ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে শেষ সময়ে দারুণ গোলে দলকে রক্ষা করার পর ম্যাচের সেরা হয়ে সমালোচকদের একটি অংশকে কড়া জবাব দিলেন ইংল্যান্ডের তরুণ এই তারকা।
Published : 01 Jul 2024, 11:51 AM
অভিমান, হতাশা, ক্ষোভ, অনেক কিছুই বুঝি জমা ছিল জুড বেলিংহ্যামের মনে। মোক্ষম সুযোগ পেয়ে সব উগড়ে দিলেন তিনি। বিদায়ের দুয়ারে দাঁড়িয়ে অসাধারণ এক গোল করে দলকে রক্ষা করার তৃপ্তি তো তার আছেই, সঙ্গে আছে আরও একটি প্রাপ্তি। সমালোচকদের একটি অংশকে উপযুক্ত জবাব দিতে পারা!
স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের নাটকীয় জয়ের পর ম্যাচ-সেরা হয়ে মনের আগল খুলে দিলেন বেলিংহ্যাম। দেশের হয়ে খেলার গর্বের পাশাপাশি যন্ত্রণার দিকটিও ফুটে উঠল সেখানে।
ইউরোর শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নেওয়ার খুব কাছাকাছি ছিল ইংল্যান্ড। ম্যাচের ২৫ মিনিটে এগিয়ে যায় স্লোভাকিয়া। ৯০ মিনিট শেষেও সেই ব্যবধান ছিল। কিন্তু যোগ করা সময়ের শেষ দিকে যখন শেষ বাঁশি বাজার অপেক্ষা, দুর্দান্ত এক বাইসাইকেল কিকে গোল করে ইংল্যান্ডকে সমতায় ফেরান বেলিংহ্যাম। পরে অতিরিক্ত সময়ে হ্যারি কেইনের গোল ইংলিশদের পৌঁছে দেয় কোয়ার্টার-ফাইনালে।
ইংল্যান্ডের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রবল সমালোচনা চলছে টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই। একপর্যায়ে কেইন সংবাদ সম্মেলনে অনুরোধ করেন, অন্তত টুর্নামেন্ট চলার সময় যেন দলের পাশে থাকেন সবাই, পারফরম্যান্সের বিচার করা হয় যেন টুর্নামেন্ট শেষে। কিন্তু সমালোচনার স্রোতে ভাটা পড়েনি খুব একটা।
ইংল্যান্ডের পারফরম্যান্সেও পড়ছিল না প্রত্যাশার প্রতিফলন। স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে হেরে গেলে নিশ্চিতভাবেই শূলে চড়ানো হতো ফুটবলারদের।
ম্যাচ শেষে বেলিংহ্যাম তুলে ধরলেন সেই চাপের কথাই। পাহাড়সমান চাপ ও এক ধরনের শঙ্কা নিয়েই তাদেরকে খেলতে হয়।
“আন্তর্জাতিক ফুটবলে, নকআউট ম্যাচে এই অনুভুতি খুবই বাজে… বিদায় নেওয়ার বাকি আছে আর ৩০ সেকেন্ড, কিন্তু ফালতু সব কথা শুনতে হচ্ছে, মনে হয় যেন গোটা জাতিকে হতাশ করছি আমরা। কিন্তু এই ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই বলে একটি শট এবং সবকিছুই বদলে যায়… এই অনুভূতি কখনোই চাই না, এই পরিস্থিতিতেও পড়তে চাই না। কিন্তু যখন এটা হয়ে যায়, দারুণ লাগে।”
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রেও অনেক সাবধান থাকতে হয় বলেই দাবি বেলিংহ্যামের, কারণ তাদের কথা থেকেও অনেক কিছু ছড়িয়ে পড়ে। পারফরম্যান্স দিয়ে জবাব দিতে পারাতে তাই তৃপ্তির উপকরণ পাচ্ছেন ২১ বছর বয়সী তারকা।
“ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা দারুণ উপভোগ্য, তবে এটা প্রচণ্ড চাপেরও। লোকে প্রচুর ফালতু কথা বলে। এটা ভালো যে, পারফর্ম করতে পারলে কিছুটা জবাব দেওয়া যায়।”
“এই সংবাদ সম্মেলনগুলোতে আসা, সাক্ষাতকারগুলো দেওয়া, ফুটবলার হিসেবে খোলামেলাভাবে কথা বলা খুবই কঠিন, কারণ সবসময়ই আমাদেরকে নিয়ে নানা কিছু ধরে নেওয়া হয়। এজন্যই ফুটবল খেলা, মাঠে নামা, গোল করা ও উদযাপন করা, এসব হলো চাপমুক্তির পথ, হয়তো কিছু মানুষকে বার্তা দেওয়াও।”
ফুটবল মাঠে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা যে কোনো ফুটবলারের জন্যই দারুণ গর্বের। তবে বেলিংহ্যামের মতে, ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে চাপানো মানে সবসময় তোপের মুখে থাকার মতো।
“ফুটবলারদের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গর্বের মুহূর্তগুলোর একটি হওয়া উচিত ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা। কিন্তু কখনও কখনও এটা প্রচণ্ড চাপের। অনেক বছর আগে বা সাম্প্রতিক টুর্নামেন্টগুলোয় কী হয়েছে, এসব না ভেবেই লোকে আমাদের কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে।”
“লোকে অনেক অনেক কথা বলে এবং কখনও কখনও তা হৃদয়ে আঘাত করে। আমরা এত পরিশ্রম করি, তার পরও কখনও কখনও ভালো পারফরম্যান্স না-ই হতে পারে। মাঝেমধ্যে মনে হয়, অন্যায্যভাবে এটা বাড়তেই থাকে এবং যার যা খুশি, যখন-তখন বলতে থাকে। আজকের ম্যাচের মতো এই ধরনের মুহূর্তে কিছু লোককে জবাব দিতে পারা তাই দারুণ।”