সরকার গ্রামীণ ব্যাংক ‘ভাঙতে চাইলেও’ মানুষ জেগে উঠলে তা করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন এ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূস।
Published : 20 Jun 2013, 11:51 AM
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই নোবেলজয়ী বলেন, “এখন সরকার বলছে ভেঙে দেবে। একটি কাগজে স্বাক্ষর করলেই গ্রামীণ ব্যাংক ভেঙে ফেলতে পারে। তার অগাধ ক্ষমতা।
“কিন্তু দেশের মানুষ জেগে উঠলে তা পারবে না। মানুষ প্রতিরোধ করলে সরকার চাইলেও তা ভাঙতে পারবে না।”
১৯৮৩ সালে একটি সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা হয়। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টাকে ‘শান্তি স্থাপন’ বিবেচনা করে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংককে।
এরপর ২০১০ এর ডিসেম্বরে নরওয়ের টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া বিদেশি অর্থ এক তহবিল থেকে অন্য তহবিলে স্থানান্তরের অভিযোগ ওঠে। এরপর দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় একটি কমিশন গঠন করে সরকার। সম্প্রতি কমিশন তাদের প্রতিবেদনে ব্যাংকের বর্তমান কাঠামো বদলে বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ করে বলে গণমাধমের খবর।
এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন না নিয়ে পদে থাকার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালের ২ মার্চ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে ইউনূসকে অব্যাহতি দেয়। এর বিরুদ্ধে ইউনূস উচ্চ আদালতে গেলেও তা খারিজ হয়ে যায়।
কমিশনের সুপারিশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইউনূস বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংককে যদি ধ্বংস করতে চায় তাইলে টুকরো টুকরো করা যাবে। এটি সরকারি করলেও ধ্বংস করা হবে।”
গ্রামীণ ব্যাংকের ৯৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক গ্রাহক এবং সরকার বাকি ৩ শতাংশের মালিক- এই দাবি করে তিনি বলেন, “সরকার এখন ৫১ শতাংশ শেয়ার নিতে চাইছে। এটা কোনো আইন হতে পারে না, এটা এক ধরনের ছিনতাই।”
বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রাম ইনঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনুস বলেন, ‘‘গ্রামীণ ব্যাংক আইন নিয়ে কারো কোন প্রশ্ন ছিল না। এ ব্যাংক নোবেল জয়ী একটি প্রতিষ্ঠান। যে আইন দ্বারা নোবেল জয় করা হয়েছে সে আইন আঁস্তাকুড়ে ফেলে দেয়া যাবে না।’’
তিনি আর বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জামায়াতের কোন প্রতিষ্ঠান নয়।”
নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ‘নোবেলজয়ী ইউনূস সুহৃদ, চট্টগ্রাম’ আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ‘দিক নির্দেশনামূলক’ বক্তব্য দেন তিনি।
মিলনায়তনে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন উপদেশ ও পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন ইউনূস।
তিনি বলেন, অনেকে না বুঝে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সমালোচনা করেন। গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার অন্য ব্যাংকের চেয়ে বেশি বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তাও তিনি অস্বীকার করেন।
বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতে ক্ষতি হওয়ার কোনো কারণ নেই।
“বাংলাদেশের অবস্থান মাঝামাঝিতে। অনেকে এ বন্দর ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু আমাদের বন্দর প্রয়োজনের তুলনায় অনেক ছোট।”
শিক্ষার্থীদের সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রস্তুত হওয়ারও আহবান জানান এই নোবেল বিজয়ী।
কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেনের সঞ্চালনায় প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, স্বাগত বক্তব্য দেন অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, “ড. ইউনূসকে হেনস্তা করে আমরা নিজেদের হেনস্তা করছি।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক নিজেকে মহাজোট সরকারের সমর্থক দাবি করে বলেন, ড. ইউনূসের ক্ষেত্রে তিনি মহাজোট সরকারের বিরোধী।
চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মহাজোট সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে ইউনূসের সঙ্গে আচরণকে চিহ্নিত করেছেন মইনুল।
“সরকার যদি এর সমাধান না করে, তাহলে আগামী নির্বাচনে মহাজোট সরকারের ভরাডুবি হবে,” বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল পাওয়ায় ইউনূসের জন্য এ সংবর্ধনার আয়োজন করেছে ‘নোবেলজয়ী ইউনূস সুহৃদ, চট্টগ্রাম’।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আলমগীর মো. সিরাজউদ্দিন, ডা. ফজলুল করিম, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ন মাহমুদ চৌধুরীও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।