হেফাজতবিরোধী মতিঝিল অভিযান নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগে ডানঘেঁষা মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান শুভ্রকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
Published : 11 Aug 2013, 02:54 PM
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক অমিত কুমার দে রোববার দুপুরে এই আদেশ দেন।
চারদলীয় জোট সরকার আমলের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদিলকে তথ্যপ্রযুক্তি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে শনিবার রাতে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর রোববার দুপুরে তাকে হাকিম আদালতে হাজির করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।
অন্যদিকে আদিলের পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের নেতা এ জে মোহাম্মদ আলী।
শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের তুলতে গত ৫ মে রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে অভিযান চালায়, তাতে ৬১ জন নিহত হয় বলে অধিকারের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মতিঝিলে গণহত্যা চালানো হয়েছিল বলে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা দাবি করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই অভিযানে কেউ মারা যাননি।
আদিলের আইনজীবী শুনানিতে দাবি করেন, হেফাজতে ইসলামের সদস্যদের ‘হত্যার’ বিষয়ে অধিকারের দেয়া তথ্য সঠিক।
তিনি বলেন, আসামি একজন আইনজীবী এবং ঢাকা বারের সদস্য। যেহেতু তাকে সন্দেহের ভিত্তিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আটক করা হয়েছে, সেহেতু হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে রিমান্ড চাওয়ার সুযোগ নেই।
“তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা হলে রিমান্ডের প্রশ্ন আসবে।”
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু বলেন, গত ৫ মে মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশের পুলিশি অভিযান নিয়ে অধিকারের বক্তব্য মিথ্যা। পুলিশ সে সময় কাউকে হত্যা করেনি; বরং হেফাজতের হামলা ও সংঘর্ষে পুলিশসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন।
“আসামি ভিন্ন ঘটনার মৃতদেহের ছবি সংগ্রহ করে বানোয়াট ক্যাপশন দিয়ে মতিঝিলের ঘটনায় ৬১ জন মারা গেছে বলে গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করেন।”
আসামি রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন অভিযোগ করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন।
নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি হেনরিক ভাস উইক এবং সুইডেন দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি লুভিক বনটেল শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদিলকে আদালতে নেয়ার আগে মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে অধিকারের সেক্রেটারির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মুনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, মতিঝিল অভিযান নিয়ে বিকৃত তথ্য ও ছবি প্রচারের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি আইন লঙ্ঘন করায় আদিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
“এনজিও হিসাবে নিবন্ধিত অধিকার নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি একটি উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যাতে দেখা গেছে, ওইদিন (৫ মে) দিনের বেলায় যারা হেফাজতের হামলায় মারা গেছে, তাদের ছবি জড়ো করে ফটোশপের মাধ্যমে তারা রাতের ঘটনা বলে বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করেছে। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ওই প্রতিবেদন তাদের ওয়েবসাইটেও দেয়া আছে।
“এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার তথা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষূন্ন হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এটি তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার ১ ও ২ উপধারায় অপরাধ।”
অধিকারের ওই প্রতিবেদনের পর সরকারের পক্ষ থেকে অধিকারের কাছে বক্তব্যের সপক্ষে প্রমাণ চেয়ে গত মাসে চিঠি দেয়া হয়।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ওই চিঠিতে কথিত নিহত ৬১ জনের পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, নাম, ঠিকানা চেয়ে বলা হয়, “৫ মে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার কোথাও ১৬ জনের বেশি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া না গেলেও প্রতিবেদনে ৬১ জন নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
“ফলে ওই রাতে হেফাজতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ও হেফাজতের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণার অবতারণা হয়েছে।”
এরপর অধিকার মন্ত্রণালয়ে ওই চিঠির জবাব পাঠিয়ে মতিঝিল অভিযান নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।
আদিলের আগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে গ্রেপ্তার করা হয় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে, যিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন।
কাবা শরিফের গিলাফ পরিবর্তনের ছবিকে ‘যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি দাবিতে ইমামদের মানববন্ধনের ছবি’ হিসেবে প্রকাশকারী মাহমুদুরকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখিয়ে আসছে অধিকার।
আদালত অবমাননার এক মামলায় সাজা খেটে ২০১১ সালের ১৭ মার্চ মাহমুদুর রহমান মুক্তি পেলে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে কারাফটকে ফরহাদ মজহারের সঙ্গে আদিলুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
অধিকারের সেক্রেটারিকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তার মুক্তি দাবি করে ইতোমধ্যে বিবৃতি দিয়েছে জামায়াত ও তাদের শরিক দল বিএনপি।