জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদকে হত্যার পর বছর পেরিয়ে গেলেও দোষীদের বিচার না হওয়ায় হতাশা তার পরিবারে।
Published : 09 Jan 2013, 10:44 AM
গত বছর ৮ জানুয়ারি রাতে ছাত্রলীগের একদল কর্মীর হামলায় আহত হয়ে পরদিন ভোরে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান ৩৭তম ব্যাচের ছাত্র জুবায়ের, যিনি নিজেও ছাত্রলীগে যুক্ত ছিলেন।
জুবায়ের হত্যা: আত্মসমর্পণের পর ৪ আসামি কারাগারে
বুধবার জুবায়েরের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা হয় তার বড় ভাই আবদুল্লাহ আল মামুনের।
জুবায়েরের বাবা তোফায়েল আহমেদ ও মা হাসিনা আহমেদ থাকেন পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে।
জুবায়েরের মৃত্যুবার্ষিকীতে বাবা-মায়ের অবস্থা বর্ণনা করে মামুন বলেন, “মা বারবার ওর কথা বলছে। কারো সঙ্গে অন্য কোনো কথা নেই তার। আর বাবার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে।”
হত্যাকাণ্ডের পর এক বছর পার হলেও অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মামুন বলেন, “এক বছর শেষ হলো অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্তে কী পেল, আমরা জানলাম না। অন্যদিকে আসামিরাও একের পর এক বেরিয়ে আসছে।”
“আমরা যেহেতু আক্রান্ত, হতাশা ছাড়া আমাদের আর কী আছে? বিচার প্রক্রিয়া যথাযথ হচ্ছে বলে মনে হয় না,” হতাশ কণ্ঠে বলেন জুবায়েরের ভাই।
হাই কোর্ট এই হত্যামামলার আসামিদের শুধু পরীক্ষার অনুমতি দিলেও তারা নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
“প্রয়োজনে কোনো তথ্য চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে অসহযোগিতা করা হয়,” বলেন তিনি।
এই হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিও পুর্নব্যক্ত করেন নিহতের বড় ভাই।
হাই কোর্ট এক নির্দেশনায় আসামিদের শুধু পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা থাকলেও তারা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়ার পর আবার অনেকে ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে নিয়মিত যাতায়াতও করতে দেখা যায় কাউকে কাউকে।
জুবায়ের হত্যার বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দ্রুত বিচার চেয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর ব্যানারে বিক্ষোভ-মিছিল ও উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সম্পাদক সৌমিত চন্দ জয়দ্বীপ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খুনিদের বাঁচাতে যৌথ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।”
জুবায়ের হত্যার পর আন্দোলনকারী ‘শিক্ষক সমাজের’ মুখপাত্র রাইহান রাইন বলেন, “আমরা ৯ জানুয়ারিকে সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করেছি।”
জুবায়ের হত্যার ঘটনায় ১৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়। এরপর গত ৮ এপ্রিল ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে ১৩ ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় আশুলিয়া থানা পুলিশ।
আসামিরা হলেন- খন্দকার আশিকুল ইসলাম আশিক (প্রাণিবিদ্যা বিভাগ), মো. রাশেদুল ইসলাম রাজু (দর্শন বিভাগ), খান মো. রইছ (প্রাণিবিদ্যা বিভাগ), জাহিদ হাসান (প্রাণিবিদ্যা বিভাগ), ইসতিয়াক মেহবুব অরূপ (দর্শন বিভাগ), মাহবুব আকরাম (সরকার ও রাজনীতি বিভাগ), নাজমুস সাকিব তপু (প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ), মাজহারুল ইসলাম (ইতিহাস বিভাগ), কামরুজ্জামান সোহাগ (দর্শন বিভাগ), মো. নাজমুল হুসেইন প্লাবন (লোক প্রশাসন বিভাগ), শফিউল আলম সেতু (পরিসংখ্যান বিভাগ), অভিনন্দন কুন্ডু অভি (পরিসংখ্যান বিভাগ), মো. মাহমুদুল হাসান মাসুদ (ইতিহাস বিভাগ)।
আসামিদের সবাই গ্রেপ্তার হলেও গত নভেম্বরে কয়েক দফায় হাই কোর্টের অন্তবর্তীকালীন আদেশে পরীক্ষা দেয়ার জন্য আসামিরা সবাই বেরিয়ে আসে।
বর্তমানে কেউ কারাগারে নেই বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা জাহিদ মাহতাব।
হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের মধ্যে সাতজনকে আজীবন এবং ছয়জনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।