চট্টগ্রাম, নভেম্বর ২৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বহদ্দারহাটে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে প্রাণহানির ঘটনায় প্রকল্প পরিচালক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
কর্তব্যে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে সোমবার রাতে চান্দগাঁও থানায় এ মামলা করেন পুলিশ উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ।
মামলায় প্রকল্প পরিচালক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান, ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের যৌথ ঠিকাদার মীর আখতার হোসাইন লিমিটেড ও পারিশা ট্রেড সিস্টেম লিমিটেড এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএআরএম অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) মনজুর মোর্শেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে সিডিএ নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।”
ফ্লাইওভার প্রকল্পের পরিচালকসহ তিন প্রকৌশলীকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত করেছে সিডিএ।
শনিবার সন্ধ্যায় বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডার ভেড়ে পড়ে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়। কয়েক মাস আগেও একটি গার্ডার ভেঙে পড়ে একজন আহত হয়।
যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই এই ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণকারী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার পরও কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নেয়ায় জনগণের ক্ষোভের প্রকাশও ঘটেছে।
‘দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’
ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে প্রাণহানির ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান।
সোমবার সন্ধ্যায় বহদ্দারহাটের শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়কের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সুষ্ঠু তদন্ত করে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী দায়ীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে, যাতে জনগণের জানমালের আর যেন ক্ষতি না হয়।”
পূর্ত মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
পরিদর্শনের সময় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান ও সিডিএর বোর্ড সদস্য মফিজুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে মান্নান খান বলেন, “আমি বিস্মিত হয়েছি, মুমূর্ষু মানুষকে উদ্ধার না করে বিচার দাবি করা, এ কেমন মানবিকতা!”
‘খবরের আড়ালে খবর থাকে’ মন্তব্য করে মান্নান খান বলেন, “এই ঘটনাগুলো স্বাভাবিক কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
“আস্থা রাখুন, বিশ্বাস রাখুন। দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে সরকার বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না।”
মহিউদ্দিনের ক্ষোভ
ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের সঙ্গে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের ভাই যুক্ত উল্লেখ করে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের এই কাজের যোগ্যতা নেই।
সোমবার বিকালে বহদ্দারহাটে ভেঙে পড়া ফ্লাইওভারের উদ্ধার কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
মহিউদ্দিন বলেন, “যোগ্যতা নেই এমন লোককে কাজ দেয়া হয়েছে। যেখানে গার্ডার পড়ে মানুষ মারা গেছে, সেখানে তিনি (আব্দুচ ছালাম) অপকর্ম ধামাচাপা দিতে উচ্চবাচ্য করছেন।”
আব্দুচ ছালাম নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এবং তার সঙ্গে মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে।
ফ্লাইওভার নির্মাণে কোনো অনিয়ম হয়েছে বলে মনে করেন কি না- জানতে চাইলে সাবেক মেয়র বলেন, “আপনারাও দেখছেন আমিও দেখছি, তবে এসবের শাস্তি হতে হবে।”
মহিউদ্দিন চৌধুরী শনিবার ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে পড়ার দিন রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে সিডিএ চেয়ারম্যানকে অভিযুক্ত করে তাকে গ্রেপ্তারে দাবি করেছিলেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমসি/ইউএস/এইচএএইচ/এমআই/০০১৩ ঘ.