শিগগিরই হাসপাতালে ভিড় বাড়ার শঙ্কায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী

দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ‘আগামী ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে’ দেশের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপও বাড়বে বলে ধারণা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2022, 11:38 AM
Updated : 12 Jan 2022, 12:25 PM

বুধবার ঢাকায় বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস মিলনায়তনে বিভিন্ন হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স ও কম্পিউটার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের একটি অংশ চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যাবে। এখনই সতর্ক না হলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে, সেক্ষেত্রে হাসপাতালে জায়গা দিতে সমস্যা হবে।

“আমরা ধরে নিই, পাঁচ শতাংশের হাসপাতালে আসতে হয়। এরই মধ্যে হাসপাতালে রোগী আসা শুরু হয়ে গেছে। আমরা দেখব আগামী পাঁচ-সাতদিনের মধ্যেই অনেক রোগী হয়ে যাবে হাসপাতালে।

“তখন আবার একটা কষ্টকর অবস্থা তৈরি হবে। হাসপাতালে প্রেসার পড়বে, চিকিৎসক-নার্সদের ওপর প্রেসার পড়বে। সিট পেতে সমস্যা হবে, মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে।”

করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনের দাপটে গতবছরের মাঝামাঝি সময়ে রোগীর চাপে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়।

ওই সময় দৈনিক শনাক্ত রোগী ১৬ হাজারও ছাড়িয়ে যায়, এক দিনে আড়াইশর বেশি মানুষের মৃত্যুও বাংলাদেশকে দেখতে হয়। 

গত নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাবে পুরো বিশ্বের মত বাংলাদেশেও আবার শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২ হাজার ৯১৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি।

ওমিক্রনের দ্রুত বিস্তারে বিপর্যস্ত দশায় পড়েছে ইউরোপের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রনে গুরুতর অসুস্থতা বা হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি কম হলেও সংক্রমণ অনেক বেশি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, ব্রিটেন, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের হাসপাতালগুলো রোগী সামলাতে গিয়ে সঙ্কটে পড়ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হওয়ায় অনেক দেশে সঙ্কট আরও প্রকট হয়েছে। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, “করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ২০ হাজার শয্যা তৈরি রেখেছিল। আরও ২০ হাজার শয্যা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

“যদি ৪০ হাজার রোগী হয়, তাহলে রাখা যাবে। কিন্তু যদি এক লাখ হয়, তাহলে কোথায় থাকবে? এখন মৃত্যুর হার কম আছে, কারণ হলো টিকা নেওয়া আছে। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা যদি তিনগুণ-চারগুণ হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু বেকায়দায় পড়তে হবে।”

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের দেওয়া ১১ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরুর কথাও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন।

“তার মানে আগামীকাল থেকে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় প্রোগ্রাম সীমিত এবং বন্ধ করা। এছাড়া এই ধরনের কার্যক্রম নিরুৎসাহিত করা। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে সবখানে। যদি কেউ মাস্ক না পরে, তাহলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাকে জরিমানা করা হবে, জেলও হতে পারে। যে কোনো পরিবহনে মাস্ক না পরে কেউ উঠবেন না।”

বাণিজ্য মেলা বন্ধ হবে কি না- এ প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আগামীকাল থেকে কোনো প্রোগ্রাম হবে না, এটাই সরকারের নির্দেশনা। আমাদের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ জনগণের সেবা দিতে পারে, চিকিৎসা দিতে পারে, সমস্যাগুলো তুলে ধরতে পারে। রাস্তাঘাটে যে প্রোগ্রাম হয় সেটা তো স্বাস্থ্যবিভাগ আটকাতে পারবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরামর্শ দিতে পারবে। সেটার বাস্তবায়নের জন্য অন্যান্য মন্ত্রণালয় রয়েছে।”

করোনাভাইরাসের বিস্তার বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আরও কঠোর হওয়ার কথা মঙ্গলবার জানায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা কর্তৃপক্ষ।

মেলার পরিচালক ইপিবির সচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সে অনুযায়ী মেলাতেও নতুন নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

“প্রাথমিকভাবে আজ (মঙ্গলবার) থেকে আমরা মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেব না। ভেতরেও মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে বিশেষ নজর রাখবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।”