বৃহস্পতিবার থেকে এসব বিধি-নিষেধ মেনে চলার কথা থাকলেও ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেকের মুখেই মাস্ক ওঠেনি।
নির্দেশনা অনুযায়ী অফিস-আদালতে এবং ঘরের বাইরে সবার মাস্ক পরার কথা। নিয়ম না মানলে শাস্তির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল সরকারের তরফ থেকে। তার বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে অনেককে।
মিরপুর ১২ নম্বরের মুসলিম বাজারে মাস্ক ছাড়াই ক্রেতা-বিক্রেতারা বেচাকেনা করছিলেন। এ বাজারের তরকারি বিক্রেতা মোখলেস দোকান সাজিয়ে বসলেও মুখে মাস্ক ছিল না।
কারণ জানতে চাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মাস্ক পইরা লাভ নাই, করোনা হইলে এমনিতেই হইব। এত কিছু মানা যায় নাকি!”
হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁয় বসে খেতে হলে টিকা সনদ দেখানোর নির্দেশনা থাকলেও মিরপুরের কয়েকটি হোটেলে কারও কাছে টিকা সনদ পাওয়া যায়নি, এমনকি মাস্ক ছাড়াই খাবার কিনতে দেখা গেছে।
কেউ কেউ দাবি করছেন, তারা সরকারের দেওয়া ১১ দফা বিধি-নিষেধের বিষয়ে জানেন না।
মিনার হোটেলে খাবার কিনতে আসা সুলেমান হোসেন বললেন, “করোনাভাইরাস বেড়ে গেছে, বিধি-নিষেধ যে সরকার দিছে, এগুলা তো প্রচার করা দরকার। কই মাইকিং তো নাই। না মানলে দেখারও কেউ নাই।
এই হোটেলের মালিক আনোয়ার হোসেন বললেন, “আমরা কাস্টমারদের বলতেছি টিকা কার্ড নিয়ে আসতে। কিন্তু তারা কথা শুনে না। এলাকার সব মানুষই পরিচিত। আমরা তো তাদের সাথে জোর করতে পারি না।”
খানিকটা ভিন্ন চিত্র ছিল মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ এলাকার আল-আমিন রেস্তোরাঁয়। বেলা ১১টার দিকে সেখানে দেখা যায়, ছয়জনের আসনে তিনজন করে বসানো হয়েছে। মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতেও দেওয়া হচ্ছে না।
রেস্তোরাঁর ম্যানেজার আজম আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছি না। তবে টিকা কার্ড সবার নেই। অনেকে টিকা নেয়নি। সেজন্য আমরা কিছু করতে পারছি না।”
“অনেক সিএনজি ড্রাইভার, উবার ড্রাইভার, মোটরসাইকেল ড্রাইভাররাও খায়। অভিজাত রেস্তোরাঁ হলে আমরা হয়তো অনেক কিছু করতে পারতাম। কিন্তু সাধারণ খাবারের দোকানে সব কিছু মানা যায় না।”
সরকার জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিলেও বৃহস্পতিবার দুপুরে পূর্বাচলের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় গিয়ে মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
অন্যান্য দিন বিকেলের দিকে মেলায় সমাগম বাড়লেও বৃহস্পতিবার দুপুরের আগে থেকেই অনেকে মেলায় এসেছেন। দুপুর দেড়টার দিকে মেলার সামনের সড়কে দেখা যায় মানুষের ভিড়।
মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেন না স্বেচ্ছাসেবকরা। লাইন ধরে দর্শনার্থীরা ঢুকছেন মেলা প্রাঙ্গণে। তবে ফটকের বাইরে এবং মেলা প্রাঙ্গণে ঢোকার পর মুখ থেকে মাস্ক খুলে ফেলছেন দর্শনার্থীদের অনেকে।
পুলিশের এএসআই লোকমান হোসেন বললেন, “মেলায় গতকালের চেয়ে ভিড় বেশি হয়েছে। কাল দুপুরে এত লোক আসে নাই। ভিড় আরও বাড়বে।”
“সরকার বিধি-নিষেধ দিয়েছে জানি। কিন্তু কিছু জিনিস কেনার প্রয়োজন ছিল, এজন্য মেলায় এসেছি। আমি আর মেয়ে কিন্তু মাস্ক খুলি নাই একবারও। তবে অনেকের মুখেই দেখি মাস্ক নাই।”
কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাণিজ্য মেলা এবং গাউসিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বিআরটিসির একটি আর্টিকুলেটেড বাসে উঠে দেখা যায়, যাত্রীদের বেশিরভাগই মাস্ক পরেছেন। তবে কেউ কেউ মাস্ক খুলে বাদাম, চানাচুর খাচ্ছেন।
বাসের চালক এবং হেলপারদের টিকা সনদ থাকা বাধ্যতামূলক হলেও এ বাসের হেলপার জয়নাল আবেদীন জানান, তিনি এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের টিকাই নেননি।
“আমি টিকার জন্য কাল আবেদন করছি। মুগদা হাসপাতাল থেকে টিকা নেব।”
গুলিস্তান থেকে শ্রীপুরের বরমী রুটের প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের একটি বাসে যাত্রীদের অনেকের মুখেই কোনো মাস্ক ছিল না। চালক মাস্ক পরে থাকলেও মাস্ক নেই চালকের সহকারী আবদুল বাতেনের মুখে।
জানতে চাইলে আবদুল বাতেন বললেন, “মাস্ক পইরাই থাকি সবসময়। কিন্তু বিড়ি-সিগারেট খাওনের লাইগা মাস্ক খুলতে হয়।”
আরও পড়ুন