গ্রামীণ টেলিকম: ইউনিয়নের গ্রেপ্তার দুই নেতা রিমান্ডে

গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী ইউনিয়নের গ্রেপ্তার দুই শীর্ষ নেতাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে গোয়েন্দা পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2022, 03:07 PM
Updated : 6 July 2022, 03:07 PM

মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম থেকে পাওনা আদায়ে করা ১১০টি মামলা আপস করে প্রত্যাহারের বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বুধবার দুপুরে এক অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের ডিআইজি (গোয়েন্দা) হারুন অর রশিদ গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান (৩৭) এবং সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসানকে (৪২) গ্রেপ্তারের খবর দেন।

সেই সঙ্গে তিনি এই খবরও দেন যে করা ১১০টি মামলা প্রত্যাহার করার ঘটনাটিকে বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে মিরপুর থানায় সোমবার মামলা করেন ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান।

“আমরা এই মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছি,” বলেন হারুন।

বুধবার কামরুজ্জামান ও ফিরোজকে ঢাকার আদালতে পাঠিয়ে হেফাজেতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে পুলিশ।

সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে আদালত দুজনকে সাত দিন করে রিমান্ডেরেআদেশ দিয়েছেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা হারুন।

গ্রামীণ টেলিকম থেকে পাওনা আদায়ে কর্মচারীদের মামলা প্রত্যাহারের ঘটনাটি সম্প্রতি আলোচিত একটি বিষয়। এর সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে ইউনিয়নকর্মীদের আইনজীবী ইউসুফ আলীর ‘সমঝোতা করিয়ে দিয়ে ১২ কোটি টাকা ফি নেওয়া’।

গ্রামীণ টেলিকমের প্রায় দুইশ শ্রমিক-কর্মচারী তাদের কোম্পানির লভ্যাংশ হিসেবে পাওনা ৪৩৭ কোটি টাকা আদায়ে আদালতে ১১০টি মামলা করেন। সেই মামলায় কর্মীদের পক্ষে লড়ছেন ইউসুফ আলী।

সম্প্রতি একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের আইনজীবী ইউসুফ আলীকে ১২ কোটি টাকা দেওয়ার বিনিময়ে গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো আদালতের বাইরে ‘সমঝোতায়’ মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে।

এর মধ্যে বাদী-বিবাদী পক্ষ থেকেও হাই কোর্টকে জানানো হয়, পাওনা পরিশোধের আশ্বাসে দুই পক্ষের সমঝোতা হয়েছে, ফলে ১১০টি মামলা চালাতে চান না তারা।

এদিকে সংবাদ প্রতিবেদন নজরে এলে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা ৪৩৭ কোটি টাকা পরিশোধের বিষয়ে উভয় পক্ষকে যৌথভাবে প্রতিবেদন দাখিল করতে গত বৃহস্পতিবার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

অন্যদিকে ইউসুফ আলী দাবি করেন, ‘স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়’ মক্কেলদের থেকে ফি হিসেবে অর্থ পেয়েছেন তিনি; যদিও অর্থের অঙ্ক তিনি প্রকাশ করেননি।

এর মধ্যেই ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওই দুজন প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে সহকর্মীদের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “শ্রমিকদের পক্ষ করা এই মামলা তড়িঘড়ি করে অনেকটা গোপনে প্রত্যাহার, শ্রমিকদের অর্থ প্রদান এবং প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা লক্ষ্য করা যায়।”

আরও বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকম এবং গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে যে চুক্তি হয় সে অনুযায়ী চলতি বছরের ১০ মে ঢাকা ব্যাংক গুলশান শাখায় একটি সেটেলমেন্ট একাউন্ট খোলা হয়। ২০১০ সাল হতে ২০২২ পর্যন্ত প্রতি বছর কোম্পানির মোট লভ্যাংশের শতকরা ৫ ভাগ টাকা হারে কোম্পানি হতে এই একাউন্টে প্রায় ৪৩৭ কোটি টাকা জমা হয়।

“পরে এই টাকা ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি মাইনুল হাসানের যোগসাজশে অন্য দুটি ব্যাংকে স্থানান্তর করে ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং ইউনিয়নের নিয়োজিত আইনজীবী অযৌক্তিক ও অতিরঞ্জিতভাবে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ফি-পারিতোষিক হাতিয়ে নেয়।”

ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, “গ্রেপ্তারকৃতরা বলেছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো হবে এবং ক্ষমতার পট পরিবর্তনে প্রধানমন্ত্রী হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. ইউনূস, তখন শ্রমিকদের এই সকল মামলা কোনো কাজে আসবে না বলে ছড়ানো বার্তা দেখে ক্ষতিপূরণ না পাওয়া, চাকরি হারানো, গ্রেপ্তার হওয়াসহ বিভিন্ন নির্যাতনের মুখে পড়তে পারেন ভয়ে আইনজীবীর পরামর্শে তারা অতি দ্রুততার সাথে অর্থ তুলে নেন।”

“তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ, সার্বিক তদন্ত এবং দলিলাদি পর্যালোচনা করে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা সম্ভব হবে,” বলেন তিনি।