প্রথম দিন ‘উপেক্ষিতই’ রইল ভাইরাস ঠেকানোর বিধি-নিষেধ

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে সরকারের দেওয়া ১১ দফা নির্দেশনা কার্যকরের প্রথম দিনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ‘উপেক্ষিত’ দেখা গেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2022, 03:35 PM
Updated : 13 Jan 2022, 03:48 PM

বৃহস্পতিবার থেকে এসব বিধি-নিষেধ মেনে চলার কথা থাকলেও ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেকের মুখেই মাস্ক ওঠেনি।  

নির্দেশনা অনুযায়ী অফিস-আদালতে এবং ঘরের বাইরে সবার মাস্ক পরার কথা। নিয়ম না মানলে শাস্তির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল সরকারের তরফ থেকে। তার বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে অনেককে।

ট্রেন ও বাসে অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনার বাস্তবায়ন শনিবার পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল আগেই। বিধিনিষেধের প্রথম দিন রেস্তোরাঁ, বাজার কিংবা জনসমামগমস্থলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা গেছে কমই।

মিরপুর ১২ নম্বরের মুসলিম বাজারে মাস্ক ছাড়াই ক্রেতা-বিক্রেতারা বেচাকেনা করছিলেন। এ বাজারের তরকারি বিক্রেতা মোখলেস দোকান সাজিয়ে বসলেও মুখে মাস্ক ছিল না।

কারণ জানতে চাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মাস্ক পইরা লাভ নাই, করোনা হইলে এমনিতেই হইব। এত কিছু মানা যায় নাকি!”

হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁয় বসে খেতে হলে টিকা সনদ দেখানোর নির্দেশনা থাকলেও মিরপুরের কয়েকটি হোটেলে কারও কাছে টিকা সনদ পাওয়া যায়নি, এমনকি মাস্ক ছাড়াই খাবার কিনতে দেখা গেছে।

কেউ কেউ দাবি করছেন, তারা সরকারের দেওয়া ১১ দফা বিধি-নিষেধের বিষয়ে জানেন না।

মিনার হোটেলে খাবার কিনতে আসা সুলেমান হোসেন বললেন, “করোনাভাইরাস বেড়ে গেছে, বিধি-নিষেধ যে সরকার দিছে, এগুলা তো প্রচার করা দরকার। কই মাইকিং তো নাই। না মানলে দেখারও কেউ নাই।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে মাস্ক না পরায় বৃহস্পতিবার ঢাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব দাশ। ছবি: কাজী সালাহউদ্দিন রাজু

“সব মানুষ তো খবরাখবর রাখে না। তাদের জানানোর দায়িত্ব তো সরকারের। সরকারের তো এসব নিয়া মাথাব্যথা নাই।”

এই হোটেলের মালিক আনোয়ার হোসেন বললেন, “আমরা কাস্টমারদের বলতেছি টিকা কার্ড নিয়ে আসতে। কিন্তু তারা কথা শুনে না। এলাকার সব মানুষই পরিচিত। আমরা তো তাদের সাথে জোর করতে পারি না।”

খানিকটা ভিন্ন চিত্র ছিল মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ এলাকার আল-আমিন রেস্তোরাঁয়। বেলা ১১টার দিকে সেখানে দেখা যায়, ছয়জনের আসনে তিনজন করে বসানো হয়েছে। মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতেও দেওয়া হচ্ছে না।

রেস্তোরাঁর ম্যানেজার আজম আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছি না। তবে টিকা কার্ড সবার নেই। অনেকে টিকা নেয়নি। সেজন্য আমরা কিছু করতে পারছি না।”

বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করা ওমিক্রনের প্রভাবে বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবার বাড়ছে। বাসার বাইরে সবাই মাস্ক পরার নির্দেশ থাকলেও জনসমাগমে মাস্ক ছাড়া অনেকেই দেখা যায়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা পার্সেল নেওয়ার জন্য ক্রেতাদের বলছি। কিন্তু দোকানে যারা বসে খান, তারা সবাই এই এলাকার নয়।

“অনেক সিএনজি ড্রাইভার, উবার ড্রাইভার, মোটরসাইকেল ড্রাইভাররাও খায়। অভিজাত রেস্তোরাঁ হলে আমরা হয়তো অনেক কিছু করতে পারতাম। কিন্তু সাধারণ খাবারের দোকানে সব কিছু মানা যায় না।”

সরকার জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিলেও বৃহস্পতিবার দুপুরে পূর্বাচলের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় গিয়ে মানুষের ভিড় দেখা গেছে।

অন্যান্য দিন বিকেলের দিকে মেলায় সমাগম বাড়লেও বৃহস্পতিবার দুপুরের আগে থেকেই অনেকে মেলায় এসেছেন। দুপুর দেড়টার দিকে মেলার সামনের সড়কে দেখা যায় মানুষের ভিড়।

মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেন না স্বেচ্ছাসেবকরা। লাইন ধরে দর্শনার্থীরা ঢুকছেন মেলা প্রাঙ্গণে। তবে ফটকের বাইরে এবং মেলা প্রাঙ্গণে ঢোকার পর মুখ থেকে মাস্ক খুলে ফেলছেন দর্শনার্থীদের অনেকে।

পুলিশের এএসআই লোকমান হোসেন বললেন, “মেলায় গতকালের চেয়ে ভিড় বেশি হয়েছে। কাল দুপুরে এত লোক আসে নাই। ভিড় আরও বাড়বে।”

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় দেশে বাড়ছে সংক্রমণ, সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে সরকারি নির্দেশ জারি করা হলেও ঢাকার গণপরিবহনে অনেকেই মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মেলায় এসেছেন গৃহিনী হোসনে আরা খানম। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বললেন, ভিড় এড়াতে সকাল সকাল মেলায় এসেছেন।

“সরকার বিধি-নিষেধ দিয়েছে জানি। কিন্তু কিছু জিনিস কেনার প্রয়োজন ছিল, এজন্য মেলায় এসেছি। আমি আর মেয়ে কিন্তু মাস্ক খুলি নাই একবারও। তবে অনেকের মুখেই দেখি মাস্ক নাই।”

কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাণিজ্য মেলা এবং গাউসিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বিআরটিসির একটি আর্টিকুলেটেড বাসে উঠে দেখা যায়, যাত্রীদের বেশিরভাগই মাস্ক পরেছেন। তবে কেউ কেউ মাস্ক খুলে বাদাম, চানাচুর খাচ্ছেন।

বাসের চালক এবং হেলপারদের টিকা সনদ থাকা বাধ্যতামূলক হলেও এ বাসের হেলপার জয়নাল আবেদীন জানান, তিনি এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের টিকাই নেননি।

“আমি টিকার জন্য কাল আবেদন করছি। মুগদা হাসপাতাল থেকে টিকা নেব।”

রাজধানীর কাকলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ পরিবহন শ্রমিকের মুখেই মাস্ক নেই। যাদের মাস্ক আছে তারাও থুতনিতে নামিয়ে রেখেছেন।

গুলিস্তান থেকে শ্রীপুরের বরমী রুটের প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের একটি বাসে যাত্রীদের অনেকের মুখেই কোনো মাস্ক ছিল না। চালক মাস্ক পরে থাকলেও মাস্ক নেই চালকের সহকারী আবদুল বাতেনের মুখে।

জানতে চাইলে আবদুল বাতেন বললেন, “মাস্ক পইরাই থাকি সবসময়। কিন্তু বিড়ি-সিগারেট খাওনের লাইগা মাস্ক খুলতে হয়।”

আরও পড়ুন