত্বে দোয়া কর্মসূচি পালনের অনুমতি নিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম।

অনিবন্ধিত এই সংগঠনটি নির্ধারিত সময় পার হলেও মতিঝিল ছাড়েনি, বরং অব্যাহতভাবে তাদের তাণ্ডব চলতে থাকে।

“রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্রে যখন নজীরবিহীন লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চলছে, তখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলামকে নৈরাজ্য বন্ধ করে সন্ধ্যার আগেই তাদের প্রতিশ্রুতি মতো শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু হেফাজতের নেতারা তাতে কর্ণপাত করেননি, বরং তারা বেআইনিভাবে বেপরোয়াভাবে অবস্থান চালিয়ে যেতে থাকে।”

আর কোনো উপায় না দেখে রোববার ‘রাত প্রায়  ২টার দিকে’  ঢাকা মহানগর পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির যৌথ অভিযান শুরু হয়।

অভিযানে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত  হয় জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এতে জল কামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ব্যবহার করা হয়।

এছাড়া অভিযানের শুরুতেই একাধিকবার মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

অভিযানের বর্ননা দিয়ে সরকারের ব্যাখ্যায় বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আরামবাগ ও দৈনিক বাংলা মোড় থেকে শাপলা চত্বরমুখী সড়ক দিয়ে আস্তে আস্তে এগোতে থাকে এবং ইত্তেফাক মোড় অভিমুখি রাস্তা খোলা রেখে সেখান দিয়ে হেফাজত কর্মীদের নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। অভিযান শুরুর ১০ থেকে  ১৫ মিনিটের মধ্যে হেফাজত নেতাকর্মীরা শাপলা চত্বর ছেড়ে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ীর পথ দিয়ে সরে যায়।

অভিযানে বহু মানুষ হতাহতের যে অভিযোগ বিএনপি এনেছে, তা নাকচ করে প্রেসনোটে বলা হয়, অভিযানের সময় মঞ্চের পাশে কাফনের কাপড়ে মোড়ানো চারটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। 

পুলিশের সঙ্গে হেফাজতকর্মীদের সারা দিনের সংঘাতে তিন জন পথচারী, একজন পুলিশ সদস্যসহ মোট ১১ জন নিহত হয় বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়।

সেই রাতের অভিযানে আড়াই হাজার লোক নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। কথিত এই ‘হত্যাকাণ্ডের’ প্রতিবাদে সারা দেশে দুই দিন হরতালও পালন করেছে বিরোধীদলীয় জোট।

এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে সরকার বিচার বিভাগীয় কমিশন না করলে তদন্তের দাবি নিয়ে জাতিসংঘে যাওয়ার হুমকিও দেয়া হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে।

বিএনপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ বলেছে, অভিযানে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো প্রাণঘাতি ছিল না। অভিযানের সময় কেউ নিহতও হননি।

নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিরোধীদলের পক্ষ থেকে ‘গুজব’ ছড়ানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আর অভিযোগের সতত্য প্রমাণের জন্য কথিত নিহত ও নিখোঁজদের তালিকা প্রকাশ করতে বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।